NEET: ‘প্রশ্নপত্রে ফারাক নেই, গ্রেস মার্ক কেবল নজর ঘোরানোর জন্য’, ছেলে NEET দিয়েছেন এবারই, কোন ফাঁকে র‌্যাঙ্ক জালিয়াতি, ধরিয়ে দিলেন চিকিৎসক দম্পতি

NEET: চিকিৎসকের দাবি, "আমি মা হিসাবে চাইছি, NTA কোর্স কারেকশন করুক। গ্রেস মার্ক কাদের দিয়েছে, কতটা দিয়েছে, সেটা প্রকাশ্যে আনুক। যেখানে সমস্যা হয়েছে, সেখানে NEET আবার নেওয়া হোক। স্কোরটা যেন জলে না ফেলে দেয়। এই স্কোর অনেক কষ্ট করে করতে হয়।"

NEET: প্রশ্নপত্রে ফারাক নেই, গ্রেস মার্ক কেবল নজর ঘোরানোর জন্য,  ছেলে NEET দিয়েছেন এবারই, কোন ফাঁকে র‌্যাঙ্ক জালিয়াতি, ধরিয়ে দিলেন চিকিৎসক দম্পতি
চিকিৎসক দম্পতি ও তাঁদের ছেলে Image Credit source: TV9 Bangla

| Edited By: শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী

Jun 23, 2024 | 1:57 PM

কলকাতা: সর্ব ভারতীয় স্তরে নিট কেলেঙ্কারির ব্যাপকতা মারাত্মক। ১৮ পার করে সদ্য যে ছেলেমেয়েগুলো জীবনের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখছিল, তাদের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার। কলকাতার চিকিৎসক দম্পতি অরুণাংশু বেড়া ও মধুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছেলে অংশুমানও এবার নিট পরীক্ষা দিয়েছিলেন। স্কোর করেছিলেন ৬৫৫। র‌্যাঙ্কিং হওয়ার কথা ছিল ভাল, কিন্তু হয়েছে ২২ হাজারেরও বেশি। কীভাবে হয়েছে দুর্নীতি? তারই একটা বড় আভাস দিলেন চক্ষু বিশেষজ্ঞ মধুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশাসন গোটা প্রক্রিয়ার ওপর ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তিনি।

চিকিৎসক মধুমিতা বলেন, “১৮ বছরের পর জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। ছেলেমেয়েরা অনেক আশা করে পরীক্ষা দেয়। বর্তমানে ওদের একটা ভীষণ খারাপ দিকের সামনে পড়তে হয়েছে। ওদের পরিশ্রমের কেউ দাম দিল না। ওদের তো এখন এই পরীক্ষা পদ্ধতির ওপর থেকেই বিশ্বাস-ভরসা হারিয়ে যাচ্ছে। ২৪ লক্ষ ছেলেমেয়ের ভরসা হারিয়ে যাচ্ছে।”

দুর্নীতি নিয়ে বিস্ফোরক দাবি করেন চিকিৎসক। মধুমিতা জানান, প্রথমে সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে গ্রেস মার্কের কথা। গ্রেস মার্ক দেওয়া হয়েছিল। তারপর বলা হয়েছে ৬ টা সেন্টারে বেনিয়ম হয়েছে। তাঁর কথায়, “আমি যদি ধরে নিচ্ছি এক-একটা সেন্টারে ৫০০ টা জন রয়েছে, তাহলে ধরে নেওয়া যাক ৩ হাজারের মতো। তাহলে মোট সাড়ে চার হাজার। আমাদের কাছে খবর রয়েছে, অ্যাডমিশন প্রসেস ক্লোজ হওয়ার ১৬ মার্চের পর একটা দরজা খোলা রাখা হয়েছিল, ৯ ও ১০ এপ্রিল। আর ওই সময় ২৫ হাজারের মতো ক্যান্ডিডেটকে ঢোকানো হয়েছে।”

