কলকাতা: সাংবাদিকরা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই প্রস্তুত ছিলেন। কখন তিনি আসবেন, খাতা-কলম, বুম হাতে অপেক্ষা করতে হয়েছে তাঁদের। দুপুর আড়াইটেয় প্রেস ক্লাবে আসার কথা ছিল সাংসদ নুসরত জাহানের। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার মিনিট কুড়ি পর তিনি আসেন। সে সময়েই সাংবাদিকরা তাঁকে ঘিরে ধরেছিলেন। অত্যন্ত স্বাভাবিক কয়েকটি প্রশ্ন করেছিলেন, উত্তর দেননি। আশা করা গিয়েছিল, সাংসদ নুসরত তাঁর বিরুদ্ধে ওঠার অভিযোগের ‘কার্য-কারণ’ সম্পর্কের ব্যাখ্যা দেবেন। তবে দৃশ্যত, এদিনের সাংবাদিক বৈঠকের শুরু থেকেই নুসরতের গান পয়েন্টে ছিলেন সাংবাদিকরাই। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ও সেই সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত, সম্প্রচারিত করার জন্য সাংবাদিকদেরই ঘায়ে দোষ চাপালেন। ‘নুসরত জাহান’ এখন বাংলার রাজনীতিতে আলোড়ন ফেলেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মীদের ফ্ল্যাট দেওয়ার নাম করে কোটি কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। যে সংস্থার বিরুদ্ধে মূলত অভিযোগ, সেই ‘সেভেন সেন্সেস’ কোম্পানির এক জন ডিরেক্টর ছিলেন নুসরত। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, দুর্নীতির টাকাতেই পাম অ্যাভিনিউয়ের কোটি টাকার ফ্ল্যাট কিনেছেন নুসরত।
সাংবাদিক বৈঠকে এই সংক্রান্ত বলা ভাল, কেবল এই একটি বিষয়েরই ব্যাখ্যা দিলেন নুসরত। তাঁর দাবি, তিনি কোনও রকম দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত নন। সংস্থা থেকে ১ কোটি ১৬ লক্ষ ৩০ হাজার ২৮৫ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। সেই ঋণ তিনি ২০১৭-র ৬ মে সুদ-সহ ফেরত দিয়েছেন। ব্যস, কেবল এই একটাই যুক্তি, যেটিকে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ‘সাফাই’ বলতে নারাজ।
আর বাকি সবটা যা যা তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সবই সংবাদমাধ্যমেরই ‘অতি সক্রিয়তা’ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে সাংসদ নুসরতকে দৃশ্যত বিরক্ত দেখা গিয়েছে। সাংবাদিক বৈঠক চলাকালীনই তাঁকে মেজাজ হারাতে দেখা গিয়েছে। কিছুটা জোর গলায় কথা বলেছেন।
দেখা গিয়েছে, সাংবাদিক বৈঠক করতে করতেই চেয়ার ছেড়ে উঠে মাইক হাতে চিৎকার করে কথা বলেছেন তিনি। এমনকি তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে এও বলেছেন, “আমি কি আপনার ব্যাঙ্কের নথি দেখতে চেয়েছি? দেখতে চাইনি তো, তাহলে আপনিও সেটা করতে পারেন না। আর সেটা করতে হলে আইনি পদ্ধতিতে করুন।”
এমনকি তিনি এও বলেন, “আমি আমার তরফ থেকে ক্ল্যারিফিকেশন দিয়ে দিয়েছি। এরপর যদি আপনাদের আরও কোনও গল্প বানাতে হয়, গল্প ফাঁদতে হয়, সেটা আপনাদের ব্যাপার।”
এত্ত বড় একটা অভিযোগ, কোটি কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগ তাও আবার ব্যাঙ্ক কর্মীদের সঙ্গে, এমন একটি ইস্যু যা মোটামুটি রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল ফেলেছে। কিন্তু তার ‘ক্ল্যারিফিকেশন’ শেষ মাত্র সাত মিনিটেই। অর্থাৎ সাত মিনিটে সাংবাদিক বৈঠক শেষ করলেন নুসরত। চেয়ার ছেড়ে উঠে গেলেন। সাংবাদিকরা তখনও তাঁর উদ্দেশে ন্যায্য প্রশ্ন ছুড়ে যাচ্ছেন, উত্তর দেননি তিনি। না শোনার ভান করেই বেরিয়ে গেলেন প্রেস ক্লাব থেকে।
তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এই সংস্থা প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত ছিল কি না, তা কি আপনি জানতেন? কেন ব্যাঙ্কের বদলে সংস্থা থেকে ঋণ নিয়েছিলেন? তারও জবাব দেননি। কারণ এদিনের সাংবাদিক বৈঠকের শুরুতেই নুসরতের ‘সাফাই’ ছিল, তিনি সাফাই দিতে আসেননি, কারণ সাফাই তাঁরা দেয়, যাঁরা অভিযুক্ত। তাই কোনও কথার উত্তর না দিয়েই, কেবল নিজেরটুকু বলে সাত মিনিটেই ‘সাংবাদিক বৈঠক’ নামক ‘সাফাই’ দিলেন নুসরত।