Cyclone Gulab: বর্ষার ব্যতিক্রমী ঘূর্ণিঝড়ের তালিকায় নাম গুলাবের, লম্বা সফরেই ভাঙল ছক
Cyclone Gulab: গুলাব কেন ছক-ভাঙা? এর উত্তর আসলে বর্ষায় তেমন একটা ঘূর্ণিঝড় না হওয়ার কারণের মধ্যেই লুকিয়ে।
কমলেশ চৌধুরী: বর্ষার আগে ঘূর্ণিঝড় হয়। যেমন, ফণী, ইয়াস।
বর্ষার পরে ঘূর্ণিঝড় হয়। যেমন, পিলিন, হুদহুদ।
বর্ষার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় সাধারণত হয় না। হলে ব্যতিক্রমী ধরা হয়। এই ব্যতিক্রমী তালিকাতেই নাম উঠল অন্ধ্রপ্রদেশে আছড়ে পড়া ঘূর্ণিঝড় গুলাবের।
গুলাব কেন ছক-ভাঙা? এর উত্তর আসলে বর্ষায় তেমন একটা ঘূর্ণিঝড় না হওয়ার কারণের মধ্যেই লুকিয়ে। যার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মৌসম ভবনের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “বর্ষায় সাধারণত ঘূর্ণিঝড় হয় না কারণ, নিম্নচাপ বা গভীর নিম্নচাপগুলি উপকূলের খুব কাছে তৈরি হয়। শক্তি বাড়ানোর আগেই স্থলভাগে ঢুকে পড়ে। দ্বিতীয় কারণ, বায়ুমণ্ডলের উপরের আর নীচের স্তরের মধ্যে বাতাসের গতির পার্থক্য। একে আমরা বলি, ভার্টিক্যাল উইন্ড শিয়ার। শিয়ার বেশি হলে ঘূর্ণিঝড়ের কাঠামো তৈরি হওয়ার আগেই ভেঙে যায়। বর্ষায় শিয়ার অনেক বেশি থাকে। তাই বেশিরভাগ ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় এপ্রিল-মে আর অক্টোবর-নভেম্বর– এই দুই মরসুমেই।”
গুলাবের মূল সৃষ্টি-রহস্য লুকিয়ে প্রথম শর্তেই। দক্ষিণ চিন সাগর থেকে সরে আসা ঝড়ের অবশিষ্টাংশ মায়ানমার লাগোয়া পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণাবর্ত রূপে হাজির হয়। সেখান থেকে কলিঙ্গপত্তনম উপকূল অনেকটা পথ। লম্বা সফর। ফলে দফায় দফায় শক্তি বাড়ানোর সুযোগও মিলেছে। ঘূর্ণাবর্ত থেকে নিম্নচাপ, নিম্নচাপ থেকে গভীর নিম্নচাপ, তারপর অতি গভীর নিম্নচাপ, শেষে ঘূর্ণিঝড়। তাছাড়া, সাগরে শক্তি বাড়ানোর জন্য ঘূর্ণিঝড়ের জ্বালানির কোনও অভাবও ছিল না। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা ২৬.৫ ডিগ্রি বা তার বেশি হতে হয়। এই তাপমাত্রা থাকতে হয় জলতলের অন্তত ৫০ মিটার নীচ পর্যন্ত। মৌসম ভবনের পর্যবেক্ষণ, গুলাবের গতিপথে জলের তাপমাত্রা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অনেকটাই বেশি: ২৮-২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সঙ্গত করেছে অন্য শর্তগুলিও। সবমিলিয়ে সে ভাবে গুলাবের ‘শিয়রে’ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি বর্ষার উচ্চমাত্রার ‘শিয়ার’।
তবে ঘূর্ণিঝড় তকমা পেলেও গুলাব মামুলি ঝড়ের তালিকাতেই পড়বে। গুলাবের দাপটে অন্ধ্র উপকূলে ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠেছে ৯০-৯৫ কিলোমিটার/ঘণ্টায়। সেই তুলনায় সুন্দরবনে আছড়ে পড়া আমফানে ঝড়ের গতিবেগ ছিল ১৮৫ কিমি/ঘণ্টা। বালেশ্বরে আছড়ে পড়া ইয়াসে ঝড়ের গতিবেগ ছিল ১৫৫ কিমি/ঘণ্টা। সে অর্থে দেখতে গেলে, তীব্র বা অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের যে একটানা প্রবণতা বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে চলছে, সেই ‘ছক’ও কিছুটা ভাঙল গুলাব। সঞ্জীববাবুর কথায়, “বর্ষার বাধা টপকে ঘূর্ণিঝড় হয়েছে, কিন্তু একেবারেই প্রাথমিক স্তরের ঘূর্ণিঝড় হিসেবেই ধরা হবে গুলাবকে।”
এর আগে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে কলিঙ্গপত্তনমের খুব কাছেই, গোপালপুরে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় দয়ী। ২০১৫ সালে আবার জুলাই মাসেই বাংলাদেশ উপকূলে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় গোহমেন। ১৯৮৯ সালের পর সেই প্রথম জুলাই-আগস্টের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় উত্তর ভারত মহাসাগরে। তবে, দয়ী বা গোহমেন, কোনওক্ষেত্রেই ঘূর্ণিঝড় তীব্র হওয়ার সুযোগ পায়নি। গুলাবের মতোই।
সাধারণত, বর্ষা-শেষে অক্টোবরে ঘূর্ণিঝড়ের দ্বিতীয় মরসুম শুরু হয় দুই সাগরে। সে দিক থেকে দেখলে সেই মরসুম প্রায় হাজির। গুলাব চলতি বছরের তৃতীয় ঘূর্ণিঝড়। তাউটে, ইয়াসের পর। বছরে গড়ে ৪-৫টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয় মরসুম আগে-ভাগে শুরু হওয়া কি উদ্বেগের লক্ষণ? পূর্বাভাসে নারাজ লন্ডনের রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহবিদ অক্ষয় দেওরাস। তাঁর বক্তব্য, “বর্ষার ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে বর্ষা-পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যার সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই। একাধিক শর্ত অনুকূল হওয়া দরকার। অনুকূল পরিবেশ পেলে আগামী দু’-আড়াই মাসে আরও ঘূর্ণিঝড় হতেই পারে।”
নিখুঁত পূর্বাভাস আর ঠিকঠাক প্রস্তুতি ছাড়া একেবারেই গতি নেই। কারণ, প্রকৃতি ছক ভাঙছে বারবার। গুলাব সাম্প্রতিক সংযোজন মাত্র।