জন্মভূমির সে বড় টান! সুদূর মার্কিন মুলুক থেকে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর পাঠাচ্ছেন রহড়া রামকৃষ্ণ মিশনের কৃতী ছাত্র

Jun 17, 2021 | 8:46 PM

প্রদীপবাবু চান এ দেশে তাঁর একটা স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান গড়তে। যে প্রতিষ্ঠান করোনার মতো দুর্দিনে মানুষের কাজ করবে।

জন্মভূমির সে বড় টান! সুদূর মার্কিন মুলুক থেকে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর পাঠাচ্ছেন রহড়া রামকৃষ্ণ মিশনের কৃতী ছাত্র
ফাইল চিত্র।

Follow Us

প্রীতম দে: উত্তর ২৪ পরগনার খড়দহ থেকে সোজা পাড়ি মার্কিন মুলুকে। সেই কবেকার কথা! ১৯৬৮ সাল। মাঝের এতগুলো বছর বিদেশেই থেকেছেন। কিন্তু ঢেঁকি যেমন স্বর্গে গিয়েও ধানই ভাঙে, মনপ্রাণে বাঙালিও তেমন পৃথিবীর যে কোণেই থাকুন না কেন, নজর পড়ে থাকে সেই জন্মভিটার দিকেই। এমনকী এই কঠিন অতিমারির কালেও নিজের ভিটেমাটির মানুষগুলো কেমন আছে তা ভেবে ভেবেই দিন কাটে তাঁদের। এরকমই একজন হাভার্ড থেকে পাশ করা অর্থনীতিবিদ প্রদীপ কুমার ঘোষ।

ডক্টর প্রদীপ কুমার ঘোষ। মার্কিন মুলুকে অনেক পুরনো এই প্রবাসী বাঙালিবাবু। সেই ছয়ের দশক থেকে। ১৯৬৮ সালে স্নাতক পড়তে বিদেশযাত্রা। নিউইয়র্ক স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ইকোনমিক্সে ডক্টরেট। পড়েছেন হাভার্ডে। তাঁর লেখা বই বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যতালিকার অন্তর্গত। ২২ বছর সেখানকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। শুধু পড়াশোনাই নয়, একইসঙ্গে বাঙালির সনাতনী ঐতিহ্য-আচারকেও সে দেশে তুলে ধরেছেন। ওয়াশিংটনে কালী মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেছেন প্রদীপবাবু।

আসলে এ দেশের সঙ্গে নিজেকে প্রতি নিয়ত বেঁধে রাখতে চেয়েছেন মানুষটি। স্ত্রীও বাঙালি। দক্ষিণ কলকাতার বিজয়গড়ের মেয়ে। বাংলার প্রতি তাই টানটা সবদিক থেকে। প্রদীপবাবু চান এ দেশে তাঁর একটা স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান গড়তে। যে প্রতিষ্ঠান করোনার মতো দুর্দিনে মানুষের কাজ করবে। সে কাজ অবশ্য চলছে। এখনও পর্যন্ত ৩৫০টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর পাঠিয়েছেন তিনি। নিজের প্রচার চান না। আড়ালে থেকে কাজ করতে চান। আর মানুষের যেটা প্রয়োজন ঠিক জিনিসটা ঠিক হাতে যাতে পৌঁছতে পারে সেটা নিশ্চিত করতে চান। ৩৫০টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটরই তিনি স্বাস্থ্য দফতরকে পাঠিয়েছেন। আবার কোনও কোনওটা গিয়েছে নবনির্বাচিত বিধায়কদের কারও কাছে।

আরও পড়ুন: ত্রিপুরা ‘উদ্ধারে’ মুকুল-অস্ত্রেই ধার তৃণমূলের, ঘর বাঁচাতে আরএসএসের শরণে বিজেপি

অর্থনীতিতে পিএইচডি করা মানুষটি সাত সমুদ্র তেরো নদীর পার থেকে হোয়াটসঅ্যাপ কলে হেসে জানালেন, “আমি রহড়া রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র। স্বামী নিত্যানন্দ মহারাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। মানুষের জন্য কাজ করার ইচ্ছেটা বরাবরই ছিল। দেশের মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছেটা বাইরে গিয়ে আরও বেড়েছে বই কমেনি।” ২৫টির মত বই লিখেছেন খড়দহের সূর্যসেনের এই মানুষটি।

যে গ্রাম এমন গুণীজনের শৈশবের সাক্ষী, সেখানকার মানুষের জন্য লাইব্রেরি, স্কুল করে দিয়েছেন। নিজের উপার্জনের অর্ধেকটাই দিয়ে দেন দেশের মানুষের জন্য। এখনও। করোনার সময় শুধু অক্সিজেন নয় আরও অনেক সাহায্যের ব্যবস্থা করছেন। ১০০ জনের বেশি বৈজ্ঞানিক কাজ করছেন জনস্বাস্থ্য নিয়ে তাঁর তৈরি ইনস্টিটিউটে। কী করে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গির মত রোগ সারানো সম্ভব তার উপায় খুঁজে বের করা কাজ। সে তালিকায় এখন করোনাও যুক্ত হয়েছে।

Next Article