Buddhadeb Bhattacharjee: বুদ্ধবাবু বললেন, ‘তোমার বাবা আমাকে খুব টর্চার করেছেন…’

Aug 09, 2024 | 8:40 PM

Buddhadeb Bhattacharjee: যেদিন সিঙ্গুরের জমি নিয়ে নোটিফিকেশন বেরোল, রাতের মধ্যে হাজারটা অবজেকশন এসেছিল। অনিচ্ছুকদের সেই চিঠি। এটা অগস্টেই। এরপর তো আরও সময় গিয়েছে। তখন ভেবেছিল, ২৩৫ তো, ম্যানেজ করে দেব। এররিং জাজমেন্ট আর আমলাদের প্রতি অতি নির্ভরশীলতায় এমনটা হয়েছিল। আসলে আমলারা তো আমলাদের মতো করেই দেখবেন। পার্টির মতো তো দেখবেন না।

Buddhadeb Bhattacharjee: বুদ্ধবাবু বললেন, তোমার বাবা আমাকে খুব টর্চার করেছেন...
বৃহস্পতিবারই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বুদ্ধদেব
Image Credit source: TV-9 Bangla

Follow Us

(বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে কাছ থেকে দেখা এবং উপলব্ধি করার সুযোগ যে কয়েকজন পেয়েছেন তার মধ্যে অন্যতম সাংবাদিক অনির্বাণ চৌধুরী। বুদ্ধ প্রয়ানের পর টিভি-৯ ডিজিটালে কলম ধরলেন সেই তিনিই।)

অনেকেই বলছেন বুদ্ধদেববাবু ট্র্যাজিক হিরো। আবার অনেকে নানা সম্মান বা অভিধাতে ভূষিত করছে। তবে আমার কাছে বুদ্ধবাবু একজন স্বপ্নের ফেরিওয়ালা, যিনি নিজের চোখের সামনে নিজের স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটতে দেখেছেন। সে অর্থে তিনি ট্র্যাজিক হিরো। তবে ট্র্যাজিক কি ট্র্যাজিক না, হিরো কি হিরো নন, সেটা শেষ বিচারে তর্কের বিষয়। আজকের দিনে সেটা আলোচনার বিষয়ই নয়। তবে আমরা যখন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে দেখেছি তখন আমরা তরুণ। সবে মাত্র বুদ্ধবাবু মন্ত্রিসভায় এসেছেন, আমাদেরও পেশা-প্রবেশ ঘটেছে। ১৯৮৭ হবে। তখন প্রবল পরাক্রমশালী একটা বামফ্রন্ট সরকার। সেখানে প্রবল প্রতাপশালী মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু।

আমরা তখন নবীন রিপোর্টার। রাইটার্স বিল্ডিংয়ে খুব একটা যাওয়ার সুযোগ পেতাম না। সেখানে যাওয়া মানে আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে যাওয়া। সিনিয়ররা অসুস্থ হলে মাঝেমধ্যে আমরা যেতাম। সেই যাওয়ার ভিত্তিতে প্রথম প্রথম যা দেখেছি তাতে বুদ্ধবাবু আর জ্যোতিবাবুকে ভিন্ন মেরুর বাসিন্দা বলে মনে হয়েছে। আমার মতে জ্যোতি বসু একজন ‘ডিটাচড ইন্ডিভিজুয়াল’। কোনও খারাপ অর্থে নয় কিন্তু এটা। আসলে তিনি আমলা বা পার্টির শীর্ষ স্থানীয়দের সাহচর্যে বেশি স্বচ্ছন্দ্য।

খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু না থাকলে, জ্যোতি বসুকে রিপোর্টারদের সঙ্গেও কথা বলতে দেখা যায়নি। এসি ঘর থেকে বেরিয়ে নন এসি জ়োনে বেরোনোর পরই পাঞ্জাবির খুটটায় চশমা মুছতে মুছতে লিফ্টে উঠে যেতেন। কোনও প্রশ্ন করলে তার জবাব দেওয়ার প্রয়োজন উনি মনে করতেন না। কশ্চিৎ মুড ভাল থাকলে উত্তর দিতেন।

