
রাস্তা ঘাটে চলার সময় অনেক সময়ই অনেক কিছু দেখে থাকি। সেটা পথ নির্দেশ হতে পারে। আবার কোনও সরকারি বিজ্ঞাপন। এমনই অনেক বিজ্ঞাপনী হোর্ডিংও থাকে। তেমনই যানবাহনেও অনেক কিছু লেখা থাকে। কিছুক্ষেত্রে নানা মজার মন্তব্যও। যা আপনার মুখে হাসি ফোটায়। তবে সবই যে নির্মল আনন্দের জন্য লেখা তা নয়। নিয়ম মেনেও অনেক কিছুই লেখা হয়। বিশেষ করে বড় ট্রাক বা লরির পিছনে লেখাগুলোতে বার্তাও থাকে। বাকিদের জন্য যা সুবিধার। এর ফলে দুর্ঘটনাও এড়ানো যায়। তেমনই একটা লেখা হামেশাই দেখা যায়। ট্রাকের পিছনে থাকে, ‘USE DIPPER AT NIGHT’। এর কারণ হয়তো কিছু জানেন। আপনি জানেন কি?
প্রাথমিক ভাবে আপনার এটা পড়ে মনে হতেই পরে, এ তো সহজ! ডিপার অর্থাৎ লাইট কম বেশির কথা বলা হচ্ছে। মূলত রাতে, কম পাওয়ারের লাইট ব্যবহারের অনুরোধ করা হয়। যাতে অন্যান্য ড্রাইভারদের লুকিং গ্লাসে চোখ না ধাঁধিয়ে যায়। সেক্ষেত্রে দুর্ঘটনা হতেই পারে। তা এড়ানোর জন্যই আলো কমানোর কথা বলা হয়। তবে এটিই একমাত্র কারণ নয়। এর আরও কারণ রয়েছে। কখনও মনে হয়েছে, ‘USE DIPPER AT NIGHT’ এই বার্তাটি কেন প্রায় সব ট্রাকের পিছনেই লেখা থাকে? জেনে নিন তা হলে আসল উদ্দেশ্য।
‘USE DIPPER AT NIGHT’ এটি একটি সচেতনতামূলক বার্তা। ২০১৬ সালে এই প্রচার শুরু করেছিল টাটা মোটরস। ভারতের একটি কন্ডোমের ব্র্যান্ড ডিপার-এর প্রোমোশোনাল স্লোগানও। সুরক্ষিত সেক্স এবং ট্রাক ড্রাইভারদের মধ্যে যৌন রোগ (STD) প্রতিরোধ-এর প্রচারে ও সচেতনতা বাড়াতে ব্যবহার হয়ে থাকে। কেন এই স্লোগান এবং প্রচারের প্রয়োজন পড়েছিল?
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ভারতে ট্রাক বা লরি চালকদের মধ্যে এইডস এবং অন্যান্য যৌন রোগের ঝুঁকি অনেক বেশি। তার কারণ, দীর্ঘ দিন তারা পরিবার থেকে বাইরে থাকেন। ফলে চাহিদা মেটাতে অসুরক্ষিত যৌনতায় আকর্ষিত হতে দেখা যায়। অসুরক্ষিত যৌনতার কারণে এইডসের মতো রোগ হওয়া অপ্রত্যাশিত নয়। এই বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হিন্দুস্তান ল্যাটেক্স লিমিটেড (HLL) সংস্থার সঙ্গে জুটি বাঁধে টাটা মোটরস। এর ফলে ডিপার ব্র্যান্ডের কন্ডোম তৈরি হয়। এর প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রেও স্লোগানটি ব্যবহার করা হয়েছিল। যাতে DIPPER-এর দুটো অর্থেই কাজে আসে। ট্রাক ড্রাইভাররা সামনের ট্রাকের পেছনে যখন এই স্লোগান দেখবেন, তাঁরা যদি বিষয়টি মাথায় রাখতে পারেন, সে কারণেও লেখা হয়ে থাকে।
এই প্রচারের অংশ হিসেবে এবং সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ট্রাক ড্রাইভারদের মধ্যে হাজার হাজার কন্ডোম বিতরণ করা হয়েছিল। যৌনতার ক্ষেত্রে সুরক্ষা কতটা জরুরি, সেই সম্পর্কে তথ্যও দেওয়া হয়েছিল। রিপোর্ট বলছে, এই প্রচার শুরুর ৩০ দিনের মধ্যে এই ব্র্যান্ডের প্রায় ৪০ হাজার কন্ডোম বিক্রি হয়েছিল। উদ্দেশ্যটা যে সফল হয়েছিল, তা এই সংখ্যাই বলে দেয়। সুতরাং, পরবর্তীতে যখন ট্রাকের পিছনে এই লেখা দেখবেন, মনে রাখবেন এর মূল লক্ষ্যটাও।