Mamata Banerjee-Akhilesh Yadav: ২১ জুলাইয়ে শুধু অখিলেশই কেন? ইন্ডিয়া জোট নিয়ন্ত্রণে ফের কি ‘মাস্টারস্ট্রোক’ মমতার?

TMC Shahid Diwas: সমাজবাদী পার্টির প্রধান তথা উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের সঙ্গে বরাবরই সুসম্পর্ক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একে অপরকে দিদি-ভাই বলে সম্মোধন করেন দুইজন। গত উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারেও অখিলেশ যাদবের সমর্থনে প্রচারে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে ২১ জুলাইয়ের সভায় অখিলেশকে আমন্ত্রণের পিছনে শুধুই কি সুসম্পর্ক নাকি লুকিয়ে রয়েছে রাজনীতির জটিল অঙ্ক।

Mamata Banerjee-Akhilesh Yadav: ২১ জুলাইয়ে শুধু অখিলেশই কেন? ইন্ডিয়া জোট নিয়ন্ত্রণে ফের কি 'মাস্টারস্ট্রোক' মমতার?
ফাইল চিত্র।Image Credit source: PTI
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 21, 2024 | 12:24 PM

কলকাতা: ২১ জুলাই মানেই জনঅরণ্য। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা শুনতেই দূরদূরান্ত থেকে ভিড় জমান মানুষ। ‘শহিদদের স্মরণ’ করতেই আয়োজন একুশে জুলাইয়ের সভার। তবে ২০১১ সালের পর থেকে তা ‘শহিদ দিবসে’র পাশাপাশি তৃণমূলের বিজয় উৎসবেও পরিণত হয়েছে অনেকটা। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। লোকসভা নির্বাচন ও বিধানসভা উপনির্বাচনে দারুণ ফল করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। সেই জয়ের পর একুশের মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় কী বার্তা দেবেন, তার দিকে নজর সবার। তবে এবার ২১ জুলাইয়ের অনুষ্ঠানে বড় চমক হলেন অখিলেশ যাদব। ২১ জুলাইয়ের সভায় আমন্ত্রিত সপা প্রধান। তিনি আজকের অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। কিন্তু প্রশ্নটা হল, একা অখিলেশকেই কেন আমন্ত্রণ জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?

সমাজবাদী পার্টির প্রধান তথা উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের সঙ্গে বরাবরই সুসম্পর্ক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। একে অপরকে দিদি-ভাই বলে সম্মোধন করেন দুইজন। গত উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারেও অখিলেশ যাদবের সমর্থনে প্রচারে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে ২১ জুলাইয়ের সভায় অখিলেশকে আমন্ত্রণের পিছনে শুধুই কি সুসম্পর্ক নাকি লুকিয়ে রয়েছে রাজনীতির জটিল অঙ্ক।

১. ইন্ডিয়া জোটের মুখ-

মমতা-অখিলেশের সম্পর্কের সমীকরণ এবং ২১ জুলাইয়ের সভায় আমন্ত্রণের পিছনের কারণ বুঝতে লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের দিকে নজর দিতে হবে। এবারের নির্বাচনে ২৪০ আসনেই থেমে গিয়েছে বিজেপির বিজয়রথ। ৩০০-র গণ্ডি পার করতে পারেনি এনডিএ জোট। সেখানেই চমকপ্রদ ফল বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের। কংগ্রেস পেয়েছে ৯৯টি আসন। উত্তর প্রদেশে ৬২টি আসনে লড়ে, ৩৮টি আসনেই জয়ী হয়েছে অখিলেশের সমাজবাদী পার্টি। প্রাপ্ত আসনের নিরিখে ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম মুখ সপা। এবারে ২১ জুলাইয়ের অনুষ্ঠানে অখিলেশকে আমন্ত্রণ জানিয়ে কংগ্রেসকেও বার্তা দিতে চাইছে তৃণমূল, এমনটাই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

২. একলা চলার পথে মাস্টারস্ট্রোক অখিলেশ?

