AMTA Student Death: মমতার ‘ফেভারিট ছেলে’ আনিস! রাজনীতির দড়ি টানাটানি মৃত ছাত্রনেতাকে ঘিরে
AMTA Student murder: মৃত ছাত্রনেতা আনিস খানকে তৃণমূল ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। রাজনীতির দড়ি টানাটানি চলছে আনিসকে ঘিরে। আর এখন বঙ্গীয় রাজনীতিতে লাখ টাকার প্রশ্ন একটাই! আনিস... তুমি কার?
কলকাতা : আনিস তুমি কার? আমতার ছাত্রনেতার মৃত্যু (Anis Khan Death) রহস্যের সঙ্গে সমান্তরালভাবে আরও একটি রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে। তা হল আনিসের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে। আনিসের সঙ্গে কোন শিবিরের ঘনিষ্ঠতা বেশি! সেটাই যেন প্রমাণ করার চেষ্টায় লেগে পড়েছে সব রাজনৈতিক দলগুলি। বামেদের দাবি, মৃত্য ছাত্রনেতা তাদের সংগঠনের সদস্য ছিলেন। আইএসএফ আবার বলছে, আনিস তাদের দলের লোক। পিছিয়ে নেই কংগ্রেসও। তাদের বক্তব্য, আনিস নাকি তাঁদের ছাত্র সংগঠন ছাত্র পরিষদের সদস্য ছিল। এখন আবার মৃত ছাত্রনেতা আনিস খানকে তৃণমূল ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। রাজনীতির দড়ি টানাটানি চলছে আনিসকে ঘিরে। আর এখন বঙ্গীয় রাজনীতিতে লাখ টাকার প্রশ্ন একটাই! আনিস… তুমি কার?
মোদ্দা ব্যাপারটা হল, মৃত্যুর আগে আনিস খান একাধিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এখনও পর্যন্ত অন্তত পাঁচটি ছাত্র সংগঠন করে ফেলেছেন আনিস। কংগ্রেসের থেকে যে দাবি করা হচ্ছে, তা নিছক ভুল নয়। এক জমানায় ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আমতার নিহত ছাত্রনেতা। এরপর একাধিক বাম সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। কখনও এসএফআই, কখনও এআইএসএফ আবার কখনও আইসা করেছে সে। ২০২১ সালের ভোটের পরে আবার সংখ্যালঘুদের উন্নয়নকল্পে সিদ্দিকী ভাইজানদের আইএসএফে যোগ দিয়েছিলেন। ফলে বাস্তবিক অর্থে, আনিস খানের উপর কোনও একটি নির্দিষ্ট দলের একক অধিকার রয়েছে, এমনটা হয়ত বলা যায় না। তবে মুখ্যমন্ত্রীর ফেভারিট ছেলে হয়ে ওঠার আগে পর্যন্ত নিহত আনিস খান তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে কোনও খবর পাওয়া যায়নি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, হঠাৎ করে মমতার ফেভারিট লিস্টে কীভাবে ঢুকে পড়লেন আনিস?
সোমবার নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠকে ঠিক কী বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী?
আমতার ছাত্রনেতা আনিস খানের মৃত্যুতে যখন পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, যখন রাতের অন্ধকারে পুলিশের পোশাক গায়ে কারা এসেছিল তার উত্তর মিলছে না, যখন ঘটনার আড়াই দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও অভিযুক্তরা অধরা… তখন নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠক করে গোটা বিষয়টির রাশ নিজের হাতে নিতে উদ্যত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, “ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। কোনও মৃত্যুই আমাদের কাছে কাম্য নয়। আনিসের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ভাল ছিল। যাঁরা এখন টেলিভিশন দর্শনধারী হতে গিয়েছেন, তাঁরা জানেন না আনিস আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। আমাকে অনেক সাহায্যও করেছেন নির্বাচনে। কাজেই ও আমাদের ফেভারিট ছেলে। এটা ঠিক নয়।” আনিস খানকে ঘিরে মুখ্যমন্ত্রীর এই ধরনের দাবির পর থেকেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক টানাপোড়েন।
‘আনিস ভোটে সাহায্য করেছে’, কেন বলছেন মমতা?
