Bengal Weather: বিপরীত ঘূর্ণাবর্ত সরে বঙ্গোপসাগরের বন্ধ ‘সিংহদুয়ার’ খুলছে, বাংলা এ বার ভিজবে

Bengal Weather: কতটা শুকনো দক্ষিণবঙ্গ? এপ্রিলে গড়ে ৪৮.৮ মিলিমিটার বৃষ্টি পাওয়ার কথা। হয়েছে মাত্র ৩.৮ মিলিমিটার। মানে ৯২ শতাংশ ঘাটতি। কালবৈশাখী-হীন এপ্রিল। গোটা মাসে অন্তত দুটো কালবৈশাখী পাওয়ার কথা কলকাতার। একটিও হয়নি।

Bengal Weather: বিপরীত ঘূর্ণাবর্ত সরে বঙ্গোপসাগরের বন্ধ ‘সিংহদুয়ার’ খুলছে, বাংলা এ বার ভিজবে
আজ বিকেলেই জন্ম হতে পারে রেমালেরImage Credit source: Gencraft

| Edited By: জয়দীপ দাস

May 05, 2024 | 11:17 AM

কলকাতা: এলিয়ট লিখেছিলেন, ক্রুয়েলেস্ট এপ্রিল। আক্ষরিক অর্থেই এপ্রিলে নিষ্ঠুরতার সাক্ষী বাংলা। একমাসে ১৬ দিন ধরে তাপপ্রবাহের কবলে রাজ্য। মে ধরলে ২০ দিন হয়ে গেল। ৪ দিন দেশের উষ্ণতম কলাইকুণ্ডা। মেদিনীপুর থেকে মালদহ, বাঁকুড়া থেকে বালুরঘাট, তাপপ্রবাহের আঁচ থেকে রেহাই পায়নি অধিকাংশ জেলাই। ৯ দিন কলকাতার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে। মে ধরলে সংখ্যাটা ১০। সর্বোচ্চ তাপমাত্রার নিরিখে ৭০ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে মহানগর। একটানা গরম, সর্বোচ্চ তাপমাত্রার গড়, রেকর্ড কম-বেশি সবেতেই। বেলাগাম গরমের নেপথ্যে একটাই কারণ, সমুদ্র থেকে জলীয় বাষ্পের জোগান বন্ধ, তার ফলে ঝড়-বৃষ্টি বন্ধ, শুধু শুকনো হাওয়ার দাপট। যাকে বলে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা! 

পশ্চিমাঞ্চলের ‘লু’ বাংলাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ল কী ভাবে? 

এর পিছনে একাধিক কারণ চিহ্নিত করছেন আবহবিদরা। মৌসম ভবনের ‘ময়নাতদন্ত’ বলছে, বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরে একটি বিপরীত ঘূর্ণাবর্ত ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল। এই খলনায়কের অবস্থান এমনই, বঙ্গোপসাগর থেকে বাংলা, ওড়িশায় জলীয় বাষ্প ঢোকার দরজা বেশিরভাগ দিনই বন্ধ ছিল। ‘সিংহদুয়ার’ বন্ধ থাকলে যা হয়! জলীয় বাষ্প না ঢোকায় আকাশ খটখটে পরিষ্কার। ফলে সাতসকাল থেকেই চড়া রোদ, সঙ্গে শুকনো হাওয়ার একচ্ছত্র দাপট। পাশের রাজ্য থেকেও গরম হাওয়া বাধাহীন ভাবে ছুটে এসেছে। এখানেই শেষ নয়, বিপরীত ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে বায়ুমণ্ডলের উপরিস্তরের গরম হাওয়াও সটান নীচে নেমেছে। সিলিং ফ্যান যেমন ছাদের গরম হাওয়া নীচে নামিয়ে দেয়, এটাও কিছুটা তেমনই। ফল? চড়া রোদ, পড়শি রাজ্যের হলকা, বায়ুমণ্ডলের উপরিস্তরের গরম হাওয়া। ত্র্যহস্পর্শ।

