নয়া দিল্লি: গ্রেফতারির দুই মাস কেটে গিয়েছে। তিহাড়েই (Tihar Jail) বন্দি রয়েছেন বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal)। গরু পাচার মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে অবশেষে দেখা করতে যাচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) দুই প্রতিনিধি। জানা গিয়েছে, আজ, শুক্রবার অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন তৃণমূলের দুই সাংসদ দোলা সেন (Dola Sen) ও অসিত মাল (Asit Mal)। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে একাধিকবার অনুব্রত প্রসঙ্গ উঠে আসলেও, গরু পাচার মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতারির পর কেষ্ট মণ্ডলের সঙ্গে এই প্রথম তৃণমূলের কোনও প্রথম সারির নেতা-নেত্রী দেখা করতে যাচ্ছেন। এদিকে, তৃণমূল নেতৃত্বের অনুব্রতর সঙ্গে এই সাক্ষাৎ ইডি(Enforcement Directorate)-র প্রভাবশালী তত্ত্বকে আরও জোরাল করে তুলবে বলেই মত রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের।
ইডির হাতে গ্রেফতার ও আসানসোলের জেল থেকে ঠিকানা বদলে দিল্লির তিহাড় জেলে ঠাঁই হওয়ার পর থেকেই শারীরিক অসুস্থতার কথা বারবার তুলে ধরেছেন অনুব্রত মণ্ডল। একাধিকবার আদালতে জামিনের আবেদনও করেছেন শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে। তবে আখেরে লাভ হয়নি কোনওবারই। গত মার্চ মাস থেকে জেলেই বন্দি হয়ে থাকতে হচ্ছে অনুব্রত মণ্ডলকে। এবার বীরভূমের জেলা সভাপতিকে দেখতেই তিহাড়ে যাচ্ছেন তৃণমূলের দুই সাংসদ।
সূত্রের খবর, আজ সকাল ১১টা নাগাদ অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে তিহাড় জেলে দেখা করতে পারেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ দোলা সেন ও লোকসভার সাংসদ অসিত মাল। দেখা করতে পারেন অনুব্রত কন্য়া সুকন্যা মণ্ডলের সঙ্গেও। তবে মূলত অনুব্রতর শারীরিক অসুস্থতার কথা শুনেই দিল্লিতে দুই প্রতিনিধিকে পাঠানো হয়েছে রাজ্যের শাসক দলের তরফে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতিই অনুব্রত মণ্ডল আদালতে হাজিরা দিতে এসে জানিয়েছিলেন, তিনি ভাল নেই। বুকে ব্যাথা, শ্বাসকষ্টের মতো সমস্য়ায় ভুগছেন তিনি। ভালভাবে হাঁটতেও পারছেন না। দিল্লির একাধিক সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে শারীরিক পরীক্ষাও করানো হয়।
এদিকে, বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতার সঙ্গে তৃণমূল সাংসদদের এই সাক্ষাৎ তদন্তকারী সংস্থা ইডির কাছে বড় হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে। কারণ অনুব্রতর গ্রেফতারির পর থেকেই ইডি একাধিকবার প্রভাবশালী তত্ত্ব তুলে ধরেছে এবং জামিনের আবেদন খারিজের আর্জি জানিয়েছে। সেক্ষেত্রে তৃণমূল সাংসদদের এই দেখা করতে যাওয়া ইডির প্রভাবশালী তত্ত্বকেই আরও জোরাল করবে বলে মত রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের।
অন্য়দিকে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আবহে অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে তৃণমূল সাংসদদের এই সাক্ষাতকেও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। একদিকে যেখানে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির পর তৃণমূল কংগ্রেস যাবতীয় দায় ঝেড়ে ফেলেছিল, সেখানেই উল্টো চিত্র দেখা গিয়েছিল বীরভূমের জেলা সভাপতির গ্রেফতারির পরে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের মুখে বারংবার ‘বীরভূমের বাঘে’র প্রশংসাই শোনা গিয়েছিল। দলের তরফে পাশে থাকার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছিল।
সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন, ঠিক তার আগেই অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে তৃণমূলের প্রতিনিধিদের এই সাক্ষাৎ একদিকে যেমন প্রমাণ দিচ্ছে যে পঞ্চায়েতে জয় নিশ্চিত করতে অনুব্রত মণ্ডল কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তেমনই আবার দিল্লিতে যাওয়ার পর কেষ্ট যে একাকীত্ববোধ করার কথা বলেছিলেন, তাও কিছুটা দূর হবে, এমনটাই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।