Gangasagar Mela: ‘নোনা জলে করোনা ছড়ায় না,’ আদালতে গঙ্গাসাগর মেলার পক্ষে সওয়াল করল রাজ্য
Gangasagar: গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে হাই কোর্ট জানতে চায়, রাজ্য কী চায়? কোভিডের কথা মাথায় রেখে কী কী সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?
কলকাতা: রাজ্যে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। এই পরিস্থিতিতে গঙ্গাসাগর মেলা (Gangasagar Mela) বন্ধ করা সম্ভব? গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টকে (Calcutta High Court) নিজের অবস্থান জানাল রাজ্য। গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে হাই কোর্ট জানতে চায়, রাজ্য কী চায়? কোভিডের কথা মাথায় রেখে কী কী সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?
একনজরে এদিন যা জানাল রাজ্য:
আদালতে রাজ্যের তরফে এদিন জানানো হয় করোনা সংক্রমণ যাতে না ছড়ায় তার জন্য একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যেমন-
- রোটেশনের ভিত্তিতে স্নান ও দর্শনের কথা জানিয়েছে রাজ্য। এদিন আদালতে অ্যাডভোকেট জেনারেল গোপাল মুখার্জি বলেন, তিনি ব্যক্তিগত ভাবে মেলায় আগ্রহী নন। বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি ভয়ই পাচ্ছেন। তবে রাজ্যের তরফে গঙ্গাসাগর মেলা যাতে ঠিক ভাবে হয় তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর পর প্রধান বিচারপতি জিজ্ঞেস করেন, ‘সৎকার ঘাটের লিস্ট কেন দিলেন?’ উত্তরে এজি বলেন, তাঁরা গোটা এলাকাকেই কন্টেইনমেন্ট জ়োন ঘোষণা করবেন খারাপ পরিস্থিতি হলে।
- র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে জোর দিচ্ছে রাজ্য। স্যাম্পেল টেস্ট হবে গঙ্গাসাগরে আগত পূণ্যার্থীদের। থাকছে গ্রিন করিডোর। যা মেলা প্রাঙ্গণেই থাকবে। সেফ হোম থেকে হাসপাতালের ব্যবস্থা থাকছে। বাচ্চারা খুব বেশি আসবে বলে মনে করা হচ্ছে না। ই- স্নান, ই- দর্শনে জোর দেওয়া হচ্ছে। কলকাতা হাই কোর্টকে জানালেন অ্যাডভোকেট জেনারেল গোপাল মুখার্জি।
- গঙ্গাসাগর মেলার পাশের হাসপাতাল আপাতত ভালই কাজ করছে। সাগরে সবাইকে দ্বিতীয় ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। রাজ্য আশা করছে পাঁচ লক্ষ পূণ্যার্থীর বেশি আসবেন না। কলকাতা থেকে ডায়মন্ড হারবার সবাই টিকা পেয়েছেন। ৭০ শতাংশ ফার্স্ট ডোজ পেয়েছেন। ৭৩৫ টি মেডিকেল ইউনিট রাখা হয়েছে। ১৯৩২ কোভিড বেড ক্যাপাসিটি রয়েছে। সব মিলিয়ে গঙ্গাসাগর মেলা হওয়ার পক্ষেই আদালতে সওয়াল করেছে রাজ্য সরকার।
নোনা জলে করোনা হয় না:
‘নোনা জলে করোনা ছড়ায় না’, আদালতে গঙ্গাসাগর মেলার পক্ষে এমনই সওয়াল করল রাজ্য। উল্লেখ্য, আদালতে রাজ্যের এই যুক্তিতে অনেকের মনে পড়ছে এক গবেষণামূলক পেপারের কথা। কিছুদিন আগে নভোসিবির্স্কে ভেক্টর স্টেট রিসার্চ সেন্টার অফ ভাইরোলজি অ্যান্ড বায়োটেকনোলজিতে গবেষণারত রুশ বিজ্ঞানীরা দাবি করেছিলেন যে, ডিক্লোরিনেটেড বা নোনা জলে করোনাভাইরাস বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। কিছুক্ষণ সক্রিয় থাকতে পারে মাত্র। সেই সময় জলের তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে ভাইরাসের আয়ু। বিজ্ঞানীরা এও জানান, ক্লোরিনেটেড জলেও দ্রুততার সঙ্গে মারা য়ায় ভাইরাস।
রাজ্য কি আদৌ চায় নাগরিকদের বাঁচাতে? আদালতে প্রশ্ন মামলাকারী আইনজীবী
সরকার পক্ষ যখন গঙ্গাসাগর মেলার পক্ষে আদালতে যুক্তি করেছেন, তখন মামলাকারীর আইনজীবী সরাসরি রাজ্যকে কাঠগড়ায় দাঁড় করান। তাঁর অভিযোগ, এর পর প্রশ্ন উঠতে পারে রাজ্য কি আদৌ নাগরিকদের বাঁচতে চায় কিনা। হলফনামায় রাজ্য কত চিকিৎসক আক্রান্ত সেটা সন্তর্পণে এড়িয়ে গিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। বলেন, কে চিকিৎসা করবে?
মেডিকেল হেলথ সার্ভিসেস ডিরেক্টর সহ একাধিক প্রসাশনিক আধিকারিক করোনা আক্রান্ত। সরকার চলবে কী ভাবে? চিকিৎসক ফোরামের পক্ষে অনিরুদ্ধ চ্যাটার্জি জানান, কোভিড হাসপাতালের যেটি সাগরে আছে সেটি ৬০ শয্যার এবং ১১ জন চিকিৎসক নির্ভর। একটা পরিকল্পনা চলছে বানানোর। সেখানে কোভিড হাসপাতালের মতো কিছু নেই। কী ভাবে পালন হবে গাইডলাইন তার পরিকল্পনা নেই বলে জানান তিনি। তিনি এও জানান গণ পরিবহণের অপব্যবহার হবে এই মেলায়।
মাত্র চার অভিনেতার করোনা আক্রান্তের ঘটনায় চলচ্চিত্র উৎসব বন্ধ, আর গঙ্গামেলা?
মামলাকারীর আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী এদিন আদালতে বলেন, মাত্র চারজন অভেনেতার কোভিড হওয়ায় গোটা চলচ্চিত্র উৎসব বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু গঙ্গাসাগর মেলার বেলা কেন অন্য আচরণ করা হচ্ছে। মাত্র পাঁচ লক্ষ মানুষ আসবে বলে আশা করছে। গত বছরে কোভিড পরিস্থিতিতে কত মানুষ এসেছিলেন তা প্রকাশ্যে আনার দাবি করেন তিনি। তিনি এও জানান, মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় কলকাতার সংক্রমণ বাংলাকে ছাপিয়ে গিয়েছে। আর এজি বলছেন ১০০ টি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা আছে! ভ্যাকসিনের পরেও মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। পরীক্ষা ছাড়াই রাজ্য দাবি করছে নোনা জলে কোভিড হয় না!
রাজ্য যা জানাল:
অ্যাডভোকেট জেনারেল যে হলফনামা দেন তার উল্লেখ করেই আইনজীবীরা বলেন ৫৩০ শয্যা বরাদ্দ হয়েছে গঙ্গাসাগরে পূণ্যার্থীদের জন্য। কী ভাবে পাঁচ লক্ষ লোকের জন্য এই সংখ্যক শয্যায় হবে? দীর্ঘ সওয়াল জবাবের পর কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ পরে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে আপলোড করা হবে বলে জানানো হয়।