সরকারি চিকিৎসক প্রশ্ন তোলেন, “কেন এই নিউ উইন্ডো খোলা হল, তার কোনও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। এবং এটা খুব কম লোকই জানত, কেন খোলা হয়েছিল, ৮ তারিখ তথ্য দেওয়া হয়েছিল আর ৯ ও ১০ তারিখ অ্যাডমিশন। বলা হয়েছিল, সাইট ক্র্যাশ করেছিল, তাই কয়েকজন পরীক্ষার্থী নাকি NTA এর কাছে আবেদন করেছিল। প্রথম কথা হচ্ছে NTA কখনই একটা দিনও অতিরিক্ত দেয় না। পরীক্ষার হলেও সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পর ১ মিনিটও গ্রেস টাইম দেয় না। সেখান থেকে কীভাবে গ্রেস মার্ক দিল? আমার মনে হচ্ছে, গ্রেস মার্কের কথা বলে কেবল নজর অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে, গ্রেস মার্কের প্রশ্নটা কেবল ১৫৬৩ জনের। সেটা কেউ জানে না। NTA ডেটা অডিট করুক, সেটা ১৫৬৩ নাকি ১৫ হাজার ৬৩।”

এইভাবে যদি বাবা-মায়েরা চান তাঁদের ছেলেমেয়েকে ডাক্তার বানাতে, তাহলে ভবিষ্যৎ অত্যন্ত খারাপ, মত চিকিৎসক সমাজের। মধুমিতা বলেন, “আমি নিশ্চিত, এইভাবে আমাদেরই ভবিষ্যতে ফেক ডাক্তারদের দিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। আমার ছেলে এই বছর নিট পরীক্ষা দিয়েছিল, স্কোর হয়েছিল ৬৫৫। আমি আশা করেছিলাম, ওর একটা ভালো কলেজে চান্স হয়ে যাবে। তারা পরিশ্রমের পুরস্কার পেল না। ওদের মানসিক অবস্থা এখন এমন হয়ে গিয়েছে, যে প্রতিষ্ঠানের ওপরই ভরসা রাখতে পারছে না। এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বিভিন্ন জায়গায় এই ধরনের অপরাধ হয়েছে।”

চিকিৎসকের দাবি, “আমি মা হিসাবে চাইছি, NTA কোর্স কারেকশন করুক। গ্রেস মার্ক কাদের দিয়েছে, কতটা দিয়েছে, সেটা প্রকাশ্যে আনুক। যেখানে সমস্যা হয়েছে, সেখানে NEET আবার নেওয়া হোক। স্কোরটা যেন জলে না ফেলে দেয়। এই স্কোর অনেক কষ্ট করে করতে হয়।”

কঠোর পরিশ্রম করার কোনও মূল্য পেলাম না, বলছেন অংশুমান। তিনি বলেন, ” এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এরকম স্কোর করার পরও এরকম র্যাঙ্ক হচ্ছে। আশা হচ্ছিল, ভাল জায়গায় পড়াশোনাটা করতে পারব। র্যাঙ্ক আসার পর সেই আশা নেই। তিন বছরের পরিশ্রম জলে। পিছনের দিকে মেডিক্যাল কলেজে চলে যাচ্ছি। অবিচার সবার সঙ্গে হচ্ছে। অযোগ্যরা এই লাইনে ঢুকে পড়বে। তিন বছর ধরে ওরা হয়তো ওতো পরিশ্রমই করেনি। মনে যে ভালো লাগা থাকে, সেটা আর বেঁচেই নেই। প্রশ্নপত্র আগের বছরের মতোই। কখনও মনেই হয়নি।”

অংশুমানের বাবা অরুণাংশু বেরা জানাচ্ছেন, দুটো বছর তাঁদের কীভাবে কেটেছে। আর পাঁচ জন সাধারণ বাবা-মায়ের মতোই চিকিৎসক বলেন, “দুটো বছর আমাদের জীবনটাই পুরো অন্য খাতে বয়েছে। আমদের সব আউটকার্স বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ও পড়াশোনা করত। আর আমরা মানসিকভাবে ওর পাশে থাকার চেষ্টা করতাম। র্যাঙ্ক নিয়ে যে জালিয়াতি হতে পারে, তা ভাবতেও পারিনি আমরা। যে সমস্ত জায়গায় দুর্নীতি ধরা পড়েছে, সেখানেই পুনরায় পরীক্ষা নেওয়া হোক।”