বিশ্লেষণ: করোনাকালে পরীক্ষার নজিরবিহীন মূল্যায়ন, কী ভাবে নম্বরের হিসেব হবে CBSE-র?

TV9 Explained: CBSE class 12 exam assessment: ৩০:৩০:৪০ - এই হিসেবে থাকছে নম্বরের ভাগ। শিক্ষক মহল বলছে এতেই হবে সঠিক মূল্যায়ন।

বিশ্লেষণ: করোনাকালে পরীক্ষার নজিরবিহীন মূল্যায়ন, কী ভাবে নম্বরের হিসেব হবে CBSE-র?
অভিনব পদ্ধতিতে হবে মূল্যায়ন
Follow Us:
| Updated on: Jun 17, 2021 | 9:20 PM

জীবনের অন্যতম বড় পরীক্ষা বাতিল। এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে নজিরবিহীন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। পড়ুয়া ও অভিভাবকদের কাছে দ্বাদশ শ্রেণির এই পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এই পরীক্ষার নম্বর বিচার করা হয়। করোনা পরিস্থিতিতে স্কুল না খুললেও বোর্ডের পরীক্ষার জন্য জোরকদমে প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন পড়ুয়ারা। কিন্তু দ্বিতীয় তরঙ্গে ধাক্কা খেল পরীক্ষা পদ্ধতি। ছাত্রছাত্রীদের সুরক্ষার কথা ভেবেই সিবিএসই দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। তবে পরীক্ষা না হলেও ফলাফল প্রকাশ করা জরুরি। তাই ফলাফল তৈরি করতে বিশেষ পন্থা নিয়েছে বোর্ড। সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা জমা দিয়ে সেই পদ্ধতি জানানো হয়েছে।

কী আছে হলফনামায়?

দশম শ্রেণির তিন বিষয় থেকে ৩০ শতাংশ যুক্ত হবে দ্বাদশের ফলাফলে। পাঁচটি বিষয়ের মধ্যে তিনটি বিষয়ের নম্বরের ওপর ভিত্তি করে ফলাফল তৈরি হবে। যে তিনটি বিষয়ে সর্বাধিক নম্বর পেয়েছে পড়ুয়ারা, সেই তিনটিকেই বেছে নেওয়া হবে। একাদশ শ্রেণি থেকে ৩০ শতাংশ ও দ্বাদশ শ্রেণি থেকে ৪০ শতাংশ নম্বর যুক্ত করে ফল প্রকাশ করা হবে। দশম ও একাদশ শ্রেণির ক্ষেত্রে যেহেতু পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে, তাই সেই পরীক্ষার নম্বরের ওপর ভিত্তি করে মূল্যায়ন হবে। আর দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা যেহেতু হয়নি, তাই সে ক্ষেত্রে অন্তবর্তী পরীক্ষার নম্বরের ওপর মূল্যায়ন হবে। সঙ্গে যুক্ত হবে প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষার নম্বর। তবে অনেক স্কুলে বেশি নম্বর দেওয়ার রীতি আছে। সে ক্ষেত্রে অন্যান্য স্কুলের পড়ুয়াদের তুলনায় তাঁরা বেশি নম্বর পেয়ে যেতে পারেন। তাই অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেনুগোপাল জানিয়েছেন, এ ক্ষেত্রে একটি রেজাল্ট কমিটি তৈরি হবে।

৩০:৩০:৪০, কী এই পদ্ধতি?

সবার আগে বলে দেওয়া দরকার, দশম শ্রেণির ক্ষেত্রে ‘বেস্ট অফ থ্রি’ বেছে নেওয়া হবে। অর্থাৎ, যে তিনটি বিষয়ে সর্বাধিক নম্বর পেয়েছে পড়ুয়া, সেই তিনটি বিষয়ের মোট নম্বরের ৩০ শতাংশ মূল রেজাল্টে যুক্ত হবে। ওই নম্বরটি প্রত্যেক বিষয়েই যুক্ত করা হবে। অর্থাৎ কেউ যদি তিনটি বিষয়ে ১০০ পেয়ে থাকে, তাহলে তার সেই নম্বরের ৩০ শতাংশ অর্থাৎ গড়ে ৩০ করে যুক্ত হবে সব বিষয়ে।

একাদশের ক্ষেত্রে প্রত্যেক বিষয়ে প্রাপ্ত নম্বরের ৩০ শতাংশ যুক্ত করা হবে মূল রেজাল্টে। অর্থাৎ যে অঙ্কে ১০০ পেয়েছে, দ্বাদশের অঙ্কের নম্বরে তার থেকে ৩০ যুক্ত হবে। বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী, ৮০ নম্বরে থিয়োরি পরীক্ষা হয়, বাকি ২০ নম্বর প্র্যাকটিক্যালের। আবার অনেক বিষয়ে ৭০ নম্বরের থিয়োরি হয়, ৩০ নম্বর প্র্যাকটিক্যালের। তাই ৮০  বা ৭০ নম্বরের ভিত্তিতে ৩০ শতাংশ বা ৪০ শতাংশের হিসেব হবে। এরপর আসবে দ্বাদশ শ্রেণি। এ ক্ষেত্রে ইন্টারনাল পরীক্ষায় পাওয়া নম্বরের ৪০ শতাংশ যুক্ত করা হবে মূল রেজাল্টে। প্রায় সব স্কুলে প্র্যাকটিক্যাল ও ইন্টারনাল পরীক্ষা নেওয়া হয়ে গিয়েছে। তাই নম্বর ভাগে কোনও অসুবিধা নেই। আর যে সব স্কুলে পরীক্ষা বাকি আছে, সেখানে অনলাইনে পরীক্ষাগুলি নিয়ে নিতে বলা হয়েছে।

দ্বাদশের ৪০ শতাংশ কোথা থেকে নেওয়া হবে?

