
কলকাতা: বাঙালি সংখ্যালঘুদের মন বুঝতে কিছুদিন আগেই আলাদা ভাবে সমীক্ষা করেছিলেন তিনি। ছাব্বিশের নির্বাচনের আগে রাজ্যে আরও একটি নতুন দল! ১৫ অগাস্টের পর নতুন দল গড়ার ঘোষণা ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের। জেলা নেতৃত্বের বিরোধিতা করেই নতুন দল গড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন হুমায়ুন। মালদহ, মুর্শিদাবাদ, দুই দিনাজপুর, নদিয়ায় ৫০ আসনে প্রার্থী দেবে হুমায়ুনের দল।
হুমায়ুন স্পষ্ট জানিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ নেই। কিন্তু তাঁর অভিযোগ, নেত্রীর নির্দেশও মানছে না মুর্শিদাবাদ জেলা নেতৃত্ব। হুমায়ুনের বক্তব্য়, “দল করে প্রমাণ করতে চাই চাষ বলদ দিয়েই হয় , ছাগল দিয়ে না।”
TV9 বাংলার এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে হুমায়ুন বলেন, “আমি শুধু মুর্শিদাবাদকেন্দ্রীক দল গড়ব না। মুর্শিদাবাদ, মালদহ, উত্তর দিনাজপুর, নদিয়ার একটা অংশ, ৫০-৫২ সিট নিয়ে দলটা করব।” তাঁর কথায়, “বলদের পক্ষে লোক রয়েছে, নাকি ছাগলের পক্ষে লোক রয়েছে, সেটা একবার ওঁদের চাক্ষুস করানোর দরকার রয়েছে।”
কিন্তু কী নিয়ে ক্ষোভ হুমায়ুনের?
হুমায়ুনের কবীরের সাফ বক্তব্য, নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে তাঁর কোনও ক্ষোভ নেই। ক্ষোভ মূলত জেলা নেতৃত্বকে নিয়ে। এক্ষেত্রে তাঁর নিশানায় ফিরহাদ হাকিম, খলিলুর রহমান, অপূর্ব সরকাররা।
হুমায়ুন বলেন, “যাঁরা সভাপতি রয়েছেন, তাঁরা সমস্যা। কোনও আলোচনা করেননি। কোনও গুরুত্ব আমি পাই না। বিধানসভার ক্ষেত্রে পাই না, ৬২ বছর ধরে যেখানে থাকি, রেজিনগর বিধানসভাতেও গুরুত্ব নেই। আমাদের থেকে যারা অনেক জুনিয়র, অপূর্ব সরকার হোক, কিংবা খলিলুর রহমান তাঁরা গুরুত্ব পাচ্ছেন।”
তাহলে কি বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্ক ভাঙতে চাইছেন?
