চার মাস পর ছেলে ফিরল সাদা কাপড়ে মুড়ে, থেকে থেকেই জ্ঞান হারাচ্ছেন মা

Post Poll Violence: ভোটের দিন বিকেলেই পিটিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে কাঁকুড়গাছির অভিজিৎ সরকারকে। গলায় পেঁচানো ছিল তার।

চার মাস পর ছেলে ফিরল সাদা কাপড়ে মুড়ে, থেকে থেকেই জ্ঞান হারাচ্ছেন মা
অভিজিৎ সরকারের দেহ পেল পরিবার। ছবি মৃণ্ময় চক্রবর্তী।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 09, 2021 | 3:23 PM

কলকাতা: সাড়ে চার মাস পর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হল বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকারের দেহ। আদালতের নির্দেশে অবশেষে বৃহস্পতিবার এই দেহ হস্তান্তর হয়। এনআরএস হাসপাতাল থেকে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বিজেপির সদর দফতরে। সেখান থেকে নিথর দেহ পৌঁছয় অভিজিতের বেলেঘাটার বাড়িতে। ছেলের দেহ পৌঁছতেই বুক ফাটা কান্নায় ভেঙে পড়েন মা। সাদা কাপড়ে ঢাকা ছেলের মুখটুকু দেখতে না পারলেও চিরকালীন এক বিচ্ছেদের যন্ত্রণায় মুহূর্তে জ্ঞান হারান মা। জ্ঞান ফিরতেই ফের সন্তান হারানোর যন্ত্রণায় আকুলি বিকুলি শুরু হয় মায়ের।

ভোটের দিন বিকেলেই পিটিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে কাঁকুড়গাছির অভিজিৎ সরকারকে। গলায় পেঁচানো ছিল তার। পরিবারের দাবি, বিজেপি করার অপরাধেই খুন করা হয় তাঁকে। তারপর থেকে বিচারের আশায় থানা, আদালত সর্বত্রই ছুটেছে পরিবার। ভোটের পর রাজনৈতিক হিংসার পুরো তদন্তভার এখনও সিবিআই-এর হাতে।

তদন্তের স্বার্থে এতদিন অভিজিতের দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি। পরিবারও নিশ্চিত ছিল না এ দেহ তাদের ছেলেরই কি না। তবে অবশেষে ময়না তদন্ত ও ডিএনএ রিপোর্টের পরীক্ষা করে আদালত জানিয়েছে, চার মাস ধরে লাশকাটা ঠান্ডা ঘরে যে দেহটা পড়েছিল, ওটা কাঁকুরগাছির ছেলেটারই। অভিজিৎ সরকারেরই। সেই দেহ বৃহস্পতিবার শহরের অলি গলি ঘুরে পৌঁছবে শ্মশানে।

এদিন এনআরএসে মৃতদেহ পেতে বেশ কিছুটা বেগ পেতে হয় বলে অভিযোগ তোলেন অভিজিৎ সরকারের পরিবারের লোকজন। এ নিয়ে এনআরএস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কিছুটা উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ও হয় তাদের। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিও হয় বলে অভিযোগ। এর পর দেহ পৌঁছয় বিজেপির কার্যালয়ে।

বিজেপি দফতরে অভিজিৎ সরকারের মৃতদেহ শায়িত রাখার জন্য বিশেষ বেদী তৈরি করা হয়েছিল। যদিও শকট থেকে দেহটি নামানো সম্ভব হয়নি। যেহেতু চার মাস ধরে মর্গে দেহ পড়েছিল, ফলে তা নামানো সহজ হয়নি। দিলীপ ঘোষ, সায়ন্তন বসুরা শকটের সামনেই শ্রদ্ধা জানান। মুরলীধর সেন লেনে দাঁড়িয়ে অভিজিৎ সরকারের দাদা বিশ্বজিৎ সরকার বলেন, “এই লড়াই এখনও চলছে। বাড়িতে মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে যাচ্ছে।”

এদিন দলীয় কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বিস্ফোরক অভিযোগ , “এই দেহ যাতে আমাদের হাতে না আসে, দেহ যাতে নষ্ট হয়ে যায় সে কারণে দেহতে কোনও কেমিক্যাল দেওয়া হয়নি। ফেলে রাখা হয়েছে। নষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রমাণ নষ্ট করার চেষ্টা হয়েছে। প্রথমবার ময়না তদন্ত নিয়ে আমাদের সন্দেহ ছিল আমরা আদালতে যাই। আদালত রায় দেয়। দ্বিতীয়বার ময়না তদন্ত করতে এক মাস লাগিয়ে দিয়েছে। তারপরও দেহ সংরক্ষণ করা হয়নি। তার পর দেহ ছাড়তে এতদিন সময় লাগল। বিজেপি যাতে দলীয় কর্মীকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে না পারে  সেই চেষ্টাও করেছে।”

অন্যদিকে বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু বলেন, “পিটিয়ে পিটিয়ে মারা হয়েছে ছেলেটাকে। দোষীরা যেদিন শাস্তি পাবে বলতে পারব বিচার পেল। পশ্চিমবঙ্গে এমন একটা সরকার চলে যাদের সামান্যতম মায়া দয়া নেই। চার মাস দেহ ফেলে রাখল। এখন সিবিআই তদন্ত করছে বলে সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছে।”

আরও পড়ুন: ফের ভোটের বাদ্যি বাংলায়, পুজোর আগেই আরও এক উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা কমিশনের