
নয়াদিল্লি: ‘তিনি সাজাপ্রাপ্ত আসামী, তাঁকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব নয়!’ সোমবার উন্নাও ধর্ষণকাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি চলাকালীন এমনই মন্তব্য করল প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত নেতৃত্বাধীন মোট তিন বিচারপতির অবকাশকালীন বেঞ্চ। উন্নাও-কাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত আসামী তথা বিজেপির বহিষ্কৃত বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গারের জামিন নির্দেশে স্থগিতদেশ দিল দেশের শীর্ষ আদালত। এই রায়ের ফলে আপাতত জেলমুক্তি হচ্ছে না ওই প্রাক্তন বিধায়কের। স্বস্তি পেলেন উন্নাও-কাণ্ডের নির্যাতিতা ও তাঁর পরিবার।
উন্নাও ধর্ষণকাণ্ডে ২০১৯ সালে নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা শোনানো হয় বিজেপি প্রাক্তন বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গারকে। গত মঙ্গলবার সেই সাজাই মকুব করে দিয়েছিল দিল্লি হাইকোর্ট। যা দেশের আইনশৃঙ্খলার ও বিচারব্যবস্থার দিকে প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে বলেই পর্যবেক্ষণ শীর্ষ আদালতের। এদিন প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত নেতৃত্বাধীন অবকাশকালীন বেঞ্চ বলে, ‘দেশের আইনব্য়বস্থার দিকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।’
কুলদীপের সাজা মকুবের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ উঠেছিল দিল্লি হাইকোর্টে। বরাবর স্বাস্থ্যকে হাতিয়ার করা কুলদীপ তার নামের পাশ থেকে ‘জনপ্রতিনিধি’ সরানোর আর্জি জানায়। সাজা মকুবের মামলায় যা কাজ করেছিল ‘ব্রহ্মাস্ত্রের’ মতো। উন্নাওয়ের এই ধর্ষণকাণ্ডের ভিত্তিতে কুলদীপের বিরুদ্ধে পকসো মামলা দায়ের পেয়েছিল। তাতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল কুলদীপ। জনপ্রতিনিধিদের ক্ষেত্রে এই পকসো আইন আরও কড়া। যার মার পড়েছিল বহিষ্কৃত বিধায়কের উপরও। তাই সেই তকমা সরাতেই উদ্য়ত হয় কুলদীপ। তাতে অনুমোদন দেয় দিল্লি হাইকোর্ট। মকুব হয় সাজা।
পকসো আইনের ধারা ৫ অনুযায়ী, যদি অভিযুক্ত ‘জনপ্রতিনিধি’ হন, তা হলে সে দোষী সাব্যস্ত হলে ন্যূনতম সাজা হবে ২০ বছর। যে সময় এই ধর্ষণকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল কুলদীপ তখন বহাল তবিয়তে বিধায়ক পদে বসেছিলেন। তাই সেই সূত্র ধরেই ‘জনপ্রতিনিধি’ ধারার ভিত্তিতেই সাজা দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু কয়েক বছরের মাথায় দিল্লি হাইকোর্ট তুলে দেয় সেই ‘জনপ্রতিনিধি’ তকমা। তৎকালীন সময়ে বিধায়ক, কিন্তু ‘জনপ্রতিনিধি’ তকমা নেই কুলদীপের। ফলত মকুব হয় সাজা।
সোমবার কুলদীপের জনপ্রতিনিধিত্ব নিয়ে তৈরি হওয়া প্রশ্ন উঠেছিল শীর্ষ আদালতেও। সিবিআইয়ের হয়ে সওয়ালকারী দেশের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, ‘কুলদীপ কোনও জনপ্রতিনিধি ছিলেন না, এই যুক্তিতেই তাঁকে পকসোর আইনের ধারা ৫-এর বাইরে রাখে হাইকোর্ট।’ কিন্তু পকসো আইনে সংজ্ঞা যে এই কথা বলে না, সেটাও উল্লেখ করেন সলিসিটর জেনারেল।
তাঁর যুক্তি, ‘পকসো আইনে কোনও অভিযুক্ত জনপ্রতিনিধির জন্য থাকা বিধান অনুযায়ী, সেই জনপ্রতিনিধি নির্যাতিত শিশুর তুলনায় সমাজে উচ্চস্তরে রয়েছে কিনা সেটা দেখে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আইনে উল্লেখিত জনপ্রতিনিধির অর্থের সঙ্গে চিরাচরিত অর্থের সাদৃশ্য থাকবে এমনটা নয়। সেঙ্গার একজন ক্ষমতাশালী বিধায়ক ছিলেন, এলাকাতেও তাঁর বিরাট দাপট ছিল, এখনও হয়তো রয়েছ।’ সলিসিটর জেনারেলের যুক্তি শোনার পর প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, ‘যদি দিল্লি হাইকোর্টের এই ব্যাখ্যা গৃহীত হয়, তা হলে একজন পুলিশ কনস্টেবল জনপ্রতিনিধি হয়ে যাবেন, কিন্তু বিধায়ক কিংবা সাংসদ নন।’ অভিযুক্তের পক্ষ না শুনে কখনও কোনও ট্রায়াল কোর্ট বা হাইকোর্টের দেওয়া জামিন নির্দেশে দেশের শীর্ষ আদালত স্থগিতাদেশ চাপায় না। তাই সোমের নির্দেশের ক্ষেত্রেও কুলদীপের অবস্থান জানতে চেয়েছে শীর্ষ আদালত।