Humayun Kabir: হুমায়ুনের ‘বাবরি’ তৃণমূলের কতটা ক্ষতি করবে?
Babri Masjid Politics: ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের হিসাব বলছে রাজ্যে ২৯৪ টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৭৪ টি আসনে সংখ্যালঘু ভোটার ৪০ শতাংশ বা তার বেশি। তৃণমূল সেখানে জয় পায় ৬৯টি আসনে। ২৯৪টি আসনের মধ্যে ৫৭টি আসনে সংখ্যালঘু ভোটার ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশের মধ্যে। তৃণমূল সেখানে জয় পায় ৪৬টি আসনে।

কলকাতা: ১০ বছরের মধ্যে দু’বার একই দল থেকে সাসপেন্ড। কিন্তু বিদ্রোহী হুমায়ুন বলছেন বিধানসভায় ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে অধিকার বুঝে নেব। ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিন মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে ফেললেন। জল গড়িয়েছিল হাইকোর্টে। মোতায়েন হয়েছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। আর মসজিদের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের পরে বললেন লক্ষ্য ৯০ আসন। লক্ষ্য সরকার গঠন নয়, লক্ষ্য বিরোধী শিবির। এ কথাই কার্যত হুঙ্কার দিয়ে বলছেন সাসপেন্ডেড হুমায়ুন। নতুন দলের আত্মপ্রকাশ শুধু সময়ের অপেক্ষা। তারপরই বঙ্গ রাজনীতির সমীকরণটাই নাকি তিনি বদলে দেবেন। কিন্তু সত্যিই কি সম্ভব? বদলে যাবে সংখ্যলঘু ভোটের মানচিত্রটা?
বাংলার বুকে সংখ্যালঘু ভোট বললেই ইঙ্গিতটা যায় মূলত মুসলিম ভোটারদের দিকে। হিসাব বলছে বর্তমানে রাজ্যে ২৭ শতাংশ বা তার একটু বেশি সংখ্যালঘু ভোটার। নিজেদের সময় এই ভোট দখলে রাখত বামেরা। রাজ্যে পালাবদলের সময় বদলে যায় ভোট চিত্র। সংখ্যালঘুদের প্রায় সব সমর্থনই গিয়ে পড়ে তৃণমূলের উপর। তারপর থেকে এই সমর্থন ক্রমশ বেড়েছে। ২০২১ সালে কার্যত একচেটিয়াভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট পায় তৃণমূল। বিজেপির দাবি, সংখ্যালঘু ভোটে ভর করেই ধারেভারে বেড়েছে ঘাসফুল শিবির।
কী বলছে সংখ্যালঘু সমীকরণ?
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের হিসাব বলছে রাজ্যে ২৯৪ টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৭৪ টি আসনে সংখ্যালঘু ভোটার ৪০ শতাংশ বা তার বেশি। তৃণমূল সেখানে জয় পায় ৬৯টি আসনে। ২৯৪টি আসনের মধ্যে ৫৭টি আসনে সংখ্যালঘু ভোটার ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশের মধ্যে। তৃণমূল সেখানে জয় পায় ৪৬টি আসনে। শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, আমরা ৩৯ শতাংশ আছি, আর ৫-৬ শতাংশ হিন্দুরা একজোট হলেই ক্ষমতায় আসা সম্ভব। এবার ৯০ আসনের টার্গেট হুমায়ুনের। ২২ ডিসেম্বর করতে চলেছেন নতুন দল ঘোষণা। মোট ১৩৫ আসনে প্রার্থীও দিচ্ছে তাঁর দল।
বিস্ফোরক হুমায়ুনকে বিগত কয়েক মাসেও বাগে আনতে পারেনি তৃণমূল। বারবার গিয়েছে শোকজ নোটিস, বৈঠকে বসেছে শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি, কিন্তু কোনও কিছু দমাতে পারেনি হুমায়ুনকে। উল্টে সুর আরও চড়িয়েছেন। বাবরি মসজিদ তৈরির সিদ্ধান্তেও যে তিনি অনড় থাকছেন তাও বুঝিয়ে দিয়েছেন স্পষ্টভাবেই। তাঁর কথায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে প্রিভেন্টিভ অ্যারেস্টের কথা বলেছেন খোদ রাজ্যপাল। যদিও হুমায়ুনে বক্তব্য রাজ্য়পাল এক্তিয়ারের বিরুদ্ধে কথা বলছিলেন।
