
কলকাতা: বন্ধ জল, পাকিস্তানকে এবার ভুগতে হবে ফল। সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়ার পরিণাম যে কী, তা এবার তারা টের পাবে হাড়ে-মজ্জায়। মঙ্গলবারের ঘটনার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সীমান্তে সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার অভিযোগ তুলে ‘কূটনৈতিক যুদ্ধ’ শুরু করেছে ভারত।
বুধবার ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলা দশক পুরনো সিন্ধু জলবন্টন চুক্তিতে স্থগিতের ঘোষণা করেছে মোদী সরকার। আর তারপরেই পাকিস্তানে থরহরিকম্প। জলবন্টন চুক্তি বন্ধ হতেই পেটে ভাত জোটাতে নাজেহাল অবস্থা হতে চলেছে পাকিস্তানের।
কী এই সিন্ধু জলবন্টন চুক্তি?
তখন সবে স্বাধীন হয়েছে দেশ। মাঝ বরাবর চিরে তৈরি হয়েছে ভারত-পাকিস্তান। সব এলাকায় বসেছে কাঁটাতার। কিন্তু নদী? সে কাঁটাতার দেখে না। সেই সময়কালে কার দিকে কতটা সিন্ধুর জল যাবে, কেই বা কতটা ধরে রাখবে। সেই সব তথ্য ও জল দুটোই সরবরাহ করার জন্য বিশ্ব ব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় ভারতের সঙ্গে চুক্তি সাক্ষর করে পাকিস্তান। সেই চুক্তি সাক্ষর বৈঠকে ওই সময় যোগ দিয়েছিলেন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরু ও পাকিস্তানের ফিল্ড মার্শাল আয়ুব খান।
যার আওতায় মূলত চিন হয়ে আসা সিন্ধু নদের জল নিজেদের মধ্য়ে ভাগাভাগি করে নেয় ভারত-পাকিস্তান। এবার তাতেই পড়েছে বাঁধ। যার জেরে ‘হাঁটু কাঁপছে’পাক প্রশাসনের। নানা যুক্তি তুলে ভারতের সিন্ধু চুক্তি স্থগিত করার ঘটনার বিরুদ্ধে আসরে নেমেছে তারা। ভয় দেখাচ্ছে চিনকে দিয়েও।
কিন্তু একটা চুক্তিতে কতটা প্রভাব পড়বে সেখানে? ওয়াকিবহাল মহল বলছে, এই চুক্তি স্থগিতে ফলে পাকিস্তানে বাড়বে জলকষ্ট। বর্তমানে বিশ্বের জলকষ্টে ভোগা দেশগুলির মধ্য়ে পাকিস্তান রয়েছে ১৪ নম্বরে। গ্রীষ্মকালে এই কষ্ট ওঠে চরমে। আর সেই সময়েই চুক্তি স্থগিত করল ভারত। তবে জলকষ্টের চেয়েও বেশি পাকিস্তান চাপে পড়তে চলেছে কৃষিকাজের দিক থেকেও।
সামনেই ভুট্টা ও ধান রোপনের সময়। সিন্ধ ও পঞ্জাব প্রদেশে ৮০ শতাংশ কৃষিকাজ টিকে থাকে এই সিন্ধু জলবন্টন চুক্তির উপর। জল এলে চাষ হবে, না এলে শিকেয় উঠল কাজবাজ। এবার সকৌশলে সন্ত্রাসের ফল ভোগাতে সেই ব্রহ্মাস্ত্রকেই ব্যবহার করছে ভারত। নয়াদিল্লির ঘোষণায় যদি বিতস্তার কিষাণগঙ্গা ড্য়ামের গেট বন্ধ হলে চাল ও গম উৎপাদন মার খাবে। যার জেরে ক্ষতি হয়ে যাবে পাকিস্তানের ৬ হাজার কোটি টাকার ফসল।
অন্যদিকে, আবার রয়েছে চন্দ্রভাগার ড্যাম। সেটা বন্ধ করে দিলে চাপে পড়বে পাকিস্তানের তুলো চাষ। যার জেরে ক্ষতি হবে ৭ হাজার কোটি টাকা। উল্লেখ্য, বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, জলের প্রবাহ কমালে যেমন চাপ পড়বে কৃষিকাজের উপর। তেমনই আবার চাপ বাড়বে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে। অন্ধকারে ঢাকবে ইসলামাবাদ। এই জলবিদ্যুতের উপরেই আবার পক্ষান্তরে নির্ভর করে রয়েছে পাকিস্তানের শিল্পাঞ্চলগুলি। একদিকে কৃষিকাজে বাধা, অন্যদিকে অন্ধকারে ঢাকা কারখানা। ফলত, একটা চুক্তিতেই যে পাকিস্তানের টুঁটি চেপে ধরবে ভারত, সেই বিষয়টা আপাতত স্পষ্ট।