লোকসভায় কেন্দ্রে জোটে থাকলেও, রাজ্যে কিন্তু একাই লড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। ইন্ডিয়া জোটের সদস্যদের পরোয়াই করেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং তাঁর এই সিদ্ধান্ত যে ভুল নয়, তা প্রমাণও করে দেখিয়েছেন লোকসভার ফলাফলে। ভোট পরবর্তী সময়েও দেখা গিয়েছে, কংগ্রেসকে এড়িয়ে অখিলেশই সবথেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে তৃণমূল। ভোটের পর ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকেও আলাদাভাবে দেখা করেছিলেন অভিষেক ও অখিলেশ। তখনই শুরু হয়েছিল সমান্তরাল জোটের জল্পনা।

৩. রাহুলের বিকল্প মুখ অখিলেশ?

লোকসভায় বিরোধী দলনেতা পদে বসেছেন রাহুল গান্ধী। কংগ্রেসের যুবমুখ তিনি। অন্যদিকে, অখিলেশও কিন্তু যুব মুখ। এদিকে আবার রাহুল-অখিলেশের সম্পর্ক বেশ ভাল। তাদের জুটিতেই উত্তর প্রদেশে ভাল ফল করেছে বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের। অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতটা সনিয়া গান্ধীর ঘনিষ্ঠ, রাহুলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক  অতটা ঘনিষ্ঠ নয়। এক্ষেত্রে এই তত্ত্বও উঠে আসছে যে রাহুলকে চাপে রাখতেই অখিলেশকে হাত খুলে সমর্থন করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

৪. অবাঙালিদের মন রক্ষা?

সম্প্রতিই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবাঙালিদের সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন, তা নিয়ে চাপানউতর শুরু হয়েছিল। উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবকে একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে নিয়ে এসে হিন্দি বলয় এবং বাংলায় বসবাসকারী অবাঙালিদের মন জয় করার একটা সুযোগ থাকবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।

৫. কংগ্রেসকে বার্তা দিতেই অখিলেশকে আমন্ত্রণ?

যতদূর জানা যাচ্ছে, ২১ জুলাইয়ের সভায় ইন্ডিয়া জোটের সদস্যদের মধ্যে একমাত্র অখিলেশ যাদবই আমন্ত্রিত। বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে বিরোধ তৃণমূলের। ফলে কংগ্রেসের রাজ্যস্তরীয় নেতারা তো আমন্ত্রণ পাবেন না, শীর্ষ স্তরের কোনও নেতৃত্বকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও, তারা আসবেন কি না, তা জানা নেই। ইন্ডিয়া জোটে একসঙ্গে থাকার বার্তা দিলেও, ভিতরে রয়েছে দুটি গোলার্ধ- কংগ্রেস আর তৃণমূল কংগ্রেস। অখিলেশের দল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে ভাল ফল করেছে উত্তর প্রদেশে। সেখানেই তৃণমূলের মনে ভয় জাগতে পারে, অখিলেশ যদি পুরোপুরিভাবেই কংগ্রেসের শিবিরে ভিড়ে যায়?

 তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া-

একুশে জুলাইয়ের সভায় অখিলেশ যাদবের যোগদান প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা কুণাল ঘোষ বলেন,  “তৃণমূল কংগ্রেসের সমাবেশ। তৃণমূল ইন্ডিয়া জোটের সদস্য। দীর্ঘদিনের সম্পর্ক অখিলেশের সঙ্গে। মমতাদি অখিলেশকে স্নেহ করেন, অখিলেশ মমতাদিকে শ্রদ্ধা করেন। এতে নতুন কোনও সমীকরণ নেই।”

অন্যদিকে সপা নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী কিরণময় নন্দ বলেন, “তৃণমূলের তরফে এবার অখিলেশ যাদবকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তিনি এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। লখনউ থেকে সোজা তিনি কলকাতায় যাবেন ২১ জুলাইয়ের সভায় যোগ দিতে।”