
কলকাতা: বিশ্বজুড়ে ৬০ হাজারের বেশি পেশাদার কোচ রয়েছে তাদের। আন্তর্জাতিক সেই সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল কোচিং ফেডারেশন (ICF) পূর্ব ভারতে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক স্পর্শ করল। ICF অনুমোদিত স্কুল ‘আর্ট টু লিড- কোচেজ়ি’-র উদ্যোগে কলকাতায় সফলভাবে আয়োজিত হল কোচিং কনক্লেভ ২০২৫। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে আইসিএফের নেটওয়ার্ক। পূর্ব ভারতে বিশেষত কলকাতা এবার সেই নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হল।
টালিগঞ্জ ক্লাবের বালমার লরি হল-এ অনুষ্ঠিত এই কনক্লেভের নেতৃত্ব দেন কোচেজ়ি কোচ এডুকেশন ও আর্ট টু লিড-এর সিইও এবং ICF কলকাতা চ্যাপ্টারের সভাপতি শার্মি রায়। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন দুই দশকেরও বেশি নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিশিষ্ট পেশাদাররা। ওই পেশাদাররা ক্যাপজেমিনি, কগনিজ্যান্ট, অ্যাকসেঞ্চার, ভেসুভিয়াস, ভোডাফোন, টাটা স্টিল-সহ বিভিন্ন বিখ্যাত সংস্থার সঙ্গে যুক্ত।
কোচিং পেশার ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে শার্মি রায় বলেন, “এক দশকেরও বেশি সময় আগে ইংল্যান্ডে কাজ করার সময় আমি কোচিং-এর ব্যাপক বৃদ্ধি লক্ষ্য করি। তখনই বুঝেছিলাম, এই ধারণা আমাকে কলকাতায় নিয়ে আসতেই হবে। আমি উপলব্ধি করি, একটি স্থানীয় কোচ ডেভেলপমেন্ট স্কুল এবং একটি স্থানীয় ICF চ্যাপ্টার পূর্ব ভারতে কোচদের একটি শক্তিশালী কমিউনিটি গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। গত বছর এটি শুরু হয়েছিল BCC&I-তে, বালমার লরির সহযোগিতায়। এ বছর কলকাতা চ্যাপ্টার আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হওয়ার পর মানুষ এই পেশা সম্পর্কে আরও সচেতন হচ্ছেন এবং বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত পদ্ধতির মাধ্যমে সমাজ ও মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার বিশাল সম্ভাবনা দেখছেন।”
পেশাদার কোচ হওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে শার্মি রায় জানান, একজন কোচ হতে হলে কঠোর প্রশিক্ষণ ও সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এই ক্ষেত্রে নিজেকে ‘স্বঘোষিত কোচ’ বলা গ্রহণযোগ্য নয়।
ক্লায়েন্টরা কীভাবে একজন যোগ্য কোচ নির্বাচন করবেন? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ICF-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে থাকা ‘Find a Coach’ ডিরেক্টরির মাধ্যমে স্বীকৃত কোচদের খোঁজা যায়। শুধুমাত্র ICF অনুমোদিত কোচরাই এই ডেটাবেসে তালিকাভুক্ত থাকেন।
নতুন উদ্যোগ ও টিম কোচিং প্রোগ্রামের সূচনা-
এই কনক্লেভে ICF-এর নতুন স্বীকৃত প্রোগ্রাম ‘টিম কোচিং’-এর আনুষ্ঠানিক সূচনাও হয়। আয়োজকদের মতে, ভবিষ্যতে এই প্রোগ্রামটি কোচিং জগতে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হয়ে উঠবে।
দিনভর বিভিন্ন প্যানেল আলোচনায় শিল্পজগতের বিশিষ্ট নেতারা ব্যক্তিগত স্তরের ছোট ছোট পরিবর্তন কীভাবে দল, সংস্থা এবং বৃহত্তর সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, এমনকি অস্থিরতার সময়েও তাই নিয়ে আলোচনা করেন। প্রথম প্যানেলটি পরিচালনা করেন দেবলীনা রায় (জিএম, ভোডাফোন ও ডিরেক্টর অব মেম্বারশিপ, ICF কলকাতা)। আলোচনায় অংশ নেন, দেবস্মিতা বসু (জিএম এইচআর, এভারেডি), শ্রুতি ধুপিয়া (এইচআর ও লিডারশিপ কনসালট্যান্ট) এবং ড. জগদীশ কুন্ডু (লেখক, Your Child’s Career in the AI Age)
পরবর্তী প্যানেল আলোচনায় শার্মি রায়ের সঞ্চালনায় অংশ নেন টি ভি শ্রীনিবাস শেনয় (এক্সিকিউটিভ ইনচার্জ, টাটা স্টিল লিমিটেড), চরণপ্রীত সিং। এখানে সংস্থার ভেতরে কোচিং-এর ভূমিকা ও প্রভাব নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। এরপর কমিউনিটি কোচিং প্রসঙ্গে মতামত দেন ড. মধুপা বকশি (ডিন, মিডিয়া সায়েন্স, হেরিটেজ), ড. সুচন্দ্রা রুদ্র (A View for Women)। কনক্লেভের শেষে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সেবায় কাজ করতে আগ্রহী কোচরা তাঁদের ভবিষ্যৎ ভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গি ভাগ করে নেন।