AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Delhi: ৩০ বছর ধরে ২০০ কুকুরের দেখাশোনা করেন, বাঙালি বৃদ্ধার ছাদ কেড়ে নিল দিল্লি পুরনিগম

Delhi Woman caring for 200 dogs for 30 years: নয়া দিল্লির সাকেতের একটি ছোট মন্দিরের কাছে ছিল তাদের অস্থায়ী আশ্রয়স্থল। সেই আশ্রয়স্থল ভেঙে দেওয়ায় হাইকোর্টে মামলা করেছেন অশীতিপর প্রতিমা দেবী।

Delhi: ৩০ বছর ধরে ২০০ কুকুরের দেখাশোনা করেন, বাঙালি বৃদ্ধার ছাদ কেড়ে নিল দিল্লি পুরনিগম
২০০ কুকুরের বাহিনী আগলে বসে আম্মা
| Edited By: | Updated on: Jan 05, 2023 | 8:17 PM
Share

নয়া দিল্লি: শীতের সন্ধ্যায়, নয়া দিল্লির সাকেতের একটি ছোট মন্দিরের কাছে আগুন জ্বালিয়ে বসে থাকেন অশীতিপর প্রতিমা দেবী। আর তাঁকে ঘিরে বসে থাকে ২০০ কুকুরের এক বিরাট বাহিনী। এলাকায় সকলেই চেনেন প্রতিমা দেবীকে, তবে সেখানে তিনি পরিচিত আম্মা নামে। প্রায় ৩০ বছর ধরে স্থানীয় পথকুকুরদের দেখভাল করেন তিনি। কিন্তু বর্তমানে মহাসমস্যায় পড়েছেন আম্মা এবং তাঁর কুকুররা। চলতি সপ্তাহের শুরুতে তাঁদের মাথার উপর থেকে ছাদ কেড়ে নিয়েছে দিল্লি পুরনিগম। তাঁদের অস্থায়ী আশ্রয় ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে কুকুর বাহিনী এবং তাঁদের আম্মার আপাতত কনকনে ঠান্ডার মোকাবিলা করা ছাড়া উপায় নেই। তবে, লড়াই ছাড়েননি আম্মা। পুরনিগমের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন দিল্লি হাইকোর্টে। বুধবার, হাইকোর্ট তাঁর আবেদনে সাড়া দিয়ে তাঁদের অস্থায়ী আশ্রয়স্থল ভাঙার কাজে স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে। তাই আপাতত ভাঙা বাড়িতেই ত্রিপল খাটিয়ে রয়েছেন প্রতিমা দেবী।

প্রতিমা দেবী আদতে পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামের বাসিন্দা। ছেলে দিল্লিতে কাজ পাওয়ায়, ১৯৮৪ সালে তিনি দিল্লি পাড়ি দিয়েছিলেন। তারপর থেকেই শুরু হয়েছিল পথকুকুরদের সহায়তা করা। সেই থেকে সাকেতের ওই স্থানেই থেকে গিয়েছেন প্রতিমা দেবী। বাড়িটি ভেঙে দেওয়ার পরও, ধ্বংসস্তূপেরর মধ্যে কয়েকটি হাঁড়ি ও অন্যান্য বাসনপত্র একটি বড় মাদুর এবং একটি খাটিয়া নিয়ে রয়ে গিয়েছেন আম্মা। তাঁর বড় ছেলে স্বপন জানিয়েছেন, সঙ্গম বিহারে তাঁর একটি বাড়ি আছে। কিন্তু তাঁর মা কুকুরগুলিকে ছেড়ে যাবেন না। ছোট ছেলে তপন জানিয়েছেন, ওই অস্থায়ী আশ্রয়টি এর আগেও ২০১৩ এবং ২০১৮ সালে দুইবার ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপরও তাঁর মা ওই জায়গা ছাড়েননি।

স্বপন জানিয়েছেন, ১৯৮৪ সালে ওই এলাকায় তাঁদের একটি চায়ের দোকান ছিল। তাঁর মা ভাঙা ধাতব পদার্থ বিক্রি করতেন। তাঁদের বাড়িতে একটি পোষা কুকুর ছিল। পাশাপাশি রাস্তার ২০ থেকে ২৫টি কুকুরকে তাঁরা খাওয়াতেন। ধীরে ধীরে সেই সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছিল। ফলে একটি সিগারেটের দোকান দিয়েছিলেন। সেখান থেকেই কুকুরদের দেখভালের খরচ তুলতেন। পরে অবশ্য সেই দোকানটি ভেঙে দেওয়া হয়। সরকারের কাছ থেকে এই বিষয়ে তাঁরা কোনও সহায়তা পাননি বলে জানিয়েছেন স্বপন। তবে, কিছু পশুপ্রেমী এবং পশুপ্রেমী সংগঠন তাঁদের সাহায্য করেন। বাকি খরচ তাঁরা নিজেরাই চালান। তিনি জানিয়েছেন, ওই কুকুরদের খাবার বাবদই মায়ে দেড় লক্ষ টাকা খরচ হয়। দুধ, রুটি, মুরগি, ভাত, বিস্কুট এবং ব্র্যান্ডেড ডগফুড খাওয়ান তাঁরা। এরইমধ্যে পুরনিগম থেকে বাড়িটি ভেঙে দেওয়ায় অত্যন্ত সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা।

তবে, বুধবার হাইকোর্টের নির্দেশ কিছুট হলেও স্বস্তি পেয়েছেন প্রতিমা দেবী, তাঁর দুই ছেলে এবং কুকুর বাহিনী। আদালত সাফ জানিয়েছে, মামলার বিভিন্ন তথ্য ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে পুরনিগমের কাজে স্থগিতাদেশ জাড়ি করাই সমীচীন বলে মনে করেছে আদালত। আদালতে প্রতিমা দেবী অভিযোগ করেছিলেন, তাঁদের কোনও নোটিশ না দিয়েই বাড়িটি ভেঙে দিয়েছে পুরনিগম। পুরনিগমের কাজ বন্ধ রাখার পাশাপাশি প্রতিমা দেবীকে ত্রিপল খাটানোর অনুমতিও দিয়েছে আদালত। ১৫ মার্চ এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। তবে প্রতিমা দেবী ও তাঁর কুকুর বাহিনীকে ওই এলাকা থেকে সরানো সম্ভবত কারোর পক্ষেই সম্ভব নয়।