
কলকাতা: ধেয়ে আসছে মন্থা। চিন্তায় কৃষক থেকে মৎসজীবী সকলেই। কোথায় এই ঘূর্ণিঝড়ের ল্যান্ডফল হবে, তা নিয়েও সাধারণ মানুষের মনে উদ্বেগ-শঙ্কার মেঘ জমেছে। মৌসম ভবন জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে রক্তচক্ষু দেখাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’। অতি গভীর নিম্নচাপ শক্তি বাড়িয়ে ইতিমধ্যেই ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এই ঘূর্ণিঝড়ের ল্যান্ডফল হবে আগামিকাল, মঙ্গলবার। অন্ধ্র প্রদেশের কাঁকিনাড়াতে এর ল্যান্ডফল হবে।
মৌসম ভবনের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বিশাখাপত্তনম থেকে ৬৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে ঘূর্ণিঝড় মন্থা। আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে এই ঘূর্ণিঝড় উপকূলের কাছাকাছি চলে আসবে। শক্তিও বাড়বে ঘূর্ণিঝড়ের। মঙ্গলবার বিকেলে বা রাতে অন্ধ্র প্রদেশের কাঁকিনাড়া উপকূল দিয়ে তীব্র ঘূর্ণিঝড় রূপে স্থলভাগে প্রবেশ করবে। ল্যান্ডফলের সময় ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। এই ঘূর্ণিঝড় ওড়িশা-ছত্তীসগঢ়ের দিকে এগিয়ে যাবে। এর প্রভাব পশ্চিমবঙ্গেও পড়বে, তবে সরাসরি নয়।
ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’র প্রভাবে জগদ্ধাত্রী পুজোয় বৃষ্টির আশঙ্কা বাংলায়। আগামিকাল, মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গে বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ঘনঘন বজ্রপাতও হতে পারে। উপকূল থেকে উত্তরের জেলায় জারি করা হয়েছে হলুদ সতর্কতা। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলে বইবে দমকা বাতাস, উত্তাল হবে সমুদ্র।
এই সময়ে মৎস্যজীবীদের গভীর সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। ক্ষিণ বা মধ্য বঙ্গোপসাগরে মৎস্যজীবীদের যেতে ইতিমধ্যেই নিষেধ করা হয়েছে। আজ থেকে উত্তর পশ্চিমবঙ্গ বঙ্গোপসাগরে যেতেও নিষেধ করা হয়েছে। ২৮ অক্টোবর মঙ্গলবার থেকে মৎস্যজীবীদের বাংলার উপকূলে সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। ২৭ তারিখের মধ্যে গভীর সমুদ্র থেকে উপকূলে ফিরে আসতে পরামর্শ।
অন্যদিকে, ফসলেরও বড় ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে পাকা ধান ও শীতকালীন ফসলের ক্ষতি হতে পারে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে। কৃষকদের ক্ষেত থেকে পাকা ফসল কেটে ফেলার পরামর্শ দিয়েছে মৌসম ভবন।
কলকাতায় আজ ঝলমলে আকাশ থাকবে। পরে আংশিক মেঘলা হতে পারে আকাশ। আগামী দু’দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। দক্ষিণা বাতাসের দাপট থাকবে। সোমবার রাত থেকে আবহাওয়ার পরিবর্তন হবে। বেলার দিকে আংশিক মেঘলা হবে আকাশ। বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার বজ্রবিদ্যুৎ সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বুধবার বা বৃহস্পতিবার বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে পারে। সঙ্গে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে দমকা ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে।
আজ কলকাতার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকবে ৩২ ডিগ্রির কাছাকাছি। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকবে ২৪ ডিগ্রি। গতকাল দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২.৫ ডিগ্রি। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ আপেক্ষিক আর্দ্রতা থাকবে ৬৮ থেকে ১০০ শতাংশ। গতকাল বৃষ্টি হয়েছে ৩৯ মিলিমিটার।
দক্ষিণবঙ্গে আজ সকালে আকাশ আংশিক মেঘলা থাকবে। কলকাতা সহ উপকূল সংলগ্ন জেলাতে হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা। ছট পুজোয় বৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়বে। জগদ্ধাত্রী পুজোয় ভারী বৃষ্টির সতর্কতা। মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত বৃষ্টির সতর্কতা।
আজ কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলাতে বজ্রবিদ্যুৎসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। সোমবার রাতে ও মঙ্গলবার সকালে বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির পূর্বাভাস সব জেলাতেই। থাকবে বজ্রপাতের আশঙ্কাও।
মঙ্গলবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা। বৃষ্টির সঙ্গে উপকূলের ও উপকূল সংলগ্ন জেলাগুলিতে ৩০ থেকে ৫০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা বাতাস বইতে পারে। উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম জেলাতে ভারী বৃষ্টি হবে।
বুধবার হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম- এই ছয় জেলাতে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা। সব জেলাতেই ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা বাতাস বইতে পারে। উপকূলে হাওয়ার গতিবেগ বাড়তে পারে।
বৃহস্পতিবারেও ভারী বৃষ্টি হবে। পুরুলিয়া, বীরভূম, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান এবং মুর্শিদাবাদে বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা। সব জেলাতেই ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা বাতাস বইতে পারে।
শুক্রবারেও ভারী বৃষ্টি হবে বীরভূম এবং মুর্শিদাবাদে। হালকা বৃষ্টির সামান্য সম্ভাবনা দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে। পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম জেলাতে বজ্রবিদ্যুৎ সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি এবং সঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা বাতাস বইতে পারে।
শনিবার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ কমবে, বিক্ষিপ্তভাবে দু এক জায়গায় বজ্রবিদ্যুৎ বৃষ্টির পূর্বাভাস।
আজ সোমবার মূলত শুষ্ক আবহাওয়া থাকবে। বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। মঙ্গলবার আবহাওয়ার পরিবর্তন। মূলত আংশিক মেঘলা আকাশ থাকবে। বজ্রবিদ্যুৎসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হবে মূলত দার্জিলিং ও কালিম্পং এর পার্বত্য এলাকায়।
বুধবার মালদা, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর এবং জলপাইগুড়ি জেলাতে দমকা বাতাসের সঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা বাতাস বইতে পারে।
বৃহস্পতিবার ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে মালদা, উত্তর দিনাজপুর এবং জলপাইগুড়ি জেলাতে। বাকি জেলাতে বজ্রবিদ্যুৎ সহ হালকা মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে।
শুক্রবারে উত্তরবঙ্গের সব জেলাতেই ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা। দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, মালদহ এবং দুই দিনাজপুরে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস। বজ্রবিদ্যুৎ সহ হালকা মাঝারি বৃষ্টির সঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা বাতাস বইবে। শনিবারে বজ্রবিদ্যুৎসহ হালকা মাঝারি বৃষ্টি বিক্ষিপ্তভাবে হতে পারে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে।