
কলকাতা: ‘আগুন লেগেছে…আগুন লেগেছে’ মঙ্গলবার সন্ধেবেলা এই চিৎকারেই তপ্ত হয়েছিল মেছুয়া বাজারে অবস্থিত বেসরাকারি একটি হোটেল। প্রাণ বাঁচাতে রীতিমতো ছোটাছুটি করতে থাকেন সেখানে উপস্থিত সকলে। হোটেল কর্মী থেকে সেখানে আগত অতিথি, সকলেরই তখন মরিয়া পালাতে। কেউ-কেউ উপায় না দেখেই হোটেলের জানালা থেকে ঝাঁপ দেন। তাঁদের মধ্য়ে একজন হলেন সঞ্জয় দাস। যিনি সংশ্লিষ্ট এই হোটেলের কর্মী।
বুধবার টিভি ৯ বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সঞ্জয়বাবু জানালেন তাঁর বীভৎস অভিজ্ঞতারা কথা। বিগত চার বছর ধরে এই হোটেলে কাজ করছিলেন সঞ্জয়। তবে এমন ভয়াবহ ঘটনার সাক্ষী থাকতে হবে তাঁকে তা হয়ত ভাবেননি। তিনিও গতকাল আগুন থেকে বাঁচতে তিনতলা থেকে ঝাঁপ দেন। তারপর তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। প্রাণে বাঁচেন তিনি। তবে সঞ্জয়বাবুর মতো সকলে বাঁচতে পারেননি। এই হোটেলরই অপর এক কর্মী মনোজ পাসোয়ান ঝাঁপ দিয়েছিলেন। তবে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর।
বর্তমানে নিজের বাড়িতেই শুয়ে রয়েছেন সঞ্জয় দাস। কষ্ট হচ্ছে পুরো শরীরে। চোখ খুলতেও পারছেন না তিনি। তীব্র যন্ত্রণা আর কষ্ট নিয়েই সাক্ষাৎকার দিলেন টিভি ৯ বাংলাকে। জানালেন অভিশপ্ত দিনের কথা। সঞ্জয়বাবু বলেন, “আমি পাঁচতলায় কাজ করছিলাম। সেই সময় দেখি প্রচুর ধোঁয়া। আমি চেষ্টা করছিলাম সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে যাওয়ার। তারপর সিঁড়ি ধরে ছাদে উঠলাম। শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল প্রবল। এরপরই বিল্ডিং ধরে ধীরে ধীরে নামার চেষ্টা করছিলাম। তখন তিন তলা থেকে পড়ে যাই। এরপর আমার বন্ধুরা হাসপাতালে নিয়ে যাই…।”
বস্তুত, মঙ্গলবার সন্ধে নাগাদ বিধ্বংসী আগুন লাগে মেছুয়া বাজারের সংশ্লিষ্ট হোটেলে। পুরো হোটেলই প্রায় ‘গেস্টে’ ভর্তি ছিল। এরপর আগুন লাগতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। প্রাণ বাঁচাতে কেউ উঠে গিয়েছিলেন কার্নিশে। কেউ বা চড়েছিলেন ছাদে। কেউ আবার জানালা থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন নিচে। সময় বাড়তেই জানা যায় চোদ্দজনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের রয়েছে দুই শিশুও। কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণের পর বের করা হয় একের পর এক মৃতদেহ। ঘটনার পর পালিয়ে গিয়েছেন হোটেলের মালিক। ইতিমধ্যেই মৃতদের পরিবারের উদ্দেশ্যে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।