কয়লা-কাণ্ড: হাতে ‘রক্ষাকবচ’, তদন্তে অসহযোগিতা, কোন পথে এগোচ্ছেন লালা?

গত বছরের শেষের দিকে শুরু। তারপর কয়লা-কাণ্ডের (Coal Scam) জল গড়িয়েছে অনেক। কেঁচো খুঁড়তে কেউটেও বেরিয়েছে।

কয়লা-কাণ্ড: হাতে 'রক্ষাকবচ', তদন্তে অসহযোগিতা, কোন পথে এগোচ্ছেন লালা?
Follow Us:
| Updated on: Apr 08, 2021 | 4:33 PM

বাংলা নির্বাচনের ঠিক আগে এ রাজ্যে সামনে আসে নতুন কেলেঙ্কারি। অবৈধভাবে কয়লা পাচার করে উঠত কোটি কোটি টাকা। আর সেই টাকা প্রভাবশালীদের অ্যাকাউন্টে যেত বলেও জানা যায়। কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে আসে একের পর এক নাম। আইএএস, আইপিএসদের মদত ছিল বলে জানতে পারেন গোয়েন্দারা। জানা যায়, এই পাচারের মাথা অনুপ মাঝি ওরফে লালা। সামনে আসে খোদ সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়েক স্ত্রীর নামও। আপাতত সিবিআই দফতরে জেরার মুখোমুখি হলেও শীর্ষ আদালতের রক্ষকবচে নিশ্চিন্তেই রয়েছেন লালা। কয়লার পাশাপাশি গোরু পাচার নিয়েও চলছে তদন্ত। তাতেও অস্বস্তিতে আছে শাসক দল।

সিবিআই তল্লাশি:

লালাকে তখনও হাতে পাননি গোয়েন্দারা। তাঁর সূত্র খুঁজে পেতেই একের পর এর জায়গায় তল্লাশি চালাতে শুরু করেন তাঁরা। বিশেষত লালা ঘনিষ্ঠদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ চালান তাঁরা। জয়শ্রী গ্রুপের অনুপ আগরওয়াল ওরফে সোনু নামে এক ব্যবসায়ী চলে আসেন সিবিআইয়ের স্ক্যানারে। অন্ডাল থেকে লালা ঘনিষ্ঠ রণধীর সিংকে গ্রেফতার করা হয়, এটাই কয়লা-কাণ্ডের প্রথম গ্রেফতারি। বারাণসীতেও অভিযান চালায় সিবিআইয়ের একটি দল। লালার ২৫টি হিসেবের খাতা আসে সিবিআইয়ের হাতে। আসানসোল, জামুড়িয়া-সহ সাত জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে এই নোটবুকগুলি খুঁজে পায় সিবিআই। ২০১৫ সালের ব্যবসার হিসেব খুঁজে পাওয়া যায় সেখানে। কয়লাকাণ্ডে সমান্তরালভাবে তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই ও ইডি। রাজ্য তোলপাড় করে চলছে তল্লাশি।

রুজিরা-যোগ:

কয়লা-কাণ্ডে সামনে আসে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরা নারুলার নাম। তাঁর দরজায় পৌঁছে যায় সিবিআই। বাড়িতে বসে দেড় ঘণ্টা রুজিরাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিবিআই কর্তারা। বিদেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, আর্থিক লেনদেন নিয়ে প্রশ্ন করা হয় তাঁকে।

‘পলাতক বিনয় মিশ্র:

বিনয় মিশ্রকে পাওয়া যায়নি, তবে তাঁর ভাই বিকাশ মিশ্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দিল্লি থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। একাধিকবার বিকাশকে জেরা করে সিবিআই। তাঁকে জেরার পর পরই রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায় নারুলা ও অভিষেকের শ্যালিকা মেনকা গম্ভীরকে নোটিস পাঠানো হয়। জানা যায়, লালার কয়লা পাচারের টাকা মূলত বিনয় মিশ্রের হাত ধরে প্রভাবশালীদের হাতে পৌঁছত। আর সেই টাকা লেনদেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতেন বিনয়ের ভাই বিকাশ।

রুজিরাকে জেরা বা বিকাশ মিশ্রকে গ্রেফতার করা হলেও তখনও লালার দেখা পায়নি সিবিআই। গত বছর থেকেই নোটিস দেওয়া হচ্ছিল তাঁকে। কিন্তু ধরা দিচ্ছিলেন না মূল চক্রী। পরে সশরীরে হাজির হন তিনি। একনজরে লালার গতিবিধি

৭ ডিসেম্বর, ২০২০

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা তখন হণ্যে হয়ে খাঁজছে তাঁকে। পরপর তিনবার নিজাম প্যালেসে হাজিরার নির্দেশও গিয়েছে তাঁর কাছে। বিকাল ৩টে পর্যন্ত তাঁর জন্য অপেক্ষা করার পর ফোনে যোগাযোগ করেন লালা। ৩ দিন সময় চেয়ে নেন লালা।

২৫ মার্চ, ২০২১

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক্তিয়ারকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যান অনুপ মাজির ওরফে লালার আইনজীবী। আদালতের নির্দেশে রক্ষাকবচ দেওয়া হয় লালাকে। জানিয়ে দেওয়া হয় ৬ এপ্রিল পর্যন্ত অনুপ মাজি ওরফে লালাকে গ্রেফতার করা যাবে না।

৩০ মার্চ, ২০২১

সুপ্রিম কোর্টের রক্ষাকবচ পাওয়ার পরই সিবিআই দফতরে প্রথমবার হাজির হলেন লালা। গ্রেফতার করা যাবে না বলেই সহজে হাজিরা দিলেন তিনি। সকাল সাড়ে ১০টা ৫০ নাগাদ নিজাম প্যালেসে এসে পৌঁছলেন কয়লা পাচার চক্রের মাথা। সাড়ে ৭ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাঁকে। কিন্তু সন্তুষ্ট নয় সিবিআই।

৩ এপ্রিল, ২০২১

আবারও সিবিআই দফতরে কয়লা-কাণ্ডের কিংপিন। এটা তৃতীয় দিন। এ দিন পুরুলিয়ার প্রাক্তন পুলিশ সুপার এস সেলভামূর্গানও হাজিরা দেন।

৫ এপ্রিল, ২০২১

বার তিনেক জেরা করা হয়ে গিয়েছে লালাকে। এ দিন ফের হাজির তিনি। গোয়েন্দাদের কড়া কড়া প্রশ্নের মুখোমুখি। আর জেরা শেষ হওয়ার পরই অনুপ মাজি ওরফে লালার ১৬৫.৮৬ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ফেলে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। এদিন তলব করা হয়েছিল রঘুনাথপুরের এসডিপিও-কেও।

৬ এপ্রিল, ২০২১

রক্ষাকবচ ছিল ৬ এপ্রিল পর্যন্ত। তারপরই তাঁকে গ্রেফতার করার জন্য গোয়েন্দারা তোড়জোড় শুরু করেন। কিন্তু ৬ এপ্রিল বাড়ানো হল রক্ষাকবচ। ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত তাঁকে গ্রেফতার করতে পারবে না কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।

৮ এপ্রিল, ২০২১

পঞ্চমবার সিবিআই দফতরে হাজির হলেন লালা। সঙ্গে ডাকা হয়েছে গুরুপদ মাজিকেও। তাঁদের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হতে পারে জানা গিয়েছে। সাদানো হয়েছে একগুচ্ছ প্রশ্ন।

বিস্তারিত পড়ুন : ‘তৃণমূলকে ভোট না দিলে উচ্ছেদ করে দেব’, নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে হুমকি গৌতম দেবের