বুড়িয়ে গেলেই ফুরিয়ে যাওয়া নয়, শনি-সন্ধ্যায় আত্মবিশ্বাস তৈরির গল্প শোনাবেন মৌমিতারা

Kaamalesh Chowdhury | Edited By: ঈপ্সা চ্যাটার্জী

Jan 24, 2025 | 8:24 AM

Women Empowerment: দিনকয়েক আগেই ‘দুয়ারে পার্বণ’ নামে একটি কর্মসূচি নিয়েছিলেন মৌমিতারা। কলকাতার রাস্তায় গাড়ি নিয়ে পিঠে বিক্রি করতে বেরিয়েছিলেন দুই মহিলা। ১২ হাজার টাকার পিঠে বিক্রি হয়েছে। এতদিন স্রেফ বাড়ির লোকজনের জন্য পিঠে বানাতেন। এখন সেই ঘরোয়া পিঠেতেই স্বনির্ভরতার পথ খুঁজে পেয়েছেন।

বুড়িয়ে গেলেই ফুরিয়ে যাওয়া নয়, শনি-সন্ধ্যায় আত্মবিশ্বাস তৈরির গল্প শোনাবেন মৌমিতারা
র‌‌্যাম্প কাঁপাবেন যারা।
Image Credit source: TV9 বাংলা

Follow Us

কলকাতা: বছর ছেষট্টির জয়তী সান্যাল বসাক। বিএসএনএলে অফিসার ছিলেন। ২৫ জানুয়ারি বিকেলে সুজাতা সদনে র‍্যাম্পে হাঁটবেন। অনুষ্ঠানের নাম, এনিবডি ক্যান ওয়াক। যে কেউ হাঁটতে পারেন। অনুষ্ঠানের ক্যাচলাইন, বুড়িয়ে গেলেও ফুরিয়ে যাব না। ফুরিয়ে না যাওয়ার অনেক গল্পই একসঙ্গে বলবে সুজাতা সদনের সন্ধে।

জয়তীরা যে পোশাক পরে হাঁটবেন, সেই পোশাক ডিজাইন করেছেন অপরাজিতা ঘোষ, চন্দ্রাণী সাহার মতো ডিজাইনাররা। কেউ-ই শহরের প্রথম সারির পরিচিত ডিজাইনারের দলে পড়েন না। কেউ বাড়িতে, কেউ নিজের এক চিলতে বুটিকে পোশাক বানাতেন। এখন এক মঞ্চে জড়ো হয়ে কাজ করছেন। যোগাযোগ বেড়েছে। বেড়েছে বিক্রিবাটা। সবচেয়ে বড় কথা, বেড়েছে আত্মবিশ্বাস।

সবে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ। কিংবা, দশের লাঠি একের বোঝা। জয়তী, অপরাজিতা, চন্দ্রাণীরা যে কাজ করছেন, তাতে অক্ষরে অক্ষরে সত্যি হয়ে উঠেছে এই প্রবাদগুলি। মার্কেট রিসার্চ কনসালট্যান্টের কাজ করা অপরাজিতা টি শার্ট, শাড়ির, বেড কভার, ল্যাম্প শেডের প্যাটার্ন তৈরি করেন। ১২ বছর ধরে ডিজাইন করছেন। ইদানীং এগজিবিশন অনেকটাই বেড়েছে। এর নেপথ্যে মৌমিতা ঘোষ এবং তাঁর হাতে তৈরি ‘মেয়েরা’ সংগঠন। অপরাজিতা বলছেন, ‘মৌমিতা সবাইকে নিয়ে যে ভাবে কাজ করেছে, তাতে আমার মতো অনেকেই একটা স্পেস পেয়েছি। বাড়িতে বসে অনেকেই কাজ করেন, কিন্তু বাজার পর্যন্ত পৌঁছতে পারেন না। একসঙ্গে কাজ করায় সেই সুবিধাটা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকাও বড়।’ অর্থাত্‍, আগে যিনি শুধু ঘরের কাজ করতেন, এখন তাঁর কাজই অন্য ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে।

একই কথা বলছেন চন্দ্রাণীও। পোশাক, গয়না নিয়ে বাঘাযতীনে বুটিক চালান। চন্দ্রাণী বলছেন, ‘হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করার বড় সুবিধা রয়েছে। অনেক যোগাযোগ বেড়েছে। অনেক মডেলের সঙ্গে আলাপ হয়েছে, যারা এখন আমাদের থেকে পোশাক নিয়ে পরছেন। আগে আমরাও ওদের কথা জানতাম না, ওরাও আমাদের কথা জানতেন না।’

এটাই মৌমিতার সাফল্য। মৌমিতা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বড় দায়িত্ব সামলান। মৌমিতা বাচিকশিল্পীও। তবে মেয়েদের নিয়ে প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে গিয়ে সাংস্কৃতিক মঞ্চ তৈরির করার পথে হাঁটেননি মৌমিতা। চেয়েছেন এমন একটা প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে, যাতে মহিলাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ে, মহিলারা আপদে-বিপদে পাশে থাকার মতো কয়েকজনকে পান, নিজেদের হারিয়ে যাওয়া, পরিচর্যা করতে না পারা ট্যালেন্ট খুঁজে পান। অবশ্যই নিজের কাজের বাজার খুঁজে পান এবং স্বনির্ভর হয়ে ওঠেন। মৌমিতার কথায়, ‘আমরা এমন কাজ করতে চেয়েছি, যেটা শুধু শখের জন্য নয়, হাতে যাতে পয়সা আসে। আমাদের সমাজে মহিলারা এখনও আত্মবিশ্বাসী নন। স্বামীর কাছে, প্রেমিকের কাছে মার খেয়েও থেকে যান। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ঠিক সময়ে সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে, মেয়েটিকে মরতে হত না। আত্মবিশ্বাস তখনই আসবে, যখন হাতে কাজ থাকবে, হাতে টাকাপয়সা থাকবে।’

দিনকয়েক আগেই ‘দুয়ারে পার্বণ’ নামে একটি কর্মসূচি নিয়েছিলেন মৌমিতারা। কলকাতার রাস্তায় গাড়ি নিয়ে পিঠে বিক্রি করতে বেরিয়েছিলেন দুই মহিলা। ১২ হাজার টাকার পিঠে বিক্রি হয়েছে। এতদিন স্রেফ বাড়ির লোকজনের জন্য পিঠে বানাতেন। এখন সেই ঘরোয়া পিঠেতেই স্বনির্ভরতার পথ খুঁজে পেয়েছেন।

ডিজাইনার, মডেল, মেক-আপ আর্টিস্টের মতো এই পিঠেশিল্পীরাও থাকবেন সুজাতা সদনে। মৌমিতা বলছেন, ‘সাদা-কালো, মোটা-রোগার বাধা কাটিয়ে আমরা কাজ করছি। বয়সও যে কোনও বাধা হতে পারে না, সেটাও আমরা দেখাচ্ছি। সেই কারণেই অনুষ্ঠানের নাম, এনিবডি ক্যান ওয়াক।’

র‍্যাম্পে হাঁটা প্রতীকী মাত্র। ১,৫০০ মহিলার একসঙ্গে হেঁটে, এগিয়ে চলার কাহিনিই বলবে শনিবাসরীয় সন্ধে।

Next Article