কলকাতা: শহর কলকাতা তো বটেই, রাজ্যজুড়ে আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে গণপরিবহণের ক্ষেত্রে বড় সঙ্কটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ১৫ বছরের পুরোনো হয়ে যাওয়া বাস-মিনিবাস ধাপে ধাপে বাতিল হতে পারে। কলকাতা-সহ দেশের একাধিক হাইকোর্ট অনেক আগেই বেসরকারি বাণিজ্যিক গাড়ির আয়ু ১৫ বছর পর্যন্ত বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু তারপর কী? কী হতে পারে? সমাধান সূত্রই বা কী হতে পারে? অফিস যেতে গেলে কি দীর্ঘক্ষণ লাইন দিতে হবে? এই প্রশ্নই উঠছে এখন।
সূত্রের খবর, কলকাতার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র কেএমডিএ এলাকায় এই বিধিনিষেধ চালু ছিল। আদালতে নতুন নির্দেশ অনুযায়ী শুধু কেএমডিএ এলাকা নয়, গোটা রাজ্যেই ১৫ বছরের পুরনো গাড়ি বাতিল হবে। আদালতের নির্দেশে পুরোনো বাস, মিনিবাস বাতিল করে ২০০৯ সালে ধাপে ধাপে নতুন বাস রাস্তায় নামানো হয়েছিল। আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে সেই সব বাসের একটা বড় অংশের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাবে। যার ফলে গণপরিবহণের ক্ষেত্রে সঙ্কট তৈরি হবে বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বাস মালিক সংগঠনের সদস্যরা।
জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “২০০৯ যে গাড়িগুলি বাতিল হয় সেগুলো ইতিমধ্যে বাতিল হওয়ার জায়গায় চলে গিয়েছে। ২০২৪ এর মাঝামাঝি বাতিল হতে পারে পুরনো বাস। সুতরাং সেই গাড়িগুলি যদি একসঙ্গে বাতিল হয়ে যায় গণপরিবহণের উপর বিরাট চাপ তৈরি হবে। তাই যাঁরা পরিবহণ ব্যবহার করেন তাঁরা অসুবিধায় পড়বেন।”
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে ধাপে ধাপে পুরোনো বাস বাতিল করে মালিকরা নতুন গাড়ি রাস্তায় নামিয়েছিলেন। আগামীতে তা সম্ভব নয় কেন? বাস মালিক সংগঠনের দাবি, পেট্রো পণ্য-সহ অন্যান্য যন্ত্রাংশের সব কিছুর দাম বাড়লেও দীর্ঘদিন বাস, মিনিবাসের ভাড়া বাড়ানো হয়নি। কোভিড কালে বাস মালিকদের বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। অনেক বাস বসে গিয়েছে। ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে নতুন করে বাস কিনে রাস্তায় নামানোর সামর্থ নেই মালিকদের। যাত্রী পরিবহণ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে কিছু প্রস্তাব নিয়ে ইতিমধ্যেই পরিবহণ মন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছেন বাস মালিকরা।
পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী জানান,”ধীরে-ধীরে পরিবেশ বান্ধবগাড়ি রাজ্যে চালু হবে। আমরা বাস মালিকদের কথা মাথায় রেখে এখনই কড়া পদেক্ষেপ করছি না। বাস মালিকদের তরফে দেওয়া প্রস্তাব কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হবে।”
সমাধান কী?
পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি যাত্রী পরিবহণ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে কিছু প্রস্তাব নিয়ে পরিবহণ মন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছেন বাস মালিকরা। মালিকদের প্রস্তাব দূষণ রুখতে জন্য বাসের কাঠামো একই রেখে যন্ত্রাংশ বদল করা হোক। পাশাপাশি ১৫ বছরের পুরনো BS 3 ইঞ্জিনের বাস গুলিকে বিভিন্ন জেলায় চালানোর প্রস্তাবও দিয়েছেন মালিকরা।
যদিও বিশেষজ্ঞদের মত বাস মালিকদের এই দাবি বাস্তবে কার্যকরী করা সম্ভব নয়। কারণ পুরনো গাড়িতে নতুন BS 6 ইঞ্জিন বসানোর কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। তাছড়া শুধু ইঞ্জিন নয়, বাসের পুরোনো হয়ে যাওয়া বডি থেকেও দূষণ ছাড়ায়। দূষণ মুক্ত পরিবেশের জন্য পুরোনো বাস বাতিল ছাড়া কোনও উপায় নেই।