কলকাতা: কসবার ভুয়ো ক্যাম্প-কাণ্ডে নিয়ে তোলপাড় গোটা রাজ্য। ভ্যাকসিন বলে কয়েক’শ মানুষকে কী দেওয়া হল, তা তা এখনও অজ্ঞাত। তবে কসবা থেকে অভিযোগ সামনে এলেও আদতে কলকাতার একাধিক জায়গায় বহু মানুষকে এ ভাবেই ভুয়ো ক্যাম্প বানিয়ে টিকা দিয়েছেন দেবাঞ্জন। নর্থ সিটি কলেজের ছাত্রছাত্রীরাও রয়েছেন সেই তালিকায়। পুরসভার যুগ্ম কমিশনার পরিচয় দিয়ে দেবাঞ্জন যে ভাবে ওই কলেজে গিয়েছিলেন, তাতে বিন্দুমাত্রও সন্দেহ হয়নি কলেজের অধ্যক্ষের। নীলবাতি গাড়ি, পুরসভার আই কার্ড থাকা কর্মী, হাতে পুরসভার নথি, এ সব দেখেই ভরসা হয়েছিল। সেই কলেজে ক্যাম্প করে শুধু কোভিশিল্ড নয়, স্পুটনিক ভ্যাকসিনও দিয়েছিলেন দেবাঞ্জন। ঘটনা ফাঁস হতেই আমহার্ট স্ট্রিট থানায় অভিযোগ দায়ের করলেন নর্থ সিটি কলেজের অধ্যক্ষ শীতল প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়।
উত্তর কলকাতার এই কলেজের তরফ থেকে ইয়াস মোকাবিলায় সুন্দরবন এলাকায় ত্রাণ বিলি করা হয়। সেই ত্রাণ বিলি দেখেই নাকি দেবাঞ্জন দেব যোগাযোগ করেন নর্থ সিটি কলেজের অধ্যক্ষ শীতল প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তবে এই কাজে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ছিলেন নর্থ সিটি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ইন্দ্রজিৎ সাউ। ইন্দ্রজিৎ নিজেও দেবাঞ্জনের প্রতারণার শিকার। ভুয়ো নিয়োগপত্র দিয়ে এবং কর্পোরেশনের একটি ভুয়ো আইডি কার্ড বানিয়ে ইন্দ্রজিৎকে হেড ক্লার্ক হিসেবে নিয়োগ করেছিল দেবাঞ্জন।
ইন্দ্রজিৎ-এর সঙ্গেই কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করে দেবাঞ্জন। সেই সময় দেবাঞ্জন মাস্ক-স্যানিটাইজার নিয়ে হাজির হন কলেজে। দেবাঞ্জন জানায়, এই কলেজে এসে ভ্যাক্সিনেশন শিবির করতে চায়। কলকাতা পুরসভার যুগ্ম-কমিশনার পরিচয় দেওয়ায় অধ্যক্ষ রাজি হয়ে যান। তাঁর কোনও সন্দেহই হয়নি। এরপর ১৮ জুন নর্থ সিটি কলেজের কম্পিউটার ল্যাবে এই ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। প্রায় ১০০ জন ভ্যাকসিন নেয়। তার মধ্যে ৭ থেকে ১০ জনকে স্পুটনিক দেওয়া হয়েছে। বাকিরা নিয়েছে কোভিশিল্ড।
আরও পড়ুন: ভুয়ো শিবিরে আদৌ কি ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে নাকি অন্য ইঞ্জেকশন? সন্দেহ পুলিশের
তবে যে দিন ভ্যাকসিন ক্যাম্প ছিল, সে দিন কিছু ছাত্র ওই ক্যাম্পের ভিতরে টিকা প্রদানের ছবি তুলতে যায়। সেই সময় নিজেকে আইএএস অফিসার বলে পরিচয় দেওয়া দেবাঞ্জন রেগে যায় এবং বাইরে দাঁড় করানো আইএএস স্টিকার সাঁটানো গাড়ি থেকে একটি ফাইবারের লাঠি বের করে নিয়ে এসে দু’একজন ছাত্রকে মারধর করে। এই নিয়ে কলেজের মধ্যে তুমুল বিতর্কও হয়। ভ্যাকসিন দেওয়ার পর কোনও সার্টিফিকেট না আসায় কলেজের ছাত্ররা অধ্যক্ষকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু অধ্যক্ষ গুরুত্ব দেননি বলে অভিযোগ। এমনকি তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা এলাকার কোনও তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেননি বলে জানিয়েছেন।