Anubrata Mondal In SSKM: ‘কেষ্টর’ মার শেষ মুহূর্তে! নাকের ডগায় নিজাম প্যালেস, সক্কলকে ‘ঘোল খাইয়ে’ উডবার্নে ঠাঁই নিলেন অনুব্রত

Anubrata Mondal In SSKM: মঙ্গলবার রাত আটটা নাগাদ দুই ব্যক্তি, মাস্ক পরিহিত, তাঁরা অনুব্রতর ফ্ল্যাটে ঢোকেন। পরে জানা যায়, তাঁদেরই একজন হলেন হাইকোর্টের আইনজীবী সঞ্জীব কুমার ডাণ।

Anubrata Mondal In SSKM: 'কেষ্টর' মার শেষ মুহূর্তে! নাকের ডগায় নিজাম প্যালেস, সক্কলকে 'ঘোল খাইয়ে' উডবার্নে ঠাঁই নিলেন অনুব্রত
এসএসকেএম হাসপাতালে অনুব্রত মণ্ডল
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Apr 06, 2022 | 3:23 PM

বীরভূম: কলকাতা ১৫৭-র ২৩ নম্বর চিনার পার্কের একটি বহুতল আবাসন। তার প্রথম তলার সামনের ফ্ল্যটটি যে তৃণমূলের বাহুবলী নেতা অনুব্রত মণ্ডলের, তা হয়তো অনেকেই জানতেন না। কিন্তু মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে বাংলার গোটা সংবাদমাধ্যমের নজরে সেই ফ্ল্যাট। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬.২০ মিনিট। দুধ সাদা এক্সইউভি গাড়িটা এসে পৌঁছয় বহুতলের নীচে। তার ‘সাধারণ পোশাক’ কুর্তা-পাজামাতেই ফ্ল্যাটে ঢুকে পড়েন তিনি। তার আগে বীরভূম থেকে যখন তাঁর কনভয় রওনা দিয়েছিল, তখনই জল্পনা বাজারে ছড়িয়ে পড়েছিল, তবে কি সিবিআই দফতরে হাজিরা দেবেন তিনি?

মঙ্গলবার রাত আটটা নাগাদ দুই ব্যক্তি, মাস্ক পরিহিত, তাঁরা অনুব্রতর ফ্ল্যাটে ঢোকেন। পরে জানা যায়, তাঁদেরই একজন হলেন হাইকোর্টের আইনজীবী সঞ্জীব কুমার ডান। তিনি গরু পাচার মামলায় অনুব্রত হয়ে আদালতে লড়ছেন। সর্বসাকুল্যে ২০ মিনিট। কথা বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন ওই দুই ব্যক্তি। অনেকটা রাত পর্যন্ত অনুব্রতর ঘরে হলদেটে আলোটা জ্বলছিল। রাতে নিভে যায়।

বুধবার সকাল থেকেই আবারও সেই তৎপরতা। একদিকে সিবিআই দফতরে চূড়ান্ত তৎপরতা, অন্যদিকে নজর আবাসনের একতলার ওই ঘরে। এদিন সকাল থেকে অবশ্য অনুব্রতর ফ্ল্যাটে কাউকে ঢুকতে বের হতে দেখা যায়নি। বেলা ১১টার সময়ে নিজাম প্যালেসে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল অনুব্রতর। সকাল ১০টা ১৫ বেজে কিছুটা সময় এগিয়েছে। এদিন কালো এক্সইউভি গাড়িতে রওনা দেন বাহুবলী। পরনে কাঁচা হলুদ পাঞ্জাবি। গোটা সংবাদমাধ্যম অনুসরণ করতে থাকে তাঁর কনভয়।

বাগুইআটি থেকে উল্টোডাঙা ওভারব্রিজ ওঠে তাঁর গাড়ি। তারপর বাঁ দিক নিয়ে মা ফ্লাইওভার ধরেন। তবে এদিন অবশ্য পাইলট কার ছিল না। পার্কসার্কাস থেকে এজেসি বসু ফ্লাইওভার উঠেই বাঁ দিকে টার্ন। ঠিক তার প্রাক-মুহূর্ত পর্যন্ত যে জল্পনা ছিল, তিনি আদৌ কি নিজাম প্ল্যালেসে পৌঁছছেন? সেই জল্পনার অবসান হল বাঁদিকের ওই টার্নেই। কার্যত নিজাম প্যালেসের নাকের ডগা দিয়ে অনুব্রতর গাড়ি চলে গেল এসএসকেএম হাসপাতালে।

