Monsoon Weather Report: ১২৩ বছরে শুষ্কতম অগস্ট, উষ্ণতম অগস্ট! পিছনে ‘খোকাবাবু’র কলকাঠি?

Monsoon Weather Report: এই মাসটায়, ভারতের মূল ভূখণ্ডের উপর বায়ুমণ্ডলের উপরিস্তর থেকে বাতাস নামতে দেখছি আমরা। এটা বৃষ্টির জন্য একেবারেই ভাল শর্ত নয়।

Monsoon Weather Report: ১২৩ বছরে শুষ্কতম অগস্ট, উষ্ণতম অগস্ট! পিছনে খোকাবাবুর কলকাঠি?
প্রতীকী ছবিImage Credit source: TV9 Bangla

| Edited By: তন্নিষ্ঠা ভাণ্ডারী

Aug 31, 2023 | 5:31 PM

কলকাতা: ‘ঘুম কেন নেই তোর চোখে? কে রে এমন জাগায় তোকে?’ কবিতায় প্রশ্ন তুলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাস্তবে কেউ জিজ্ঞাসা করলে উত্তর বাঁধা, ভ্যাপসা গরম। গুমোট রাত। ঘুম হবে কী করে! ভাদ্রে পচা গরম পড়বে, এর মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু নেই। তাই বলে, অগস্ট মাসে রাতের কলকাতার তাপমাত্রা তিরিশের কোঠায় পৌঁছে যাবে? বৃহস্পতিবার ঠিক সেটাই হয়েছে। আলিপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ২৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহবিদরা দস্তাবেজ ঘেঁটে বলছেন, অগস্টে রাতে এত গরম আর কখনও পড়েনি কলকাতায়। প্রশ্ন হল, কেন এত গরম? উত্তর সহজ, বর্ষা দুর্বল। আলিপুরের আবহবিদরা বলছেন, তাও দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি হয়েছে, পাহাড়ি রাজ্য বাদে বাকি দেশের অবস্থা শোচনীয়। এমন শুকনো অগস্ট গত ১২৩ বছরে দেখেনি দেশ। বৃষ্টি কম, তাই রেকর্ড তাপমাত্রাতেও। এ বার ১২৩ বছরের উষ্ণতম অগস্টের সাক্ষীও ভারত।

চলতি মরসুমে বর্ষার শুরুটা ভাল হয়নি। কেরলে যাত্রা শুরু হয় দেরিতে। ১০ শতাংশ ঘাটতি নিয়ে শেষ হয় জুন। জুলাইয়ে মারকাটারি ফর্মে ছিল বর্ষা। ১৩ শতাংশ বেশি বৃষ্টি দেশে। বন্যার কবলে পড়ে গুজরাত থেকে রাজস্থান, ওড়িশা থেকে মহারাষ্ট্র। অগস্টের প্রথম সপ্তাহ শেষ হতে না হতেই ছবিটা বদলে যায়। একটানা বৃষ্টি হিমালয়ের কোলে থাকা রাজ্যে, কিছুটা আশীর্বাদ বিহার, উত্তরপ্রদেশ, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে, বাকি দেশ প্রায় শুকনো। গুজরাতে ৯০ শতাংশ, রাজস্থানে ৮০ শতাংশ, কর্নাটকে ৭৪ শতাংশ বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, গোটা অগস্টে দেশে গড়ে মাত্র ১৬২.৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ৩৬ শতাংশ ঘাটতি। মৌসম ভবনের তথ্য বলছে, অগস্টে ১৯০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত মাত্র ৭ বার ২০০ মিলিমিটারের কম বৃষ্টি হয়েছে দেশে। চলতি শতাব্দীতে মাত্র ৩ বার, ২০০৫, ২০০৯ ও ২০২১ সালে। সব নজির ভেঙে ২০২৩ সালেই শুষ্কতম অগস্টের সাক্ষী হল ভারত।

২০০৯ সালে দেশ জুড়ে খরা হয়েছিল। নেপথ্যে ছিল এল নিনো। যে স্প্যানিশ শব্দের অর্থ, ছোট ছেলে। সহজ বাংলায় খোকাবাবু বললেও অত্যুক্তি হয় না! এই মুহূর্তেও প্রশান্ত মহাসাগরে এল নিনো পরিস্থিতি চলছে। তবে কি খ্যাপা খোকাবাবুই দায়ী? এল নিনোর রক্তচক্ষুতেই অগস্টে এই দশা?