এই ত্র্যহস্পর্শের ঠেলাতেই বায়ুমণ্ডলে একের পর এক বদল। এ বছর মার্চেও নিয়মিত ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে দক্ষিণবঙ্গে। মূলত পশ্চিমী ঝঞ্ঝার সৌজন্যে। কিন্তু সূর্যের উত্তরায়ণের জন্য এপ্রিলে ঝঞ্ঝার আশীর্বাদ ক্রমশ ফিকে হয়েছে। এর মধ্যে অস্বাভাবিক কোনও প্রবণতা নেই। প্রতি মরসুমেই হয়। এপ্রিলের গরমে সাধারণত বঙ্গোপসাগরের বিপরীত ঘূর্ণাবর্ত ত্রাতা হয়ে ওঠে। যা দক্ষিণবঙ্গে জলীয় বাষ্প ঢুকিয়ে দিতে সাহায্য করে। বাকি কাজটা করে ঝাড়খণ্ডের উপর থাকা নিম্নচাপ অক্ষরেখা। মইয়ের মতো জলীয় বাষ্পকে নির্দিষ্ট উচ্চতা পর্যন্ত তুলে দেয়। বজ্রগর্ভ মেঘ সৃষ্টি হয়, জন্ম নেয় কালবৈশাখী। দুটোর একটিরও দেখা মেলেনি এ বার। অনেক সময় ঝাড়খণ্ডের উপর থাকা ঘূর্ণাবর্তও ঝড়-বৃষ্টির ‘ভগীরথ’-এর কাজটা করে দেয়। কিন্তু গরম হাওয়ার দাপটে সেই ঘূর্ণাবর্ত ঝাড়খণ্ড বা গাঙ্গেয় বাংলার উপর জায়গাই পায়নি। ঠাঁইনাড়া হয়ে উত্তর বাংলাদেশের দিকে সরে যায়। তার হাত ধরে উত্তরবঙ্গ, উত্তর-পূর্ব ভারত বৃষ্টি পেলেও দক্ষিণবঙ্গ শুখাই থেকে যায়।  

কতটা শুকনো দক্ষিণবঙ্গ? এপ্রিলে গড়ে ৪৮.৮ মিলিমিটার বৃষ্টি পাওয়ার কথা। হয়েছে মাত্র ৩.৮ মিলিমিটার। মানে ৯২ শতাংশ ঘাটতি। কালবৈশাখী-হীন এপ্রিল। গোটা মাসে অন্তত দুটো কালবৈশাখী পাওয়ার কথা কলকাতার। একটিও হয়নি। এপ্রিলে মোটামুটি ৫৫ মিলিমিটারের আশপাশে বৃষ্টি হওয়ার কথা আলিপুরে। হয়েছে না হওয়ার মতোই। মাত্র ০.৫ মিলিমিটার। 

কিন্তু বঙ্গোপসাগরের বিপরীত ঘূর্ণাবর্ত এ ভাবে স্থলভাগের উপর গাঁট হয়ে বসে থাকল কেন? ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটেরোলজির জলবায়ু বিজ্ঞানী পার্থসারথি মুখোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, ‘‘এর সঙ্গে প্রশান্ত মহাসাগরের এল নিনোর একট সম্পর্ক থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এল নিনো এখন আস্তে আস্তে দুর্বল হওয়ার পথে। দেখা গিয়েছে, এমন পর্বে ভারতে বৃষ্টি কমে যায়, গ্রীষ্ম উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। গত প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে উত্তর-পূর্ব ভারত ছাড়া দেশে আরও কোথাওই বজ্রগর্ভ মেঘে বৃষ্টি হয়নি। কারণ, জলীয় বাষ্প ঢোকার পথটাই বন্ধ ছিল।’’

ফাইল ছবি

বঙ্গোপসাগরের এই বন্ধ ‘সিংহদুয়ার’ই অবশেষে খুলছে। ঠাঁইনাড়া হচ্ছে বিপরীত ঘূর্ণাবর্ত। জলীয় বাষ্প ঢুকতে শুরু করেছে শুকনো বাংলার অন্দরে। ইতিউতি বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিও হচ্ছে। পিছু হটছে তাপপ্রবাহ। শনিবার ১৯ দিন পর কলকাতার তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে নেমেছে। তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রিতে পৌঁছনোর দিন কলকাতার সর্বনিম্ন আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ ২১ শতাংশে নেমে গিয়েছিল। শীতেও কলকাতার হাওয়া এত শুকনো হয় না! শনিবার সেই সর্বনিম্ন আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণই বেড়ে হয়েছে ৪৭%। টানা তাপপ্রবাহের পর মুক্তির আনন্দ মালদহ, দুই দিনাজপুরেও। চল্লিশের নীচে তাপমাত্রা নেমেছে বর্ধমান, বীরভূমে। সুখবর শুনিয়ে আবহাওয়া দফতর বলেছে, কালবৈশাখী আসছে। হতে পারে ভারী বৃষ্টিও। সোমবার বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, মঙ্গলবার পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস। ঝেঁপে বৃষ্টি নামলে, আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝি জেলায় জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪-৩৫ ডিগ্রিতে নেমে আসতে পারে। শান্ত সাগরও অশান্ত হওয়ার আশঙ্কা। সেই ইঙ্গিত মাথায় রেখেই সোমবার থেকে বুধবার মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করেছে আবহাওয়া দফতর। একেই বোধহয় বলে আমূল পরিবর্তন।