আগের চার বারে মেলেনি সাড়া। আরও একবার, এই নিয়ে পঞ্চমবার। গরু পাচার চক্রের মামলায় সিবিআই-কে এবারও ‘ধাপ্পা’ দিলেন অনুব্রত মণ্ডল। বেলা ১১.৩৭ মিনিট। অনুব্রত পৌঁছন এসএসকেএম-এ। রোগী সাধারণত অ্যাম্বুল্যান্সে এসে ভর্তি হয়। কিন্তু লাল বাতির কনভয় নিয়ে এমন রোগীর এসএসকেএম-ভর্তি দেখে কার্যত অবাকই হচ্ছেন হাপিত্যেশ হয়ে বসে থাকা অন্যান্য রোগীরা। উডবার্ন ওয়ার্ডে ঢোকার আগেই তাঁকে পাঁজাকোলা করে নেন অনুগামীরা। ততক্ষণে অবশ্য হাসপাতালের বাইরের চত্বর লোহার রেলিং দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে।

সকাল থেকেই নিজাম প্যালেসে উপস্থিত ছিলেন সিবিআই-এর জয়েন্ট ডিরেক্টর পঙ্কজ শ্রীবাস্তব। নিজাম প্যালেসের বাইরে মোতায়েন সিআরপিএফ জওয়ানরা তখন নিস্পৃহ, নেই কোনও তৎপরতা।

৭ মার্চ গরু পাচার মামলায় অনুব্রতকে নোটিস পাঠায় সিবিআই। নোটিসে উল্লেখ থাকে ১৪ মার্চ যাতে নিজাম প্যালেসে হাজিরা দেন তিনি। ওই দিনই অর্থাৎ ৭ মার্চ গ্রেফতারির আশঙ্কায় রক্ষাকবচ চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে যান অনুব্রত।  আইনজীবীর বক্তব্য, তাঁর মক্কেল অসুস্থ। তিনি সিবিআই-এর মুখোমুখি হতে প্রস্তুত। কিন্তু তাঁকে যেন বীরভূম কিংবা তাঁর বাড়ির কাছাকাছি কোথাও গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁর পক্ষে কলকাতায় আসা সম্ভব নয়। পাশাপাশি অনুব্রতর বিরুদ্ধে যেন কোনও কড়া পদক্ষেপ না করে সিবিআই। এই আর্জি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন বীরভূম জেলা সভাপতি।

১১ মার্চ বিচারপতি রাজশেখর মান্থার সিঙ্গল বেঞ্চ রক্ষাকবচের আবেদন খারিজ করে দেয়। ১৪ মার্চ সিঙ্গল বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যান তিনি। প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি ছিল। হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ই বহাল রাখে।

বলাইবাহুল্য, সারা বছরই অনুব্রত মণ্ডলের শ্বাসকষ্টের একটু সমস্যা থাকে। কিন্তু যখনই সিবিআই ডাক পড়ে, তখনই কি বাড়তে থাকে অনুব্রতর শ্বাসকষ্ট? কাল মধ্যরাত পর্যন্তও ঠিক ছিলেন, হঠাৎ আজ সকালেই অসুস্থ হলেন? প্রশ্ন উঠছে জনমানসে। সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁর বুকে সামান্য সমস্যা রয়েছে। চিকিৎসকরা তাঁর শরীরের অক্সিজেনের মাত্র মেপে দেখেছেন, তা মোটের ওপর স্বাভাবিক। তাঁর রক্তচাপ সামান্য বেশি। অনুব্রত বায়না করছিলেন, তাঁকে সাড়ে ১২ নম্বর কেবিন দেওয়া হোক। যদি না সম্ভব হয়, তাঁকে আইসিইউতেই রাখা হোক। অক্সিজেন চালু করে দেওয়া হোক। কিন্তু যখন তাঁর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিক, তাহলে কীভাবে বাইরে থেকে অক্সিজেন দেবেন চিকিৎসকরা?

আরও পড়ুন: Anubrata Mondal: নিজাম প্যালেস নয়, কনভয় নিয়ে সোজা এসএসকেএম-এ ঢুকলেন অনুব্রত