
কলকাতা: বাংলাদেশের ভোটারের নাম কেন বাংলার ভোটার তালিকায় থাকবে? এবার প্রশ্ন তুলে দিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার শেক্সপিয়ার সরণীতে কালীপুজোর উদ্বোধন করতে গিয়ে নিজের ভবানীপুর আসন প্রসঙ্গে মুখ খোলেন। নেপথ্যে সেই আউট সাইডার তত্ত্ব। কিছুদিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী ভবানীপুরের দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে নেত্রী বার্তা দেন, “ভবানীপুরটা পুরো আউটসাইডারদের দিয়ে ভরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পুরো একটা প্ল্যানিং করে।” খোদ মুখ্যমন্ত্রীর মুখে ‘আইটসাইডার’ শব্দবন্ধ ঝড়ের গতিতে বিতর্ক ছড়ায়।
তার ব্যাখ্যাও দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “বহিরাগত বলতে একটা রাজনৈতিক দলকে বলেছি, যারা আমাদের ভোটারের নামের পাশে দশটা নাম তোলে।” সঙ্গে এও বলেন, “নির্বাচনের নাম করে অনেক বহিরাগতেরা হোটেল, গেস্ট হাউস ভাড়া করে থাকে। আর যাঁদের অনেক টাকা তাঁরা ফ্ল্যাট কিনে নেয়। সে তো এখানের বাসিন্দা নয়। কারও যদি এখানে নাম লেখা থাকে। আবার অন্য প্রান্তেও নাম থাকে। দু জায়গায় তো একজনের নাম থাকতে পারে না। যে কোনও এক জায়গায় নাম থাকবে। এটা চিটিং নয়?”
প্রসঙ্গত, বাংলায় SIR আবহে যেখানে প্রথম থেকেই ভোটার তালিকা ঝাড়াই-বাছাই নিয়ে এত তরজা চলছে, যেখানে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, ভোটার তালিকা থেকে এক জনেরও নাম বাদ গেলে বড় আন্দোলনে নামবেন, সেখানে দাঁড়িয়ে আজ মুখ্যমন্ত্রী নিজেই কার্যত মেনে নিলেন, অনেক ভোটারই বাংলার নন।
মুখ্যমন্ত্রী বললেন, “কেন মহারাষ্ট্র, দিল্লির ভোটার তালিকা মেনে ভোট দেওয়ার পর মুর্শিদাবাদ, মালদহ, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভোটার তালিকাতেও নাম থাকবে?” অর্থাৎ বিরোধীরা যে অভিযোগ করছেন, অনেক ভোটার এমন রয়েছে, যাঁদের লিঙ্কই পাওয়া যাচ্ছে না, তাহলে কি সেটা কার্যত মান্যতা পেল? প্রশ্ন উঠছেই। বিজেপি অবশ্য বলছে, বহু বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরও নাম রয়েছে, যাঁরা আদতে ভারতীয় নন। তবে ভারতীয় সংখ্যালঘুদের নাম বাদ যাবে না বলেও বারবার আশ্বস্ত করছেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এবার এই বাংলাদেশি ভোটার প্রসঙ্গেও মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সত্যি তো বাংলাদেশের ভোটারের নাম কেন বাংলার ভোটার তালিকায় থাকবে?”
বঙ্গে ঘুরে গিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের টিম। এখন বাংলায় ম্যাপিং অ্যান্ড ম্যাচিংয়ের কাজ চলছে। BLO-দের বারবার কমিশনের তরফ থেকে সতর্ক করা হয়েছে। বাংলার এমন কিছু জেলা রয়েছে, যেখানে হঠাৎ করে জনবিন্যাস বেড়ে গিয়েছে, ভোটার তালিকায় বিস্তর গড়মিল, অনেকের লিঙ্কও পাওয়া যাচ্ছে না। বিরোধী দলনেতা বারবার বলছেন, সঠিকভাবে SIR হলে, বাংলায় এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশি সংখ্যালঘুদের নাম বাদ যাবে। সংখ্যাটা শুক্রবার অবশ্য ২ কোটিরও বেশি বলে দাবি করেছেন তিনি। খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, বাংলায় একজন অনুপ্রবেশকারীদেরও বরদাস্ত করা হবে না। সেখানে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর এহেন মন্তব্য যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ।