নয়া দিল্লি: আদালতে বিচার প্রক্রিয়ায় বিচারপতিদের কথোপকথন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করা উচিত নয়, সুপ্রিম কোর্টে এমনই আবেদন জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কমিশনের সেই আর্জি খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট জানাল, ‘বিচারপ্রক্রিয়ার আপডেট প্রকাশ করার স্বাধীনতা রয়েছে সংবাদমাধ্যমের।’ বিচারপতিদের কথোপকথনও প্রকাশ করা যেতে পারে বলে জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। ‘কমিশনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা করা যেতে পারে’, বলে মন্তব্য করেছিল মাদ্রাজ হাইকোর্ট। আর সেই মন্তব্যের বিরোধিতা করেই শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয় কমিশন। বিচারপতি চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি এমআর শাহের বেঞ্চে চলছিল এই মামলা। বৃহস্পতিবার ছিল তারই শুনানি।
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা:
এই মামলায় সংবদামাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বলেছেন বিচারপতি। সাংবিধানিক স্বাধীনতার ভিত্তিতেই আদালতে প্রবেশাধিকার উন্মুক্ত বলে উল্লেখ করে বিচারপতিরা বলেন, ‘সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৯ এ-তে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার উল্লেখ আছে। একই সঙ্গে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ভিত্তিতেই আদালতের কার্যক্রম প্রকাশ করার স্বাধীনতাও রয়েছে সংবাদমাধ্যমের।’ বিচারপতিরা আরও বলেন, শুনানির সময় করা মন্তব্যগুলি রায়ের অংশ না হলেও সমাধানের অংশ। যদি এই অভিব্যক্তিকে নিরুৎসাহিত করা হয় তাহলে বিচার প্রক্রিয়া থেমে যাবে।
কোর্ট রুমের রিপোর্টিংয়ে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটিয়েছে ইন্টারনেট:
বিচারপতি ডি চন্দ্রচুড় বলেন, ‘ ইন্টারনেট কোর্ট রুম রিপোর্টিংয়ে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটিয়েছে, এখন লোকেরা তথ্যের জন্য ইন্টারনেটে মনোযোগ দেয়। সুতরাং কোনও নতুন ধরনের মাধ্যমকে এই প্রক্রিয়ার রিপোর্ট বন্ধ করতে বলার ফল ভাল হবে না। আদালতের বিচার প্রক্রিয়ার লাইভ স্ট্রিমিংয়ের কথাও মনে করিয়ে দেন তিনি। বিচারপতি জানান, আন্তর্জাতিক আদালত বিচার প্রক্রিয়ার সরাসরি সম্প্রচারের অনুমতি দিয়েছে, গুজরাট হাইকোর্টও অনুমতি দিয়েছে।
আগেই অবশ্য কমিশনের আবেদনের বিরোধিতা করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। তবে রায় সংরক্ষিত রাখা হয়েছিল। সামঞ্জস্য রেখে রায় দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের তরফে। এ দিনও বিচারপতিরা উল্লেখ করেন, ‘আদালতে যে কোনও আলোচনাই জনমানসে প্রভাব ফেলে করা হয়, তাই সেই আলোচনা মানুষের জানা উচিত।’
বিচারের ক্ষেত্রে সংযম জরুরি:
মাদ্রাজ হাইকোর্টের করা মন্তব্য প্রসঙ্গে বিচারপতি বলেন, বিচারের ক্ষেত্রে সংযম রাখা জরুরি। বিশেষত যে ক্ষেত্রে কথার ভুল ব্যাখ্যা হতে পারে, সেই ধরনের মন্তব্যের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ থাকা জরুরি বলে উল্লেখ করল শীর্ষ আদালত।
কী বলেছিল মাদ্রাজ হাইকোর্ট?
গত ২৬ এপ্রিল তামিলনাড়ুর কোভিড সংক্রমণ নিয়ে একটি মামলার শুনানি ছিল মাদ্রাজ হাইকোর্টে। শুনানি চলাকালীন এই মন্তব্য করতে শোনা যায় হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে। যদিও তামিলনাড়ুতে এক দফায় বিধানসভা ভোট শেষ করা হয়। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পরও কেন কমিনশ প্রচার বা জমায়েতে রাশ টানল না, সেই প্রশ্ন তুলে কমিশনকে ভর্ৎসনা করেছিলেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছিলেন, “ভারতে করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর জন্য এককভাবে দায়ী নির্বাচন কমিশন। আধিকারিকদের বিরুদ্ধে খুনের মামলাও করা যায়।”