
অমরাবতী: ১০ বছরে ২ বার পালাবদল। ৫ বছর আগে তেলুগু দেশম পার্টিকে (টিডিপি) সরিয়ে অন্ধ্র প্রদেশে ক্ষমতা দখল করে জগন্মোহন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেস। পাঁচ বছর পর ফের পালাবদল। জগন্মোহনের দলকে সরিয়ে ফের ক্ষমতায় চন্দ্রবাবু নাইডুর টিডিপি। এবার তাঁদের সঙ্গী বিজেপি এবং জন সেনা পার্টি। আর অন্ধ্র প্রদেশে এই পালাবদলের পর আরও একটি বিষয়ে টিডিপি ও জগন্মোহনের দলের চাপানউতোর শুরু হয়েছে। জগন্মোহনকে আসবাবপত্র চোর বলে তোপ দাগতে শুরু করেছে টিডিপি।
পাঁচ বছর আগে অন্ধ্র প্রদেশ বিধানসভায় ১৭৫টি আসনের মধ্যে ১৫১টি আসনে জিতেছিল জগন্মোহনের ওয়াইএসআর কংগ্রেস। টিডিপি-কে সরিয়ে সরকার গঠন করে তারা। মুখ্যমন্ত্রী হন জগন্মোহন। ২০১৯ সালে ওয়াইএসআর কংগ্রেস অন্ধ্র প্রদেশে সরকার গঠনের পর বিজয়ওয়াড়ার উন্ডাবল্লিতে একটি সরকারি বাড়ি (প্রজা বেদিকা) ভেঙে দেয়। চন্দ্রবাবু নাইডু মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন নিজের বাড়ির কাছে ওই সরকারি বাড়িটি বানিয়েছিলেন। এর জন্য খরচ পড়েছিল ৮ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। কিন্তু, প্রজা বেদিকা বেআইনিভাবে নির্মাণ করা হয়েছে সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ভেঙে ফেলা হয়। বাড়িটি না ভাঙার আর্জি জানিয়েছিলেন চন্দ্রবাবু। কিন্তু, জগন্মোহনের সরকার তাঁর আর্জিতে কর্ণপাত করেনি।
আবার ২০১৯ সালে ওয়াইএসআর কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর চন্দ্রবাবুর নাইডুর সময়কালে বিধানসভার স্পিকার কোদেলা শিব প্রসাদ রাওয়ের বিরুদ্ধে আসবাবপত্র চুরির অভিযোগ তোলে। জগন্মোহনের দল অভিযোগ তোলে, ২০১৪ সালে নতুন রাজ্য গঠনের পর স্পিকার কোদেলার ব্যবহারের জন্য সরকারি টাকায় কেনা ফার্নিচার চলে যেত তাঁর পুত্রর শোরুমে। অন্ধ্র প্রদেশের প্রাক্তন স্পিকারকে ফার্নিচার চোর বলে তোপ দেগেছিল ওয়াইএসআর কংগ্রেস। একাধিক অভিযোগ দায়ের হয় প্রাক্তন স্পিকারের বিরুদ্ধে। শিব প্রসাদ রাওয়ের ছেলে কোদেলা শিবরাম অভিযোগ করেন, তাঁর বাবা এই মিথ্যে অভিযোগের জেরে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন। তারই ফলে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি আত্মহত্যা করেন। টিডিপির মহিলা শাখার নেত্রী তেজস্বিনী অভিযোগ করেন, জগন্মোহন ও তাঁর সঙ্গীরা মানসিকভাবে শিব প্রসাদকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেন। জগন্মোহনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি।
পাঁচ বছর পর এবার জগন্মোহন রেড্ডিকে আসবাবপত্র চোর বলে আক্রমণ শুরু করেছে টিডিপি। তাদেপল্লিতে তাঁর বাসভবন তথা ক্যাম্প অফিসে কোটি কোটি টাকার আসবাবপত্র বসানো হয়েছে। সেইসব আসবাবপত্র কেনা হয়েছে করদাতাদের টাকায়। এই নিয়ে জগন্মোহনকে কটাক্ষ করে চন্দ্রবাবুর পুত্র তথা মন্ত্রী নারা লোকেশ বলেন, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কখন ফার্নিচারগুলি ফেরত দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন? তবে ওয়াইএসআর কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, নিজের বাড়িতে ব্যবহৃত আসবাবপত্রের দাম দিতে চেয়ে ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারকে চিঠি লিখেছেন জগন্মোহন।
শুধু ফার্নিচার নিয়ে চাপানউতোর নয়। ইতিমধ্যেই রুশিকোন্ডা পাহাড়ে সাতটি বাড়ির বিশাল কমপ্লেক্স নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন জগন্মোহন। ওই কমপ্লেক্স তৈরিতে খরচ পড়েছিল প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এখন ওয়াইএসআর কংগ্রেস নেতারা বলছেন, ওই সম্পত্তি জগন্মোহনের নয়। পর্যটন বিভাগের সম্পত্তি। জগন্মোহনের দলের এক নেতা বলেন, “২০১৪ সালে রাজ্য ভাগের পর অন্ধ্র প্রদেশ অনেক সম্পত্তি হারায়। সেজন্য একটি কমপ্লেক্স তৈরির সিদ্ধান্ত নেন আমাদের নেতারা। যা ভিভিআইপি গেস্ট হাউস হিসেবে কাজে লাগবে। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী-সহ অন্য ভিভিআইপি অতিথিরা যখন আসবেন, তখন তাঁদের জন্য এই গেস্ট হাউস কাজে লাগবে।” নারা লোকেশ জানিয়েছেন, তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হবে। তারপর ওই বাড়িটি জনগণের কাজে ব্যবহার করা হবে।
৫ বছর আগে চন্দ্রবাবু ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর প্রজা বেদিকা ভেঙে দিয়েছিল জগন্মোহনের সরকার। প্রজা বেদিকা ভেঙে ফেলে তার ধ্বংসাবশেষ নাইডুর বাড়ির কাছেই ফেলে রেখেছিল। এবার সেসব কী হবে? বিপুল জনসমর্থন নিয়ে ফের ক্ষমতায় ফেরা চন্দ্রবাবু বলছেন, ওই এলাকাকে ঘিরে একটি মিউজিয়াম তৈরির প্রস্তাব এসেছে তাঁর কাছে। যাতে মানুষ বুঝতে পারে, শাসকদল ও সরকারের কোন কাজটা করা উচিত নয়।