আপনার প্রয়োজনেই আবার কংগ্রেসের কাছে আসতে হবে, অধীরের মন্তব্যে নয়া সমীকরণের ইঙ্গিত
রাজ্য রাজনীতির অন্দরে অধীরের এই মন্তব্য ভালই ঝড় তুলেছে। 'সাম্প্রদায়িক' বিজেপিকে কোন ঠাসা করতে একুশে বাম-কংগ্রেস-তৃণমূল এককাট্টা হয়ে যাবে না তো, প্রশ্ন কিন্তু ইতিমধ্যেই উঠতে শুরু করেছে।
কলকাতা: বঙ্গ রাজনীতিতে এখন দলবদলের পালা চলছে। রাজ্যের শাসকদল ছেড়ে কেন্দ্রের শাসকদলে ঢোকার হিড়িক। একুশের বিধানসভা ভোটের আগে এই দলবদল তৃণমূলের অন্দরে যেমন অস্বস্তি বাড়াচ্ছে, তেমনই চাঙ্গা করছে রাজ্যের গেরুয়া শিবিরকে। শাসকদলে ভাঙন যত বাড়ছে, ততই চওড়া হচ্ছে বিরোধীদের মুখের হাসি। শুধু বিজেপি নয়, তালিকায় বাম,কংগ্রেস বাদ নেই কেউই। যেমন কংগ্রেসের প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী। তৃণমূলের এই ভাঙন তাঁর কাছে, ধর্মের কলের সমান। যা বিজেপির বাতাস পেয়ে নড়তে শুরু করেছে। তবে এই আবহে সবথেকে তাৎপর্যপূর্ণ প্রদেশ সভাপতির ভবিষ্যৎবাণী। মমতার নাম না করেই তিনি শুনিয়েছেন, “আপনাকে আবার কংগ্রেসের কাছে আসতে হবে। কংগ্রেসের প্রয়োজনে নয়, আপনার নিজের প্রয়োজনে।”
এই কথার মাধ্যমে কোনও বার্তা কি দিতে চাইলেন অধীর? ভবিষ্যতের রাজনীতিতে নয়া কোনও সমীকরণের প্রচ্ছন্ন সম্ভাবনার কথা শুনিয়ে রাখলেন না তো? মমতার প্রয়োজন বলতে কী বলতে চাইলেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মত, আগামী বিধানসভা ভোট শুধু শাসকদলের জন্যই নয়, বিরোধী বাম, কংগ্রেস সকলের কাছেই সমান গুরুত্বপূর্ণ। বিজেপি যেভাবে বাংলায় শক্তি বাড়াচ্ছে, তাতে একুশের ফলাফল অনেক কিছুই হতে পারে। এমনও হতে পারে সরকার গড়তে মমতাকে বিরোধীদের হাত ধরতে হল। এই বিরোধী অবশ্যই সিপিএম, কংগ্রেস।
আরও পড়ুন: রাজ্যপাল পদ থেকে ধনখড়ের অপসারণ চেয়ে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি তৃণমূলের
সম্প্রতি একাধিকবার বিজেপিকে বিঁধতে বামেদের একাংশের প্রতি সুর নরম করেছেন মমতা। তৃণমূল সুপ্রিমোকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘বামেদের সবাই খারাপ নন’। যে বামেদের সরিয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল, সেই বামের প্রতি নরম মনোভাব আলাদা করে নজর কাড়ছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। আর কংগ্রেসের তো তিনি ঘরের মেয়ে। সেক্ষেত্রে হাতের উপর হাত রাখা খুব একটা কঠিন কাজ হবে না। রাজনীতির অলিখিত নিয়মই হল, বন্ধু শত্রু কেউই চিরস্থায়ী নয়। তাই অধীরের মন্তব্যের পর দুইয়ে দুইয়ে চার করছেন অনেকেই।
মঙ্গলবার বোলপুরে সভা করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিতীর্থে দাঁড়িয়ে মমতা তোপ দেগেছেন, বিধায়ক কেনা গেলেও দল কেনা যায় না। মমতার এই কথা শুনে ১৯৯৮ পরবর্তী সময়ের কথা মনে পড়ে গিয়েছে অধীরের। কংগ্রেস ততদিনে মমতাকে বহিষ্কার করেছে। মমতা নিজের দলও তৈরি করেছেন। কংগ্রেসের একাধিক মুখ মমতার হাত ধরে কংগ্রেস ছেড়েছিলেন সেদিন। অধীর এখনও মমতাকে ‘দল ভাঙানোর নেত্রী’ বলেই কটাক্ষ করেন। কিন্তু মঙ্গলবার অধীরের মুখে শোনা গিয়েছে, “আপনাকে আবার কংগ্রেসের কাছেই আসতে হবে। কংগ্রেসের প্রয়োজনে নয়, আপনার নিজের প্রয়োজনে।” রাজ্য রাজনীতির অন্দরে অধীরের এই মন্তব্য ভালই ঝড় তুলেছে। ‘সাম্প্রদায়িক’ বিজেপিকে কোন ঠাসা করতে একুশে বাম-কংগ্রেস-তৃণমূল এককাট্টা হয়ে যাবে না তো, প্রশ্ন কিন্তু ইতিমধ্যেই উঠতে শুরু করেছে।