উল্লেখ্য, বিগত বিধানসভা নির্বাচনে এক নতুন ধরনের ট্রেন্ড দেখা গিয়েছিল বাংলার রাজনীতিতে। ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি। গো-বলয়ের রাজনীতিতে এই প্রথা অনেকদিন ধরে চলে আসলেও, বাংলার রাজনীতিতে একেবারে নতুন। এবারের ভোটে তৃণমূলের মূল মন্ত্রই ছিল বিজেপি ঠেকাও। আর বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল থেকেই স্পষ্ট যে তৃণমূল তাতে যথেষ্ট সফলও হয়েছিল। এদিকে, আমতার বিধায়কও বলছেন, আনিস যথেষ্ট পরিচিত ছেলে এলাকায়। এমনকী, আনিস কখনও তৃণমূলের পথে বাধাও হয়ে ওঠেনি বলেও বলতে শোনা গিয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বকে। তার উপর ছাত্র নেতা আনিস খান ছিলেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। বাংলার রাজনীতিতে ধর্মীয় মেরুকরণের ভিত্তিতে যদি কোনও ধূসর জায়গা বাদ দিয়ে সাদা-কালো ভাগাভাগি করা যায়, তাহলে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কের উপর দখল মূলত তৃণমূলের। অন্তত এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এছাড়া বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসুও সোমবার আনিসের সঙ্গে জেহাদি পোস্টের একটি তত্ত্ব তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। এক্ষেত্রে রাজনীতির সমীকরণ যদি দুইয়ে দুইয়ে চার করা যায়, তাহলে আনিস সেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য এবং স্থানীয় তৃণমূলের জন্য সমস্যার কারণ না হয়ে ওঠাতেই কি এই ধরনের কথা বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? অন্তত এমনটাই ব্যাখ্যা দিচ্ছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একটি বড় অংশ।
আনিসের সঙ্গে ভাল যোগাযোগ ছিল, দাবি মমতার
আনিস খানের মৃত্যুর পর তৃণমূলের যুবনেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য তাঁকে সহযোদ্ধা হিসেবে সম্বোধন করেছেন। দেবাংশুর দাবি, আনিস তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন। সেই সংক্রান্ত বিষয়ে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারের একটি স্ক্রিনশট শেয়ার করেছিলেন দেবাংশু। সেখানে দেখা যাচ্ছে আনিস খানের ছবি ও নাম সহ একটি প্রোফাইল থেকে দেবাংশুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে। রাজনীতির কারবারিদের একাংশের ধারণা, সামগ্রিকভাবে এই সব কারণের জন্য মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূলের সঙ্গে আনিসের যোগাযোগের কথা বলে থাকতে পারেন বলে মনে করেছেন অনেকে।
আনিস কেন ফেভারিট মমতার?
উল্লেখ্য, আনিস খান মৃত্য়ুর পর থেকেই প্রতিবাদ ও আন্দোলনের ভাষা আরও তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। এসএফআই, ডিওয়াইএফআই, সিপিএম – বামেদের ছোট – মেজ – বড় কোনও সংগঠনই পিছিয়ে নেই। ভোটের আগে বামেদের ব্রিগেডের মঞ্চেও তাঁকে দেখা গিয়েছিল। বামেদের একাধিক প্রথম সারির নেতাদের সঙ্গেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। এই পরিস্থিতিতে আনিস খানের নামের সঙ্গে নিজেদের দলের একটি ছাপ বসানো গেলে, আন্দোলনের তীব্রতা কিছুটা কমানো যেতে পারে। তার উপর বামেদের যে একের পর এক আক্রমণ, সেই থেকেও কিছুটা নিস্তার মিলতে পারে। সেই কারণেই সম্ভবত মমতার ফেভারিট লিস্টে ঢুকে পড়েছেন আনিস খান।
আরও পড়ুন : AMTA Student Death: আনিসের বিরুদ্ধে পকসো! পুরানো ৪ মামলাকেই ঢাল করছে পুলিশ?