অন্যদিকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য অনেক বেশি ‘অ্যাপ্রচেবল’। তবে রিপোর্টারদের কাঁধে হাত দিয়ে গল্প করতে করতে বেরোতেন, এমন না। উনি যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, জ্যোতিবাবুর ঘরের আগের ঘরই ছিল বুদ্ধবাবুর। বিকাল চারটে সাড়ে চারটে নাগাদ তিনজন রিপোর্টার অবশ্যই যেতেন। স্টেটসম্যানের মারকাস দাম, উদয় বন্দ্যোপাধ্য়ায়, ইউএনআইয়ের রূপমদা। আলোচনা করতেন। ওনারা বেরোলেই আমরা হইহই করতাম, কী খবর দিলেন? ওনারা বলতেন কিচ্ছু না। নির্ভেজাল আড্ডা দিয়ে এলাম। আড্ডার বিষয় হল ক্রিকেট।

তখন আমি একটা চ্যানেলে। আলিমুদ্দিনে ওনাকে ইন্টারভিউ করতে গিয়েছিলাম। উনি যখন বসছেন ঠিক তার আগে একটা সিগারেট ধরাতে চাইলেন। বললেন, ‘সিগারেটটা খেয়ে নিই….’। আসলে কবিতা, রাজনীতির পর তাঁর তৃতীয় দুর্বলতা যদি কিছু থাকত সেটা বোধহয় ওই সিগারেট। সেই সিগারেটই তাঁর ফুসফুসটাকে ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল।

উনি আমার বাবাকে (প্রখ্যাত সাংবাদিক শ্রী অমিতাভ চৌধুরী) চিনতেন। সেদিন ইন্টারভিউটা শুরু করছি, ‘বুদ্ধবাবু বললেন একটু দাঁড়াও, একটু দাঁড়াও…’। সেদিন দেখেছিলাম অনবরত উসখুশ করছিলেন কোনও একটা ক্রিকেট ম্যাচের স্কোর জানার জন্য। তবে ক্যামেরা অন হতেই কিন্তু একেবারে অন্যরকম। গাম্ভীর্যপূর্ণ চেহারা। পুরোপুরি রাজনৈতিক। কুইয়েন্টেশিয়াল বুদ্ধবাবু। এটাই উনি। খুব আড্ডাপ্রিয় মানুষ ছিলেন।

তবে জ্যোতি বসুও আড্ডা দিতেন। তবে সে আড্ডা জমতো সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের সঙ্গে, রুসি মোদীদের সঙ্গে। এতে দোষ নেই। কারণ লন্ডনে যাঁরা ওনার বন্ধু ছিলেন তাঁদের সঙ্গে আড্ডায় স্বচ্ছন্দ্য ছিলেন। আবার বুদ্ধদেববাবুর ছিল ভিন্ন মহল। তাঁর ফিল্মেও ভীষণ প্যাশন ছিল। তাই নন্দনে নিয়ম করে সন্ধ্যাবেলা যেতেন। আমাদের শহরে ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল হয়ত এখন কলেবরে অনেক বড়। কিন্তু শহরে যে একটা ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল হওয়া দরকার অনুভব করেছিলেন তিনি, এবং উদ্যোক্তাও ছিলেন সেই তিনিই। নন্দনে প্রতিটা ছবি দেখতেন, ইতিহাস জানতে চাইতেন। আবার সাহিত্যচর্চা, মার্কেজের অনুবাদ, মায়াকোভস্কির কবিতা, সবই চলতো।

