Explained: পিছিয়ে যাবে পরীক্ষা? ‘দাগিদের প্যাঁচেই’ এসএসসি-র আকাশে অনিশ্চয়তা

SSC 2016 Panel Reexam: কয়েক মাস আগেই পরীক্ষার জন্য় নয়া বিধি জারি করে এসএসসি। তাতে দেখা যায়, একাধিক নিয়ম বদল হয়ে গিয়েছে। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়েছিল ওএমআর শিট ঘিরে। ২০১৬ প্য়ানেলের ওএমআর শিট না মেলায় চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি বহু অযোগ্যদের। ১ হাজার ৮০৬ জনের নাম চিহ্নিত অযোগ্যের তালিকায় দাখিল করা হলেও, গোটা প্য়ানেলকে ত্রুটিহীন করা একেবারেই সম্ভব হয়নি, বলে দাবি একাংশের।

Explained: পিছিয়ে যাবে পরীক্ষা? দাগিদের প্যাঁচেই এসএসসি-র আকাশে অনিশ্চয়তা
প্রতীকী ছবিImage Credit source: Tv9 Graphics

|

Sep 04, 2025 | 9:06 PM

কলকাতা: আগামী ৭ এবং ১৪ সেপ্টেম্বর নির্ধারিত দিনেই দু’টি স্তরে হবে স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়া। অর্থাৎ প্রথম দিনের পরীক্ষার জন্য হাতে সময় পড়ে মাত্র দু’দিন। চাকরিহারাদের একাংশ এখনও এই পরীক্ষার বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে গেলেও, একটা বড় অংশ আবার বুঝেও গিয়েছেন যে হারিয়ে ফেলা চাকরি ফিরে পেতে নতুন করে পরীক্ষায় বসা ছাড়া তাদের কাছে আর কোনও উপায় নেই। তাই আন্দোলন ছেড়ে পড়াশোনাতেই মন তাঁদের। কিন্তু পড়লেও চাকরি কি ফিরে পাওয়া যাবে? সেই নিয়ে রয়েছে আশঙ্কা।

শুধুই চাকরিহারারা নয়, আশঙ্কার মেঘ জমেছে এসএসসি দফতরের আকাশেও। হাজার জট কাটিয়ে, সুপ্রিম ভর্ৎসনা সহ্য করে অবশেষে নতুন করে পরীক্ষা আয়োজন করতে চলেছে তারা। কিন্তু প্রতিকূলতা রয়েছে সেখানেও। রয়েছে একাধিক চ্যালেঞ্জ, যা তাদের জন্য পেরনো কতটা সহজ হবে, তা এখন দেখার বিষয়। পাশাপাশি, নতুন করে আইনি জটে পড়তে হবে না তো, নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে এসএসসি-র মনে।

সুপ্রিম নির্দেশে নতুন নিয়ম

  • কয়েক মাস আগেই পরীক্ষার জন্য় নয়া বিধি জারি করে এসএসসি। তাতে দেখা যায়, একাধিক নিয়ম বদল হয়ে গিয়েছে। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়েছিল ওএমআর শিট ঘিরে। ২০১৬ প্য়ানেলের ওএমআর শিট না মেলায় চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি বহু অযোগ্যদের। ১ হাজার ৮০৬ জনের নাম চিহ্নিত অযোগ্যের তালিকায় দাখিল করা হলেও, গোটা প্য়ানেলকে ত্রুটিহীন করা একেবারেই সম্ভব হয়নি, বলে দাবি একাংশের। কিন্তু চলতি বছর যখন নতুন করে পরীক্ষা নিতে চলেছে এসএসসি। সেই সময় এই ওএমআর শিট সংরক্ষণের সময়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় রাজ্য়ের শিক্ষা দফতর। সাধারণভাবে পরীক্ষার পর এক বছর ওএমআর শিট সংরক্ষণ করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু এই বছরই তা বাড়িয়ে ১০ বছর করে দিয়েছে এসএসসি।
  • পাশাপাশি, এই নিয়োগের ক্ষেত্রে বেড়েছে নিয়োগ প্যানেলের মেয়াদ। যেখানে সাধারণভাবে একটি প্য়ানেলের সময়কাল ১ বছর থাকে, সেখানে এবার তা ১ বছর ৬ মাস করা হয়েছে।
  • চাকরিহারাদের সুবিধার্থে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেও দেওয়া হবে নম্বর। নতুন পরীক্ষার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ১০ নম্বর ধার্য করা হয়েছে। আগে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল ৫৫ নম্বরে। এবার লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হবে ৬০ নম্বরে।

