
কলকাতা: চাকরিহারাদের আন্দোলনকে ‘ধ্বংসাত্মক’ অ্যাখ্যা দিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। সঙ্গে এও বললেন, চাকরিহারারা নিজেরাই ঠিক করুন, তাঁরা সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন নাকি ‘প্রোভোকেশনে পা দিয়ে ধ্বংসাত্মক আন্দোলেন নামবেন?’ শিক্ষামন্ত্রীর প্রশ্ন, “মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসের পরও প্রতিবাদের প্রশ্নটা আসছে কোথা থেকে? সহযোগিতার কোনও অভাব হচ্ছে কি? তাঁরা তো সরকারের থেকে সহযোগিতাও চাইছেন। একটু ধৈর্য্য না ধরার কী রয়েছে?” কারা সত্যি সঙ্গে রয়েছে, সেটা চাকরিহারাদেরই বুঝতে হবে বলে বললেন শিক্ষামন্ত্রী। চাকরিহারাদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রীর পরামর্শ, “আজকের আচরণ স্পষ্ট বলে দিচ্ছে একটিই কথা, তুমি সর্প হয়ে দংশন করো, ওঝা হয়ে ঝাড়ো। তুমি ওঝারূপী সর্পকে বিশ্বাস করবে, না সরকারকে বিশ্বাস করবে, তোমার ব্যাপার।”
বুধবার চাকরিহারাদের ডিআই অফিস অভিযান ছিল। জেলা থেকে রাজপথে আছড়ে পড়ে চাকরিহারাদের ক্ষোভ। তবে কসবায় ধরা পড়ে বাংলার সবথেকে বড় বিপন্নতার ছবি। চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের লাঠিচার্জ করছে পুলিশ! কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি? কেন চাকরিহারারা ডিআই অফিস অভিযানে নামলেন? তা নিয়েই প্রশ্ন তুললেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য, “নেতাজি ইন্ডোরে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা দেওয়ার পর তাঁদের নেতৃস্থানীয়দের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আইনিভাবে কীভাবে যোগ্য শিক্ষকদের চাকরি ফেরত দেওয়া যায়, ওদের নেতৃত্বের সঙ্গে সে বিষয়েই কথা হবে। কবে আসবেন, সেই তারিখও ঠিক হয়ে গিয়েছে। সেই বৈঠকে থাকবেন এসএসসি-র চেয়ারম্যানও, পুরো কমিটি থাকবে। বিভাগীয় সচিব থাকবেন। বসে একটা সুরাহা, দাবি শোনার কথা। কিন্তু তারপরও কেন ডিআই অফিস অভিযান?”
শিক্ষামন্ত্রীর পাল্টা প্রশ্ন, “যে সরকারের কাছে দাবি নিয়ে তাঁরা আসছেন, শিক্ষা দফতর সাহায্য করছে, এসএসসি সাহায্য করছে- তাহলে কীসের প্রতিবাদ? কীসের আন্দোলন? আন্দোলন দেখানোর তো দিন রয়েছে। সেটা এমন পন্থায় নিয়ে যেতে হবে, যে সরকারই যাতে হাত তুলে না নেয়!”
তবে শিক্ষামন্ত্রী এটাও স্পষ্ট করে দেন, যে কোনও ধরনের উস্কানি, উত্তেজনার মধ্যেও সরকার চাকরিহারাদের পাশে রয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “তালা ভাঙুন, অন্য কোনও উস্কানি দিন, তবে একটাই বলব সরকার পাশে আছে। কোনও উস্কানিতে পা না দিয়ে সংবরণ করা উচিত। ওরাই আমাদের সঙ্গে বসতে চাইছে, আবার একটা ধ্বংসাত্মক আন্দোলনের দিকে যাচ্ছে? তবুও বলব আমরা সাহায্য করতে বদ্ধপরিকর।
শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, কোনও স্কুলে টারমিনেশন লেটার নেই। আমরা পোর্টাল আপডেট করব। ওনারা আশঙ্কা করছেন। হয় আন্দোলন করুন, নয়তো আলোচনা করুন। ওরা যে কোনও পন্থা নিতে পারে, আমরা শান্ত ভাবে, মানবিকভাবে সাহায্য করতে বদ্ধপরিকর।”
উল্লেখ্য, গত সোমবারই নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে চাকরিহারাদের একাংশের সামনে বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রীকে। তাঁদের জন্য বিকল্প পথ খোঁজার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। সরকার সুপ্রিম কোর্টের কাছে পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়েছে। কিন্তু আপাতত শিক্ষকদের স্বেচ্ছাশ্রম দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। দু’মাস পুষিয়ে দেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন মমতা। কিন্তু ‘স্বেচ্ছাশ্রম’, ‘পুষিয়ে দেওয়া’ এই শব্দবন্ধগুলোতেই আপত্তি রয়েছে চাকরিহারা শিক্ষকদের।