British rule in India: ভারত থেকে কিছুই লুঠ করেনি ব্রিটিশরা?
British rule in India: সূত্রের খবর, ব্রিটিশরা কোথা থেকে কী, কী লুঠ করেছিল, তার রাজ্যভিত্তিক একটা তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। এত পরিশ্রম করে তালিকা তৈরির কারণ? ওই গবেষকরা আসলে ওইসব জিনিস দেশে ফিরিয়ে আনতে চান। তাঁরা চান, ভারত এ নিয়ে ব্রিটেনের উপর চাপ বাড়াক।
কলকাতা: কয়েকদিন আগে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ব্রিটিশ ঐতিহাসিক একটি ভাষণ দিয়েছেন। সেখানে তাঁর দাবি, ভারত থেকে ব্রিটিশ সরকার তেমন কোনও আর্থিক সুবিধা নেয়নি। বরং ভারতে প্রশাসনিক খরচ চালাতে ব্রিটেনের কোষাগার থেকে বহু টাকা বেরিয়ে গিয়েছে। মানে ব্রিটিশ নাগরিকদের করের টাকায় ভারত চলত। ১৮৫৭ সাল থেকে ব্রিটেন কত টাকা ভারতে পাঠিয়েছিল, সে নিয়ে আনুমানিক হিসাবও দিয়েছেন অক্সফোর্ডের ওই ইতিহাসবিদ। তবে, ভারত থেকে সেই সময়ে কত টাকা ব্রিটেনে পাঠানো হয়েছিল সে হিসাবটা কিন্তু তিনি দেননি।
তথ্য বলছে, ১৮৫৭ থেকে ১৯৩৯-এই ৮২ বছরে প্রায় ২৫ ট্রিলিয়ন ডলার ভারত থেকে ব্রিটেনে পাঠানো হয়। এর কিছুটা লুঠ করা সম্পদ আর বাকিটা করের টাকা। ২৫ ট্রিলিয়ন ডলার অঙ্কটা কত বড়? আমেরিকার জিডিপি-র অন্তত ১০ গুণ। কয়েক বছর আগেই অর্থনীতিবিদ উত্সা পট্টনায়েক হিসাব কষে দেখিয়েছিলেন, ১৯০ বছরে ভারত থেকে ৪৫ ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ লুঠ করেছিল ব্রিটিশ সরকার। এর একটা অংশ টাকা আর সোনা। আরেকটা অংশ নানা প্রাচীন শিল্পকীর্তি। সবমিলিয়ে, আড়াই হাজারের বেশি বিরল সামগ্রী এবং শিল্পকীর্তি ভারত থেকে লুঠ করেছে ব্রিটেন। এর অর্ধেকই এমন বিরল ও দুষ্প্রাপ্য যে তার দাম নির্ধারণ করাই সম্ভব নয়। এমন আটশোর বেশি শিল্প সামগ্রী ও ঐতিহাসিক নিদর্শনের তালিকা তৈরি হয়েছে। আর সেটা তৈরি করেছেন এদেশেরই একদল গবেষক। বহু নথিপত্র, ঐতিহাসিক দলিল-দস্তাবেজ খুঁজে নানা অজানা তথ্য তুলে এনেছেন তাঁরা।
সূত্রের খবর, ব্রিটিশরা কোথা থেকে কী, কী লুঠ করেছিল, তার রাজ্যভিত্তিক একটা তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। এত পরিশ্রম করে তালিকা তৈরির কারণ? ওই গবেষকরা আসলে ওইসব জিনিস দেশে ফিরিয়ে আনতে চান। তাঁরা চান, ভারত এ নিয়ে ব্রিটেনের উপর চাপ বাড়াক। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হোক কেন্দ্র। তাঁদের আশা যে সবগুলি না হলেও চাপের মুখে কিছু জিনিস ফেরাতে অবশ্যই বাধ্য হবে ব্রিটেন। তো সেই তালিকায় কী, কী রয়েছে? অনেক লম্বা লিস্ট। তবু কয়েকটা জিনিসের কথা বলতেই হচ্ছে। টিপু সুলতানের হিরের সিংহাসন, সোনার মুকুট, শাহজাহানের হিরের ব্যক্তিগত বাসন, সোনার পানপাত্র, পাঁচশোর বেশি তৈলচিত্র, সোনার হনুমান মূর্তি, আট ট্যাঙ্ক ভর্তি সোনার মুদ্রা, সুলতানি যুগের মুদ্রা আরও অনেক কিছু। সঙ্গে বাংলা থেকে লুঠ করা ৫০টির বেশি ব্যক্তিগত সম্পদ। এসবই কয়েকশো বছর ধরে ব্রিটেনের মিউজিয়াম বা রাজপরিবারের কোষাগারে রাখা আছে। বেশকিছু জিনিস আবার কর্পোরেট সংস্থা ও নিলাম সংস্থাকে বিক্রিও করে দিয়েছে ব্রিটেন। এসবের কিছু কিছু ভারত যে এর আগে ফেরত আনতে উদ্যোগী হয়নি এমন নয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। এবার কি সেই ছবিটা বদলাবে? অনেকেই কিন্তু এ বিষয়ে আশাবাদী। কারণ এইবার ভারত একা নয়। ভারতের সঙ্গে আছে আরও এক ডজন দেশ। মানে কমনওয়েলথের সদস্য দেশগুলি। এই দেশগুলি সকলে মিলে ৫০০ লক্ষ কোটি টাকার বিল পাঠাচ্ছে ব্রিটিশ সরকারের কাছে।
কমনওয়েলথের নতুন সেক্রেটারি জেনারেল দায়িত্ব নেওয়ার পরে ব্রিটেনের থেকে ৫০০ লক্ষ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চাইতে পারে অধিকাংশ সদস্য দেশ। ব্রিটেন তার কলোনি দেশগুলো থেকে যে সম্পদ লুঠ করেছে, তার একটা আনুমানিক হিসাব এই ৫০০ লক্ষ কোটি। ৫০০ লক্ষ কোটি মানে ব্রিটেনের জিডিপির বহু, বহু গুণ। আর এর একটা বড় অংশই ভারতের। কারণ ব্রিটেনের কলোনিগুলোর মধ্যে ভারতই ছিল সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী। ভারতের পাওনা হতে পারে প্রায় আড়াইশো লক্ষ কোটি টাকা। কয়েকদিন পরেই ২১ অক্টোবর থেকে কমনওয়েলথে সেক্রেটারি জেনারেল পদে ভোটাভুটি শুরু হবে। যিনিই সেক্রেটারি জেনারেল হোন না কেন, প্রথম বৈঠকেই ব্রিটেনের কাছে এই বিল পাঠানোর প্রস্তাবটা তোলা হবে। সোজা কথায় গত সাত-আট দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় ফাঁড়া ব্রিটেনের ভাগ্যে নাচছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সম্ভবত ব্রিটেনের কাছে এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, মত ওয়াকিবহাল মহলের বড় অংশের।