দ্বাদশ শ্রেণিতে ইতিমধ্যেই মিড টার্ম ও প্রিবোর্ড পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। সেই পরীক্ষাগুলির মধ্যে কোনটির নম্বর নেওয়া হবে, তার ঠিক করবে বিশেষ রেজাল্ট কমিটি। সেই কমিটিতে থাকবে সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল, দু’জন অভিজ্ঞ শিক্ষক বা শিক্ষিকা ও প্রতিবেশী কোনও স্কুলের দুই শিক্ষক বা শিক্ষিকা। কোনও স্কুলের কমিটি ঠিক করতে পারে যে তারা প্রি-বোর্ড পরীক্ষা থেকেই ৪০ শতাংশ নম্বর নেবে আবার কোনও স্কুল সিদ্ধান্ত নিতে পারে প্রি-বোর্ড ও মিড টার্ম দুটি পরীক্ষাতেই গুরুত্ব দেওয়া হবে।

পাশ নম্বর না পেলে কী হবে?

একটি বিষয়ে পাশ নম্বর না পেলে ফল প্রকাশের পর ছাত্র বা ছাত্রীকে ফের ওই বিষয়ের পরীক্ষা দিয়ে পাশ করার সুযোগ দেওয়া হবে। আর যদিই একাধিক বিষয়ে পাশ নম্বর না থাকে, তাহলে আগামী বছর সেই ছাত্র বা ছাত্রীকে পরীক্ষা দিতে হবে।

প্রাপ্ত নম্বরে সন্তুষ্ট না হলে?

প্রাপ্ত নম্বরে সন্তুষ্ট না হতেই পারে কোনও পড়ুয়া। তার জন্য সুযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা থাকছে। করোনা পরিস্থিতি কেটে গেলে, সে সশরীরে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পরীক্ষায় বসতে পারবে। সে ক্ষেত্রে তার ওই পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরই ধরা হবে।

কী বলছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা?

শিক্ষকদের মতে, এটাই একেবারে সঠিক পন্থা। লা মার্টিনিয়ারের শিক্ষক সুপ্রিয় ধর বলেন, ‘এই পদ্ধতির সুবিধা হল যে তিনটি ক্লাসের পরীক্ষার ফলাফলই গণ্য করা হচ্ছে। আর অসুবিধা হল কেউ যদি মনে করে থাকেন যে বোর্ডের পরীক্ষায় আরও ভাল প্রস্তুতি নেবে, তাহলে তা কার্যকর হবে না।’ ভবিষ্যতে কী কোনও প্রভাব পড়বে? সুপ্রিয় বাবু বলেন, ‘যে কোনও ভাল জায়গায় ভর্তি হতে গেলে কম্পিটিটিভ পরীক্ষা দিতে হ্য়, তখন আর এই ফল কেউ মনে রাখে না। তাই সেই সব পরীক্ষার জন্যভাল ভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।

রামমোহন মিশনের প্রিন্সিপ্যাল সুজয় বিশ্বাস বলেন, ‘মধ্যমেধার পড়ুয়াদের জন্য এটাই সবথেকে ভাল পন্থা। তিনটে পরীক্ষারই নম্বর দেখা হচ্ছে, ফলে সঠিক মেধার বিচার হবে। তিনটেতে খারাপ করে চার নম্বর পরীক্ষায় কেউ দারুণ ফল করবে, এটা ভাবা ভুল। এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। আর সিবি্‌এসই-তে সারা বছর ধরে অ্যাসেসমেন্ট বা ধারাবাহিক মূল্যায়নের প্রক্রিয়া চালু আছে অনেক বছর ধরে। তাই কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

কী বলছে পড়ুয়ারা?

কুইন মেরি স্কুলের ছাত্রী আয়ুশী আগরওয়াল বলে, ‘এই পদ্ধতি খুব ভাল হয়েছে। এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত। তিনটি ক্লাসের ফল দেখা হবে। যেহেতু বোর্ডের পরীক্ষার জন্য দ্বাদশে প্রস্তুতিতে বেশি জোর দেওয়া হয়, তাই দ্বাদশে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, ৪০ শতাংশ নম্বর নেওয়া হচ্ছে।’

দিল্লির লক্ষণ পাবলিক স্কুলের ছাত্রী কীর্তি আদবানীর মত অবশ্য আলাদা। তার কথায়, ‘এই নিয়ম একেবারেই ঠিক নয়। অনেকেই একাদশে মন দিয়ে প্রস্তুতি নেয় না, দ্বাদশে বেশি গুরুত্ব দেয়। এ ছাড়া বিভিন্ন স্কুলে নম্বর দেওয়ার রীতি আলাদা। তাই সমস্যা হতে পারে। কিন্তু নিয়ম যেমনই করা হোক, একাংশের অসুবিধা হবেই। তাই এই পন্থা গ্রহণ করে নেওয়াই উচিৎ।’