ওনার মৃত্যুর পরে দেখছি এই যে মানুষের আবেগটা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বেরিয়ে আসছে তা কিন্তু লক্ষ্যনীয়। দেখলাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে বললেন। আসলে রাজনীতিতে তো তাঁরা চরম শত্রু। কিন্তু আজ মমতা যা বললেন তা শুনে আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর মনের কোণেও একটা বিশেষ জায়গায় রয়েছে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আর এটাই সৌজন্য, সৃষ্টিচার এবং রুচিবোধ নিয়ে চলা বুদ্ধবাবুর অর্জন। ভারতবর্ষে একটা ট্রেন্ড আছে, যুযুধান রাজনীতিবিদরা সম্পর্কে শেষ করেন তিক্ততায় নিয়ে গিয়ে। অথচ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন আজ স্মৃতিচারণ করছিলেন, তখন কিন্তু ওনার খারাপ লাগাটা প্রকাশ পাচ্ছিল। সম্ভবত এটাও বুদ্ধদেবের পক্ষেই সম্ভব।  রাজনীতিবিদ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে নিয়ে কী পর্যালোচনা হবে সেটা আলোচনার দিন আজ নয়।

তবে প্রথমেই যেটা বলছিলাম, উনি স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। রিপোর্টার হিসাবে আমরা যেটা দেখেছি, সে সময় মসনদে জ্যোতি বসু। প্রবল প্রতাপশালী বাম সরকার। কিন্তু যতদিন গিয়েছে, বুদ্ধদেববাবুর মতো ভিন্ন ধারার মানুষকে দেখতে থেকেছি। উনি ঘনিষ্ঠমহলে বলেছেন, বেকারত্ব নিয়ে। ওনার স্লোগান হল ‘ডু ইট নাও’। কারণ উনি বুঝতে পেরেছিলেন রাইটার্স বিল্ডিংয়ে কাজ হচ্ছে না। উনি বুঝতে পেরেছিলেন বাবুরা আসেন ১২টায়। ক্যরাম খেলে আড্ডা মেরে ৪টেয় বাড়ি চলে যান। ওনার কথাবার্তায় বেরিয়ে আসত, আমরাও বুঝতাম। উনি তো বলেছেনও, এমন একটা দল করি, যারা বনধ্ করে। স্বপ্নের ফেরিওয়ালার স্বপ্নের অপমৃত্যু এখানেই। ওনার খেদ ছিল, একটা প্রবল পরাক্রমশালী দল হয়েও কেন বেকারত্ব কমানো যাচ্ছে না! কেন চাকরি বাড়ানো যাচ্ছে না!

আজকের দিনে পশ্চিমবাংলার দু’টো জরুরি ইস্যু হল ছেলেমেয়েদের চাকরি, শিল্পায়ন ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির কর্মক্ষমতা বাড়ানো। এগুলি তিনিও অনুভব করেছিলেন। এ নিয়ে কাজও করতে চেয়েছিলেন। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামটা যদি ধরি। সিঙ্গুর ২০০৬ সাল। ২৩৫ সিট নিয়ে এলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। শপথ নিয়েই রতন টাটার সঙ্গে মিটিং। মে, জুন, সেপ্টেম্বর সিঙ্গুরে অশান্তি শুরু। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধরনা। নন্দীগ্রাম শুরু হয়ে গেল।

১৩ মে পুলিশ ফায়ারিং। ২৩৫ জন বিধায়ক থাকা সত্ত্বেও একটা সরকার সাত-আটমাসে স্পষ্ট করে ফেলল যে তারা চলে যাচ্ছে। বুদ্ধদেববাবু নিজের স্বপ্নকে চেজ় করার একটা ডেডলাইন দিয়ে দিয়েছিলেন। আর সময় নেই, আমাকে এগুলো করতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চুলির মুঠি ধরে তুলে দেওয়া উচিত কি না, তাঁকে ধরনায় বসতে দেওয়া উচিত কি না এটা পরের ব্যাপার। বুদ্ধদেববাবুর ভুল ধরার মতো ধৃষ্টতা আমার নেই। তবে যেটা মনে হয়েছে, সিঙ্গুর বা নন্দীগ্রাম সামাজিক-রাজনৈতিক ইস্যু। প্রচুর লোকের সামাজিক, অর্থনৈতিক রুটিরুজির সঙ্গে জড়িত ইস্যু। সেটা উনি প্রশাসনিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখতে গিয়ে সমস্যাটা করে ফেলেছিলেন।

