কলকাতা: তৃতীয়বার ক্ষমতায় ফেরার পর একে একে নতুন স্কিম আনছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটের আগে যে স প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেগুলিই বাস্তবায়িত করছেন তিনি। কিছুদিন আগেই কৃষকদের হাতে তুলে দিয়েছেন ‘কিষান ক্রেডিট কার্ড। আর এ বার পড়ুয়াদের উচ্চশিক্ষার সুবিধার্থে ‘স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড’ চালু করলেন তিনি। এই প্রকল্পে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। একবারে পুরো ১০ লক্ষ টাকা না নিয়ে ধাপে ধাপেও সেই টাকা নেওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। অনলাইনেই এই ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করা যাবে।
কারা পাবেন এই ঋণ?
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন দশম শ্রেণি থেকে এই পড়ুয়ারা এই ঋণ নিতে পারবেন। ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত ঋণ নেওয়া যাবে। গত ১০ বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হলে, তবেই এই ঋণের জন্য আবেদন করা যাবে। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ভর্তি হওয়ার প্রমাণ দেখিয়ে তবেই ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন পড়ুয়ারা। ঋণের জন্য আবেদন করার সময় সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর বয়স ৪০-এর কম হতে হবে। বয়স ও ঠিকানার প্রমাণ দেখিয়ে ঋণের জন্য আবেদন করতে হবে।
কোন কোন কোর্সের ক্ষেত্রে এই ঋণ প্রযোজ্য?
উচ্চশিক্ষা অর্থাৎ স্নাতক বা স্নাতকোত্তর কোর্সের জন্য এই ঋণ নেওয়া যাবে। এ ছাড়া, উচ্চশিক্ষা শেষ করে কম্পিটিটিভ বা প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষা পড়াশোনার জন্যও ঋণ নেওয়া যাবে। শুধু কলেজ, ইউনিভার্সিটি নয়, প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার জন্য কোচিং সেন্টারের ফি দিতেও এই ঋণের টাকা ব্যবহার করা যাবে।
কত ঋণ, কত সুদে?
সর্বাধিক ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ নেওয়া যাবে। বছরে সর্বনিম্ন ৪ শতাংশ সুদে ঋণ মেটাতে হবে পড়ুয়াকে। ৪ লক্ষ টাকা ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও মার্জিন মানি দিতে হবে না অর্থাৎ ব্যাঙ্কে এককালীন কোনও টাকা দিতে হবে না। তার বেশি টাকা ঋণ নিলে সেই টাকার ওপর ৫ শতাংশ মার্জিন মানি দিতে হবে।
কোর্স চলাকালীন যে কোনও সময়ে এই ঋণ নেওয়া যাবে। ঋণ দেওয়া হলেও ব্যাঙ্ক সরকারি পোর্টালে সেই তথ্য আপলোড করবে। ঋণ নেওয়ার জন্য ব্যাঙ্ক কোনও অতিরিক্ত শর্ত চাপাতে পারবে না। সরকারই এই ঋণের গ্যারান্টার হবে। ব্যাঙ্কে পড়ুয়ার অভিভাবককে কোনও চাপ দিতে পারবে না। ১৫ বছরের মধ্যে সুদ মেটাতে হবে। কোনও অভিভাবক চাইলে আগেও সেই টাকা মিটিয়ে দিতে পারে।
শুধু কোর্স ফি নয়, কোন কোন ক্ষেত্রে টাকা পাওয়া যাবে?
স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনও উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করা জন্য কোর্স ফি-র টাকার জন্য ঋণ পাওয়া যাবে। শুধু কোর্স ফি নয়, কলেজ বা ইউনিভার্সিটির হস্টেলে থাকার খরচ, পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকার খরচ, পরীক্ষার ফি, লাইব্রেরি ফি, ল্যাবরেটরি ফি, বই কেনার টাকা, কম্পিউটার বা ল্যাপটপ কেনার টাকা, প্রজেক্টের কাজ বা স্টাডি ট্যুরের খরচ জোগাতে এই ঋণ নেওয়া যাবে।
ঋণের ৩০ শতাংশ টাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে শিক্ষা সংক্রান্ত খরচের জন্য ব্যবহার করা যাবে। ২০ শতাংশ টাকা থাকার খরচ মেটাতে ব্যবহার করা যাবে। বিল বা কোনও নথি দিয়ে সব খরচের প্রমাণ দিতে হবে ব্যাঙ্ককে ও শিক্ষা দফতরকে।
ঋণ পাওয়ার প্রক্রিয়া:
ছাত্র বা ছাত্রীর আধার কার্ড ও দশম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে আবেদন করতে হবে। উচ্চশিক্ষা দফতর সেই নথি খতিয়ে দেখে ব্যাঙ্ককে পাঠাবে। ব্যাঙ্ক সব নথি দেখে ব্যাঙ্ক ঋণের অনুমোদন দিলে আরবিআই গাইডলাইন মেনে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এরপরই পড়ুয়ার হাতে পৌঁছবে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড। প্রত্যেক সেমিস্টার শেষ হওয়ার পর প্রগতি পত্র (প্রোগ্রেস রিপোর্ট) সরকারি পোর্টালে আপলোড করতে হবে।
আবেদনের সময় কী কী লাগবে?
শিক্ষার্থীর এক কপি রঙিন ছবি, অভিভাবকের এক কপি ছবি, শিক্ষার্থীর সই (জেপিইজি ফরম্যাটে), অভিভাবকের সই (জেপিইজি ফরম্যাটে), পড়ুয়ার আধার কার্ড (পিডিএফ ফরম্যাটে), দশম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (পিডিএফ ফরম্যাটে), অভিভাবকের ঠিকানার প্রমাণ (পিডিএফ ফরম্যাটে), কোর্সে ভর্তি হওয়ার রিসিপ্ট (পিডিএফ ফরম্যাটে), পড়ুয়ার প্যান কার্ড (বাধ্যতামূলক নয়), এমন একটি নথি যেখানে কোর্স ফি বা টিউশন ফি লেখা আছে (পিডিএফ ফরম্যাটে)।
যে সব ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করতে হবে সেগুলি হল:
www.wb.gov.in, https://banglaruchachashiksha.wb.gov.in, https://wbscc.wb.gov.in যে কোনও ওয়েবসাইটে গিয়ে Registration of Student অপশনে ক্লিক করতে হবে।
আবেদনের পদ্ধতি:
পড়ুয়ার আধার কার্ড থাকলে একরকম রেজিস্ট্রেশনের পদ্ধতি ও না থাকলে আর এক রকম।
রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে একটি ইউনিক আইডি পাঠনো হবে মোবাইলে। সেটি পরবর্তীকালে আবেদনকারী আইডি হিসেবে বিবেচিত হবে। সব বিভাগ পূরণ করার পর রেজিস্ট্রেশন নম্বর আসবে। এরপর নিজের পছন্দ মতো পাসওয়ার্ড তৈরি করতে হবে। এরপরই সেই রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ ইন করার অপশন আসবে।
লগ ইন করলেই দেখতে পাবেন আপনার আবেদন সফল হয়েছে কি না।