চাকরিহারাদের উদ্বেগ

একটা অংশের চাকরিহারার দাবি স্পষ্ট, যোগ্যতার ভিত্তিতে পাওয়া চাকরির জন্য পুনরায় পরীক্ষা দিতে তাঁরা নারাজ। এসএসসি নিয়োগের প্রক্রিয়ার জন্য নতুন বিধি জারি করতেই প্রশ্ন উঠেছিল, পরীক্ষার্থীদের স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের নম্বর নিয়ে। এসএসসি প্রথমে জানিয়েছিল, প্রার্থীদের যোগ্য়তার ভিত্তিতে স্নাতক অথবা স্নাতকোত্তরে ৫০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। ২০১৬ সালেও এই নিয়ম বহাল ছিল। তবে তাতে ছিল কিছু শর্ত। যেমন, ২০১০ সালের আগে স্নাতক হওয়া প্রার্থীদের সাধারণ আসনের জন্য ন্যূনতম ৪৫ শতাংশ এবং সংরক্ষিত আসনের জন্য ৪০ শতাংশ নম্বর পেলেও চলত। অবশ্য এই বিধি পরবর্তীতে বদল করে এসএসসি। ফলে সাময়িক স্বস্তি পান চাকরিহারারা। কিন্তু এত বছর পর, নতুন করে পরীক্ষায় বসা তো কম ‘চ্যালেঞ্জিং’ নয়। মানসিক জটিলতা কাটিয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া বেশ কঠিন। হাতে মাত্র সময় আর দুই দিন।

এসএসসি-র আশঙ্কা

এসএসসির বিরুদ্ধে অভিযোগের অভাব নেই। অনিয়মের ফলেই যে এত বড় দুর্নীতি ঘটেছে, এই নিয়েও কোনও সন্দেহ নেই। সুপ্রিম নির্দেশ মেনে রাজ্য়ের স্কুল সার্ভিস কমিশন নয়া বিধি জারি করতেই চড়েছে বিতর্ক। আইনজীবী তথা সিপিএম সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেছিলেন, “২০১৬ সালের নিয়মের বাইরে গেলেই তা বাতিল হয়ে যাবে। ২০১৬ সালে যে নিরিখে পরীক্ষা হয়েছিল, সেই নিরিখেই পরীক্ষা হতে হবে। দুর্নীতির জন্য ২০১৬-র সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল হয়েছে। সেই চাকরির সুবিধা কেউ পেতে পারেন না, এটা বোঝা উচিত।”

শুধু তাই নয়, প্রশ্ন উঠছে দাগি শিক্ষকদের নিয়েও। গত শনিবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চিহ্নিত অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করে এসএসসি। যাতে প্রথম দফায় তুলে ধরা হয় মোট ১ হাজার ৮০৪ জনের নাম। পরবর্তীতে জুড়ে যায় আরও দু’জনের নাম। কিন্তু এই তালিকা কি সম্পূর্ণ ভাবে ত্রুটিহীন? এই নিয়ে বেশ দ্বিমত রয়েছে। তালিকায় ত্রুটি রয়েছে, তা যেমন বিরোধীদেরও দাবি তেমনই দাবি চাকরিহারাদের একাংশেরও। প্রশ্ন করেছে শীর্ষ আদালতও।

ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, এসএসসির নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনও ভাবেই দাগিরা আবেদন জানাতে পারবেন না। অর্থাৎ ১ হাজার ৮০৬ জন পরীক্ষার আগেই বাতিল। কিন্তু আরও যদি দাগি থেকে থাকে অন্তরালে? এই তালিকা প্রকাশের পর দাগিদের একাংশ কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন, তবে সেই মামলা খারিজ করেন বিচারপতি। এমনকি, তালিকা প্রকাশের দু’দিনের মাথায় এসএসসি-কেও দাগিদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন করে সুপ্রিম কোর্ট।

মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় কুমার ও বিচারপতি সতীশ চন্দ্র শর্মা এসএসসি-কে প্রশ্ন করেন, সিবিআইয়ের তালিকায় আরও নাম ছিল, এখানে এত কম নাম কেন? পাল্টা কমিশনের বক্তব্য, সিবিআই-এর তালিকায় যাঁদের নাম ছিল, তাঁদের সবাইকে নিয়োগ করা হয়নি। যে দাগিরা নিযুক্ত হয়েছিলেন, তাঁদের নামই তালিকায় রয়েছে। এই প্রসঙ্গে আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বলেন, “প্রথম যে তালিকা বার করেছে, সেটাকে তালিকা ১ বলে উল্লেখ করেছে, সেই রাতেই আমরা বলি, এক বিধায়কের মেয়ের নাম দেওয়া হয়নি। তারপর আবার আরেকটা সংযুক্তিকরণ আসে। ফলে পরিস্কার, কমিশনের পক্ষ থেকে যতটা পারছে, সংখ্যাটি কমিয়ে দেখানো হচ্ছে।”

বলে রাখা ভাল, দাগিদের তালিকা প্রকাশ হতেই সংখ্যাতত্ত্বের এই দ্বন্দ্ব নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন আইনজীবী ফিরদৌস শামিম। তাঁর দাবি, তালিকা সম্পূর্ণ নয়। এর বাইরে আরও অনেক অযোগ্য রয়েছেন।

এমতাবস্থায় একদিকে এগিয়ে আসছে পরীক্ষা। আর তার আগেই দাগি সংখ্য়া নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ। নতুন পরীক্ষা হলেও, তা কতটা স্বচ্ছতার সঙ্গে হবে? আগের অভিজ্ঞতাই ফিরে আসবে না তো চাকরিহারাদের মধ্য়ে? ভয় রয়েছে সেই নিয়েও। বৃহস্পতিবারই বিধানসভার বাইরে পরীক্ষা স্থগিতের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান চাকরিহারাদের একাংশ। এই পরিস্থিতিতে আদৌ নির্ঝঞ্ঝাট হবে ৭ ও ১৪ তারিখের পরীক্ষা, প্রশ্ন অনেক কিন্তু উত্তর নেই।