তখন টেলিভিশনের রমরমা। প্রত্যন্ত গ্রামের সিপিএমেরই চাষিরা চোখের সামনে দেখছেন, আমারই মতো কাউকে ফেলে পেটাচ্ছে আমার সরকারের পুলিশ। ছবিটা ভয় ধরাল তাঁর মনে। সিপিএম কিছু করার আগে পাড়ায় পাড়ায় প্রচার করে। এই অ্যাপ্রোচটা একরকম। তোমার জমির দাম নিয়ে তুমি দেখো, সেগুলো অন্যরকম। রাজনৈতিকভাবে বিষয়টা যদিও বা সামাল দেওয়া যেত। কিন্তু বুদ্ধবাবু সে পথে হাঁটলেন না। এসডিও, ডিএমকে দায়িত্ব দিলেন। যাদের এই বিষয়টায় কোনও আবেগের জায়গাই নেই। আসলে আমলাতন্ত্রের দায়বদ্ধতা নেই জনতার কাছে। কাজ দেওয়া হয়েছে জমি খালি করার, সে গেছে, জমি খালি করেছে, আর করে চলে এসেছে। অন্য কোনও দিকে তাকায়নি।

বুদ্ধদেববাবু দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রশাসনের উপর বেশি ভরসা রেখেছিলেন। এমনকী পলিটব্যুরোও জানত না, এরকম একটা ঘটনা বড় হচ্ছে। আমি শুনেছি, জ্যোতি বসু একেবারে শেষবেলায় জানতে পেরে নাকি বলেছিলেন, আমাদের কৃষকসভা কী করছিল? এই একই কথা অবশ্য নন্দীগ্রামের ক্ষেত্রেও প্রাসঙ্গিক।

বুদ্ধদেববাবু কিন্তু রোজ আলিমুদ্দিন যেতেন। নিয়ম করে। কিন্তু, না বুদ্ধদেববাবু বলেছেন, না পার্টির কেউ জানতে চেয়েছেন যে শুনছি অমুক জায়গায় কী হয়েছে! আসলে এই হল রাজ্য সম্পাদক পদে থাকা আর না থাকার তফাৎ। গোলমাল যখন চরমে তখন পার্টি নামল ‘মাঠে’, পথে নয়। ততক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গিয়েছে।

অনিল বিশ্বাসের না থাকাটা অনেকে সে সময় ক্রুশিয়াল মনে করেছেন। ডেডলি কম্বিনেশন অনিল-বুদ্ধ। আমারও মনে হয়, সে সময় বুদ্ধবাবুর একটা আলাদা আত্মবিশ্বাসের জায়গা ছিল। ২৩৫ আসন নিয়ে এসেছেন, টাটাদের সঙ্গে মিটিং করছেন, সিঙ্গাপুর চলে যাচ্ছেন, একেবারে ব্র্যান্ড বুদ্ধ ইমেজ। সেই সময় পার্টিতে কারও বুদ্ধবাবুকে প্রশ্ন করার কোনও হিম্মত ছিল না। অনিল বিশ্বাস প্রয়াত, বিমান বসু পার্টি-পলিটিক্স নিয়েই ব্যস্ত। বিমান বসু ধরতেই পারেননি। সকলেই হয়ত ভেবেছিলেন, ২৩৫টা এমএলএ, যা খুশি করব আমরা। সেই মৌরসিপাট্টায় যে মমতা নামের কোনও এক কাঁটা আসতে পারে তা দূর কল্পনাতেও ভাবেননি বুদ্ধবাবু ও তাঁর পার্টি। চোর পালানোর পরে অবশ্য বুদ্ধি বেড়েছে। সিপিএম পর্যালোচনায় ধরতে পেরেছে চাষীদের মধ্যে যে ভয় সেটা ওনারা ধরতে পারেননি। আসলে একজন চাষীকে যদি হঠাৎ বলা হয় , কাল থেকে তুমি কারখানার কর্মী। এটা মানা যায় নাকি? আসলে আমলাতান্ত্রিকতার ফাঁদে পড়ে গিয়েছিলেন বুদ্ধবাবু। দলও ধরতে পারেনি।