হুমায়ুনের স্পষ্ট বক্তব্য, “ক্ষমতায় আসবেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রীই। নেত্রীই চতুর্থবারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হবেন। কিন্তু আমি নেত্রীকে এটা অবগত করার জন্য দলটা করব, যে আমার মতো লোকের দরকার হয়তো হবে না, কিন্তু ছাগল দিয়ে যে ধান মাড়া হচ্ছে, তাতে যোগ্য ভোটার সম্মান পাচ্ছেন না। যোগ্য ভোটাররা যাতে সম্মান পান, তারই ব্যবস্থা করব।”
বিশ্লেষকদের বক্তব্য
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, হুমায়ুনের কথায় এটা অন্তত স্পষ্ট, তৃণমূলের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ভোটব্যাঙ্ক এলাকাগুলিতেই লড়াই করবেন হুমায়ুন। উল্লেখ্য, এর আগে, বিজেপির টিকিট নিয়ে আড়াই লক্ষ ভোট পেয়েছিলেন মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে। হুমায়ুন তার ভিত্তিতে মানুষের জনসংযোগ নিয়ে একটি সার্ভে করেছেন। তার ওপর দাঁড়িয়েই নতুন দল গড়ার চিন্তাভাবনা করছেন তিনি।
তৃণমূলের বক্তব্য
আর হুমায়ুনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র জয়প্রকাশ মজুমদারের বক্তব্য, “পিপীলিকা ডানা গজায় মরিবার তরে। এরকম অনেক রাজনীতিবিদদেরই মনে হয়। কারোর ইচ্ছা হলে দল করতেই পারে। বিশেষ করে বিজেপি যদি পিছন থেকে টাকা পয়সা দেয়, তাহলে করতেই পারে। কিন্তু লাভের লাভ কী হবে… সেটা বোঝা যাবে। মানুষের সমর্থনও পাওয়া যায় না।”
‘বিজেপি অর্থ সাহায্য করছে’
কিন্তু কীভাবে মনে হচ্ছে, বিজেপিই পিছন থেকে অর্থ দিচ্ছে? কারণ কিছুদিন আগেই হুমায়ুন কবীর নিজেই স্পষ্ট করেছিলেন, তাঁর সঙ্গে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর কথা হয়। এবিষয়ে তৃণমূল মুখপাত্রের অবশ্য বক্তব্য, “আমার মনে হয় না, কংগ্রেসের এখন সেরকম আর্থিক অবস্থা রয়েছে। বাংলায় তাদের যে রাজ্য দল, তাঁদেরকেই সাহায্য করতে পারছে না, তারপর ভেঙে নতুন করে ওঠা দলকে কীভাবে করবে?”
অধীর চৌধুরী কী বললেন?
আর এই নিয়ে প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, “সংখ্যালঘু উনি মানেই, সংখ্যালঘুরা ওনাকে ভোট দেবেন, এটা ভাবার কারণ নেই। কতবার আমাকে হারানোর জন্য হুমায়ুনকে সামনে রেখে অশান্তি পাকানো, তার প্রেক্ষিতে ৩০ ভাগ হিন্দু ও ৭০ ভাগ সংখ্যালঘু নিয়ে মন্তব্যও করানো হয়েছিল। এখন নেত্রীর মনে হতে পারে, এবার হুমায়ুন কবীর আমার বোঝা হয়ে যাবে, বোঝা নামাতে হবে। তাঁকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। তাই তাঁর মনে হচ্ছে, পাল্টা কিছু করা উচিত।”
তবে কি কংগ্রেস কোনওভাবে সমর্থন করবে হুমায়ুনকে?
প্রশ্নের উত্তরে অধীর বলেন, “মুর্শিদাবাদের যত নেতারা রয়েছেন, খলিলুর রহমানও আমার সময়েই আমার হাত ধরে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন। আমি তাঁকে টিকিট দিইনি বটে। মুর্শিদাবাদের যত দাগা নেতা, মাতব্বর রয়েছে, সব অধীর চৌধুরীর হাত ধরেই তৈরি হয়েছিল। হুমায়ুন যখন কংগ্রেস করত, তখন ওর কথা ভেবেছি।”
তাহলে এই নিয়ে বিজেপি কি বলছে?
বিজেপি নেতা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “দুধেল গাঁই লাথি মারে! কিন্তু হুমায়ুন কবীরের ক্ষেত্রে হয়তো লাথির জোর বেশি হয়ে গিয়েছিল। অদূর ভবিষ্যতে সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী, কাশেম সিদ্দিকি, সবাই আলাদা দল করবেন। পরবর্তীকালে ববি হাকিমও আলাদা দল করবেন।” বিজেপি অর্থ দিয়ে হুমায়ুনকে দল গড়তে সাহায্য করছে কিনা, সে প্রসঙ্গে বলেন, “রাজ্য সরকারের হাতে তো সমস্ত তদন্তকারী সংস্থা রয়েছে, তারা তো তদন্ত করে বার করুক। মুখে বললে হবে না।”