
কলকাতা: ‘পুরনো চাল ভাতে বাড়ে’। এই প্রবাদ বাক্যটি গত কয়েকদিনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে বহুবার বঙ্গ রাজনীতিতে উঠে এসেছে। বারবার দলের ‘সিনিয়র’দের হয়েই মুখ খুলেছেন তিনি। আরও একবার উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গা থেকে সেই বার্তাই উঠে এল। নবীন-প্রবীণের দ্বন্দ্বে তৃণমূলের একটা বড় অংশ যখন জর্জরিত, প্রকাশ্যে যখন দলের সিনিয়রদের ‘কেশের পাক’ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন নবীনরা, সেখানে দাঁড়িয়ে ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আবহে তৃণমূল সুপ্রিমোর এই বার্তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্ব সমাজের হেন কোনও স্তর নেই, যেখানে নেই। বাড়ি হোক বা অফিস, পাড়ার ক্লাব হোক বা রাজনৈতিক দল, বয়স বাধ সাধবেই। তবে তৃণমূলে এই বয়সের খোঁচা টানা চলছে। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এক অনুষ্ঠানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি না থাকায় বলেছিলেন, “তৃণমূল যেন সিপিএম না হয়ে যায়। যতক্ষণ না কেউ দেহত্যাগ করবে, ততক্ষণ পদত্যাগ করবে না। বয়স মানে রাজনীতি করুন। তবে রাজনীতি করতে গেলে বিধায়ক-সাংসদ হতে হবে এটা কোন দেশের রাজনীতি?”
এর পরপরই বয়স সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে দলের তরুণ তুর্কিদের মুখ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “দলে প্রবীণদের প্রয়োজন। তবে বয়সের ঊর্ধ্বসীমাও থাকা দরকার।” এ ধরনের কথার ‘গুঁতো’র প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে আবার সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়দের বলতে শোনা গিয়েছিল, দলনেত্রী যা বলবেন মেনে নেবেন। তবে নিয়ম সকলের জন্যই এক হওয়া বাঞ্ছনীয় বলে জানিয়েছিলেন ৭৪ বছর বয়সি এই তৃণমূল সাংসদ।
তবে রাজনীতির কারবারিরা বলেছেন, দেগঙ্গা থেকে তৃণমূল নেত্রী স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন, পুরনো সৈনিকদের প্রতি আস্থা এখনও তাঁর অটুট। মমতা বৃহস্পতিবার বলেন, “বারবার বলছি, পুরনো চাল ভাতে বাড়ে, আর নতুন চাল আগে বাড়ে। দু’টো চালই আমার দরকার। পুরনোদেরও দরকার, নতুনদেরও দরকার।” অর্থাৎ ‘পক্ককেশে’ নজর না দিয়ে একসঙ্গে সকলে ঝাঁপিয়ে ২৪-এর বৈতরণী পারেরই বার্তা দলের নেত্রীর।
নবীন আর প্রবীণের মেলবন্ধন। নাকি নবীনদের জায়গা ছেড়ে দেওয়া। রাজনীতির এই দ্বন্দ্বের মধ্যেই তৃণমূল সুপ্রিমোর এই মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা।