
পটনা: ‘বিহার ম্যয় যাব তাক রহেগা আলু, তাব তক রহেগা লালু’। যাঁরা রাজনীতি নিয়ে সামান্য হলেও চর্চা করেন, তাঁদের কাছে এই বাক্য খুবই পরিচিত। এক সময়ে বিহারের অতীত-বর্তমান-ভবিষ্য়ৎই ছিল এই লালু ও তাঁর দল আরজেডি। কেউ কেউ সেই সময়কালকে ‘জঙ্গলরাজ’ বলেও কটাক্ষ করেন। ‘জঙ্গলরাজ’ এখন হয়তো নেই। বিহারের শাসকের গদিতে লালু কিংবা তাঁর দলও নেই। তবে অস্তিত্ব নিয়ে কখনও প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়নি তাঁদের। যা পড়তে হল, চলতি বছরের বিহার নির্বাচনে। ভোট গণনা এখনও চলছে, তবে হিসাব পরিষ্কার। বিহার থাকছে নীতীশ-মোদী জোটেরই। ২৪৩টি আসনের মধ্য়ে এখনও পর্যন্ত ২০১টি আসনে এগিয়ে এনডিএ জোট। অন্যদিকে মহাগঠবন্ধন লড়ছে অস্তিত্বের লড়াই। হাতগুনে মোট ৩৬টি আসনে এগিয়ে তাঁরা। বিকাল ৫টা নাগাদ এই সংখ্যা আরও স্পষ্ট ও চূড়ান্ত হয়ে যাবে।
কিন্তু আরজেডির এই পরিণতির কারণ কী? মহাগঠবন্ধনই বা কেন এমন হোঁচট খেল? যেখানে ২০২০ সালে বিহার বিধানসভা নির্বাচনে এনডিএ জোটের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চালিয়েছিল মহাগঠবন্ধন। ২৪৩টি আসনের মধ্য়ে ১১০টি আসন ছিনিয়ে নিয়েছিল তাঁরা। একা লালুর দল আরজেডি পেয়েছিল ৭৫টি আসন। কংগ্রেস পেয়েছিল ১৯টি আসন। কিন্তু এবার সেই আরজেডি দুপুর আড়াইটে পর্যন্ত এগিয়ে ২৯টি আসনে। কংগ্রেস এগিয়ে ৫টি আসনে।
বলা চলে আরজেডি ও মহাগঠবন্ধনের পতনের এটাই নাকি অন্যতম কারণ, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। আসন ভাগাভাগি নিয়ে প্রথম থেকেই বিরোধী জোটের অন্দরে হাওয়া গরম ছিল। কেউ কেউ বলেন, এই হাওয়ার গরমের কারণ তেজস্বীই। জোটের সমন্বয় বজায় রাখেননি তিনি।
চলতি বছর মোট ৫৭টি আসনে যাদব প্রার্থী দেওয়ার কথা বলেছিলেন তেজস্বী। যেমন কথা, তেমন কাজ। পঞ্চাশের অধিক ছিল যাদব সম্প্রদায়ের প্রার্থী। গতবারের তুলনায় এক ধাক্কায় ৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি। যা আখেড়ে ভাল চোখে দেখেননি ভোটাররা। উচ্চ বর্ণের জাতের লড়াই বেশিই বিভোর হয়ে গিয়েছিলেন তেজস্বী। সরিয়ে দিয়েছিলেন পিছিয়ে পড়া শ্রেণির প্রার্থীদের।
ঘরে ঘরে সরকারি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তেজস্বী। বিজেপি প্রথম থেকেই এই প্রতিশ্রুতি আলটপকা মন্তব্য় বলে কটাক্ষ করেছিল। সাধারণের কাছে এই প্রতিশ্রুতি জমি তৈরি করতে পারেনি বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিহারের মোট ভোটারের ১৭ শতাংশ মুসলিম ভোটার। খুব একটা বড় নয়। কিন্তু এই ভোটব্যাঙ্ক ছোটও নয়। চলতি নির্বাচনে তাতেই বেশি নজর দিয়েছিলেন তেজস্বী ও তাঁর দল। ভোটের আগেই আরজেডি নেতার সাফ কথা ছিল, মহাগঠবন্ধন ক্ষমতায় এলে লাগু হবে না ওয়াকফ আইন। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সব বলেই বিপাকে পড়েছেন তিনি। সরেছে ভোট।
কংগ্রেসের হাতেই দুর্বল হয়েছে বিরোধী জোটের ভবিষ্যৎ। এখনও পর্যন্ত মাত্র ৫টি আসনে এগিয়ে তাঁরা। এই সংখ্য়া কোনও ক্রমে গতবারের মতো ধরে রাখতে পারত রাহুলের দল। তা হলে কিছুটা হলেও বিহারের আকাশের নীচে অক্সিজেন পেত মহাগঠবন্ধন।