কলকাতা:ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষা নিটে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। টাকার বিনিময়ে এক্ষেত্রেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। নিট পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ছাত্র সমাজের ভবিষ্যৎ ও সমাজব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন বর্তমান চিকিৎসক সমাজ। নিটের মতো এত বড় পরীক্ষাতেও দুর্নীতি হতে পারে, চিকিৎসক, যাঁদের হাতে বিশ্বাস করে মানুষ ছেড়ে দেন নিজেদের শরীর, তাঁরাই দুর্নীতি করে ডাক্তারি পড়তে এসেছেন! এসব ভাবতেও পারছেন না চিকিৎসকদের একাংশ। ডাক্তারির সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষায় কেলেঙ্কারির সাতসতেরো দেখে ক্ষোভে ফুঁসছে বাংলার চিকিৎসক সমাজ। TV9 বাংলায় সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ করলেন স্নায়ুরোগের বিশিষ্ট চিকিৎসক বিমানকান্তি রায়। রাজ্যের প্রথম সারির মেডিক্যাল কলেজ এসএসকেএমের শিক্ষক-চিকিৎসকের সাফ কথা, কেলেঙ্কারি কালি মুছতে হলে কেন্দ্রীয় সরকারকে সদিচ্ছা দেখাতে হবে। একই সঙ্গে কেলেঙ্কারির ভাগীদার ছাত্রদের অভিভাবকদের ভূমিকারও কড়া সমালোচনা করেন চিকিৎসক বিমান রায়।
চিকিৎসক বলেন, “উদ্বেগের জায়গা দুটো। প্রথমত, চিকিৎসকের প্রথম ও প্রাথমিক কাজ হচ্ছে রোগীকে চিকিৎসা করে সুস্থ করে তোলা। দ্বিতীয়ত, শিক্ষক চিকিৎসক হিসাবে আমার কর্তব্য এমন কয়েকজন শিক্ষক তৈরি করা, সত্যিকারের ভাল চিকিৎসক হয়ে নিজেদের গড়ে তুলবেন। বর্তমানে যা পরিস্থিতি, তাতে আমার দুটো বিশ্বাসেই আঘাত লাগছে। যে ধরনের ছাত্রছাত্রীরা এভাবে ভর্তি হচ্ছেন, তাঁরা দুর্নীতি পরায়ণ, লোভী। চিকিৎসক কেন, ছাত্র হওয়ারই যোগ্য নন।”
চিকিৎসকের কথায়, যাঁরা কেলেঙ্কারির পথে ডাক্তারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ তাঁদের ছাত্র হওয়ারই যোগ্যতা নেই। দুর্নীতিপরায়ণ ছাত্রদের অভিভাবকদের মানসিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন চিকিৎসক। তিনি বলেন, “ওরকম ছাত্রছাত্রীদের পড়াতে হবে, এটা ভেবেই খারাপ লাগছে। এই গোটা দুর্নীতিতে অসাধু রাজনীতিক, দুর্নীতিপরায়ণ প্রশাসনিক কর্তা ব্যক্তিদের দিকে আঙুল উঠছে। দুর্নীতি যুগে যুগে হচ্ছে। কিন্তু যেটা সব থেকে ভাবাচ্ছে, যে সমস্ত বাবা-মা ছেলেমেয়েদের এভাবে ডাক্তার করতে চাইছেন, তাঁদের প্রতি ঘৃণা হয়। তাঁদের চিহ্নিত করতে পাচ্ছেন, তাঁদের সমাজ থেকে বিচ্যুত করতে পারছেন, তাহলে সমাজের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।”
চিকিৎসকের স্পষ্ট বক্তব্য, দুর্নীতির সঙ্গে গরিব বড়লোকের ব্যাপার নয়, লড়াইটা হচ্ছে দুর্নীতির সঙ্গে মানুষের। সরকারের এমন কিছু পদক্ষেপ করা উচিত, যাতে মানুষ বুঝতে পারে, প্রশাসন এই ব্যাপারটা নিয়ে সতর্ক।
চিকিৎসক নিজেই মনে করেন, এহেন পরিস্থিতিতে রোগী-চিকিৎসকের সম্পর্ক আরও তলানিতে ঠেকবে। কেউ কাউকে আর বিশ্বাস করব না।