নাম না করে তোপ দেগেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ও। শুধু পোকামাকড় বলেই থামেননি, বুঝিয়ে দিয়েছেন কাদের ইন্ধনে হুমায়ুনের এত বিপ্লব। তোপ দেগেছেন বিরুদ্ধে। হুমায়ুনের নাম না করে বলেছিলেন, বিজেপির টাকাতেই যত কাণ্ড। যদিও সেসবে পাত্তা দিতে নারাজ হুমায়ুন।
শেষ পর্যন্ত তিনবার সতর্ক করার পর শেষ পর্যন্ত হুমায়ুনকে সাসপেন্ডই করে দিয়েছে তৃণমূল। ফিরহাদ হাকিম বললেন, “আমি বা আমার দলের কেউ এই ধরনের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করি না। আমাদের দল ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে। কাউকে ঠেস দিয়ে রাজনীতি করা আমাদের দলের কাজ নয়। এই ধরনের সিদ্ধান্ত বা যে ধরনের বক্তব্য হচ্ছে তা আমরা সমর্থন করছি না।” তবে এই সাসপেনশন লোক দেখানো বলে তৃণমূলকে বিঁধছে বিরোধীরা। বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলছেন এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্যালারি শো। খোঁচা দিয়েছেন প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীও।
খেলা ঘোরাতে পারবেন হুমায়ুন?
শুধু বাবরি মসজিদেই তিনি থেমে নেই, সংখ্যালঘু ভোট টানা যে তাঁর লক্ষ্য তা বুঝিয়ে দিয়েছেন হুমায়ুন। বাংলার যে জেলাগুলিতে মুসলিম ভোট অন্যতম নিয়ন্ত্রক তার সামনের সারিতে রয়েছে মুর্শিদাবাদ। ২০১১ সালের জনগণনা বলছে হুমায়ুনের জেলায় সংখ্যালঘুদের বাস ৬৬ শতাংশ। মালদহে ৫২ শতাংশ। নদিয়া ও উত্তর ২৪ পরগনায় ২৬ শতাংশ করে। ইতিমধ্যেই আগের বিধানসভা নির্বাচন থেকেই খেলছে আইএসএফ। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের মুখে যেভাবে হঠাৎ মিম সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করেছিল। এবার নতুন করে হুমায়ুনের দল মাঠে নামলে চিত্রটা কেমন হয় সেটাই দেখার। এই মুর্শিদাবাদ জেলাতে ২২টি আসনের মধ্যে ১৬টিই মুসলিম অধ্যুষিত আসন। ৩টি এমন আসন রয়েছে যেখানে হিন্দু-মুসলিম মোটামুটি সমান। আর বাকি তিন আসন হিন্দু অধ্যুষিত। অর্থাৎ মুসলিম ভোট যে এখানে ডিসাইডিং ফ্যাক্টর তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এদিকে রাজ্যে মুসলিমদের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলতে গিয়ে কেন সরকারের টাকায় জগন্নাথ মন্দির হবে, কেন দুর্গাপুজোয় অনুদান দেওয়া হবে সেই প্রশ্নও তুলছেন হুমায়ুন। যদিও সাসপেন্ড হওয়ার পর করেছিলেন খুন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও। তা নিয়েও রাজনৈতিক মহলে বিস্তর জলঘোলা হয়। একসময় দলের একনিষ্ঠ সৈনিক থেকে শেষ পর্যন্ত সাসপেন্ডেড কর্মী। হুমায়ুনের হাল দেখেছে গোটা রাজ্য। কিন্তু যত কোণঠাসা হয়েছেন ততই যেন তিনি উঠেছে এসেছেন সংখ্যালঘু নেতা হিসাবে। এবার তো একেবারে ২৯৪, ১৩৫, ৯০ এর অঙ্ক কষে একে দিচ্ছে পালবদলের রূপরেখা। কিন্ত তা কী বাস্তবের রূপ দেখবে নাকি ফাঁকা আওয়াজ হয়ে থেকে যাবে? প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।