যেদিন সিঙ্গুরের জমি নিয়ে নোটিফিকেশন বেরোল, রাতের মধ্যে হাজারটা অবজেকশন এসেছিল। অনিচ্ছুকদের সেই চিঠি। এটা অগস্টেই। এরপর তো আরও সময় গিয়েছে। তখন ভেবেছিল, ২৩৫ তো, ম্যানেজ করে দেব। এরর ইন জাজমেন্ট আর আমলাদের প্রতি অতি নির্ভরশীলতায় এমনটা হয়েছিল। আসলে আমলারা তো আমলাদের মতো করেই দেখবেন। পার্টি ক্যাডারের মতো করে তো দেখবেন না।

আমি তিনবার ইন্টারভিউ করেছি বুদ্ধদেববাবুর। খুব ভদ্র, মার্জিত এবং সব থেকে বড় ব্য়াপার কী প্রশ্ন করা হবে তা আগাম জানতে চান না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো। আমি প্রশ্ন করেছিলাম, মাওবাদী নিয়ে। একটু রাগত স্বরে বলেছিলেন, ‘খালি মাওবাদ মাওবাদ করছেন। ৩০০-র বেশি ব্লক, ৮টা ব্লকে হয়ত গোলমাল হয়েছে। কী মাওবাদ মাওবাদ করছেন!’ উনি কিন্তু খুব ধৈর্য ধরে প্রশ্ন শুনতেন, জবাবও দিতেন গুছিয়ে।

আমার বাবার অগ্রজ সহকর্মী ছিলেন মনোজ ভট্টাচার্য। তিনিও সাংবাদিক ছিলেন। উনি সম্পর্কে বুদ্ধবাবুর কাকা। বাবার ওই বাড়িতে যাতায়াত ছিল। বাবার কাছে শুনেছি, মনোজবাবুদের বাড়িতে আড্ডা মারতেন তাঁরা। সে সময় ছোট্ট বুদ্ধ খেলাধূলো করতেন। বাবা কাকা সকলে মিলে ছোট্ট ছেলেটিকে আলমারির উপরে তুলে দিতেন। বয়স বড়জোর ১০ কী ১১ বছর হবে। গীতাঞ্জলি থেকে সে ছেলে তখন অনর্গল কবিতা পাঠ করে। সেই পাঠ শুনতেই ওই আলমারির উপরে তুলে দেওয়া।  দু-তিনটে কবিতা বলার পর মিলত ছুটি। আমাকে বুদ্ধবাবু একবার বলেছিলেন, ‘তোমার বাবা আমাকে খুব টর্চার করেছেন’। সে সময়েই গল্পটা বলেন।

ছোট্ট বুদ্ধ ঘুড়ি ওড়াতে ভালবাসতেন খুব। মনোজবাবুর স্ত্রীর কাছে শোনা, খাসির মাংসের খুব বড় ভক্ত ছিলেন বুদ্ধদেববাবু। আর সাহিত্যের প্রতি টান সেই ছোট্ট থেকেই। আমার মতে, উনি চেষ্টা করেছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির টিপিকাল মডিউলটা বদলাতে। ওর লাইন ছিল, আমি তোমাদেরই লোক না। এটা নয়। ওটা তো বলতে ভাল লাগে! কিছু বেসিক ইস্যু উনি ধরার চেষ্টা করেছিলেন। বামফ্রন্টের যে ইস্যু ছিল, আজও সেটাই দেশজুড়ে ইস্যু।

বিপরীতধর্মী মতাদর্শে থাকলেও কেন্দ্র থেকে উনি কিন্তু যথেষ্ট কিছু আদায় করে আনেন। সে কে সিপিএম, কে কংগ্রেস তা কিন্তু দেখে কাজ করেননি প্রশাসনিক করেননি। আমার কাছে বুদ্ধদেববাবু সেই মানুষ যিনি অত্যন্ত সদিচ্ছা-সহ পশ্চিমবঙ্গের অনেক কিছু পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। আবেগ দিয়ে এবং আবেগাপ্লুত না হয়ে। তবে হতাশ তিনি নিজের দ্বারাই হয়েছিলেন।

আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)

Next Article