আবহবিদরা সমস্বরে এল নিনোকেই দোষী ঠাওড়াচ্ছেন। পুনের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটেরোলজির প্রাক্তন বিজ্ঞানী রাজীবন মাধবন বলছেন, ”অগস্টেই এল নিনোর প্রভাব আমাদের দেশে পড়তে শুরু করেছে। এই মাসটায়, ভারতের মূল ভূখণ্ডের উপর বায়ুমণ্ডলের উপরিস্তর থেকে বাতাস নামতে দেখছি আমরা। এটা বৃষ্টির জন্য একেবারেই ভাল শর্ত নয়। আবার প্রশান্ত মহাসাগরে নীচ থেকে উপরে বায়ুর গতি। ফলে ওই অঞ্চলে টানা ঝড়-বৃষ্টি চলছে। এই বৈপরীত্যটা এল নিনোর খুব পরিচিত চরিত্র।” ওই ইনস্টিটিউটেরই জলবায়ু বিজ্ঞানী রক্সি ম্যাথু কল বলছেন, ”আমরা গবেষণা করে দেখেছি, এল নিনো থাকলে মধ্য ভারতে বৃষ্টি অনেকটা কমে যায়। এবার সেটাই হল।”

অথচ, এই অগস্টেই ভয়াবহ বিপর্যয় দেখেছে হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড। একদিনে ৪০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিও হয়েছে হৃষীকেশে। বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে উত্তরবঙ্গ, অসমেও। এখানে কি এল নিনোর প্রভাব পড়েনি?

আবহবিদ অক্ষয় দেওরাসের যুক্তি, ”এল নিনো থাকলে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ কম সৃষ্টি হয়। এ বার অগস্টে যেমন মাত্র একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে মৌসুমি অক্ষরেখা দীর্ঘসময় হিমালয়ের কোলে অবস্থান করছিল, যাকে বলা হয়, ব্রেক মনসুন। তখনই টানা বৃষ্টি হয়েছে পাহাড়ি রাজ্যগুলোতে। এল নিনোর সরাসরি প্রভাবেই ব্রেক মনসুন দশার মেয়াদ বেড়েছে। আর ওই সময় উত্তর-পশ্চিম, মধ্য, দক্ষিণ ভারতের বিস্তীর্ণ অংশ বৃষ্টি পাওয়া থেকে বঞ্চিত থেকে গিয়েছে।” ফলে দেশের ঘাটতি আবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ শতাংশে।

দেখা যাচ্ছে, ৫ থেকে ১৬ অগস্ট ও ২৭-৩১ অগস্ট, সবমিলিয়ে ১৭ দিন ব্রেক মনসুনের মেয়াদ। তার ফলে এমন অবস্থা হয়েছে, উত্তর-পশ্চিম ভারতে গরম, শুকনো হাওয়ার দাপট, ঠিক যেমনটা হয় বর্ষার আগে। মৌসম ভবনের ডিরেক্টর জেনারেল মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র বলছেন, ”যা বৃষ্টি হয়েছে ৮০ ডিগ্রির উত্তরে, ৮০ ডিগ্রির দক্ষিণ দিকে বৃষ্টি প্রায় হয়ইনি।” তাই মধ্য এবং দক্ষিণ ভারতও এই প্রথম এমন শুখা অগস্টের সাক্ষী।

দক্ষিণবঙ্গের পরিস্থিতি আবার অন্যরকম। জুন-জুলাই মিলিয়ে ৪০% ঘাটতি ছিল দক্ষিণবঙ্গে। সেটাই অগস্ট শেষে নেমে এসেছে ২৮ শতাংশে। শুধু অগস্টে ঘাটতি মাত্র ৬%, আবহবিদদের অঙ্কে স্বাভাবিক বৃষ্টি। জুন-জুলাই যেখানে খরার ভয় দেখাচ্ছিল, সেখানে অগস্টই কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে বাংলার চাষিদের। সব জেলায় না হলেও, বেশ কিছু জেলায় আমন ধানের চাষ এগিয়েছে। কোন জাদুবলে?

মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুক্তি, ”জুলাইয়ের শেষে যে অতি গভীর নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছিল, তার প্রভাবে অগস্টের শুরুতে ভারী বৃষ্টি হয়। মাসের মাঝামাঝি যে নিম্নচাপ হয়েছিল, তাতেও দক্ষিণবঙ্গ বৃষ্টি পেয়েছে। এ ছাড়া মৌসুমি অক্ষরেখা উত্তরবঙ্গে বৃষ্টি দেওয়ার ফাঁকে মাঝেমধ্যে দক্ষিণবঙ্গের দিকেও মুখ তুলে তাকিয়েছিল। অন্তত জুলাই মাসের মতো ওড়িশায় গিয়ে ঠায় বসে থাকেনি! তাই দক্ষিণবঙ্গের অগস্টের রিপোর্ট কার্ড ভালো।”

অগস্টের শেষ দিনে ঝেঁপে বৃষ্টি নামে কলকাতায়। যদিও কলকাতার বাইরে বৃষ্টি হয়নি। সেপ্টেম্বরে কী হবে? সঞ্জীববাবু বলছেন, ”বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি হয়েছে, এর হাত ধরে শনিবার থেকে বৃষ্টি বাড়ার সম্ভাবনা।” নয়াদিল্লি মৌসম ভবনও সেপ্টেম্বরে স্বাভাবিক বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে।

বৃষ্টি এলে যদি ভ্যাপসা গরম একটু কমে! ঘুম আসে চোখে!