AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Explained: প্রথম পরীক্ষায় ‘পাশ’ রাজ্য! ‘লাভের গুড়’ আদৌ পাবে চাকরিহারারা?

Explained: পথে নেমেছেন চাকরিহারারা। তুলেছিলেন স্লোগান, চালিয়েছিলেন স্কুল পরিদর্শকের অফিসে অভিযান। আর এই সবকে কেন্দ্র করে চড়েছিল রাজনৈতিক পারদও। পরিস্থিতি সামাল দিতে চাকরিহারাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ও পরে শিক্ষামন্ত্রী।

Explained: প্রথম পরীক্ষায় 'পাশ' রাজ্য! 'লাভের গুড়' আদৌ পাবে চাকরিহারারা?
প্রতীকী ছবিImage Credit: Tv9 Graphics
| Updated on: Apr 18, 2025 | 12:19 AM
Share

কলকাতা: স্বস্তি, কিন্তু সেটা কার? একদিকে দাঁড়িয়ে ১৬ হাজারের অধিক ‘অযোগ্য চিহ্নিত নয়’ এমন শিক্ষক। অন্যদিকে, দাঁড়িয়ে রাজ্য সরকার। তার মাঝেই ঝুলছে স্বস্তি।

বৃহস্পতিবার, শীর্ষ আদালতে ছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আর্জিতে ‘অযোগ্য চিহ্নিত নয়’ এমন চাকরিহারাদের নিয়ে বিশেষ শুনানি। গত ৩ এপ্রিল এই শিক্ষকদেরই ‘চিহ্নিত অযোগ্যদের’ মাপকাঠিতে রেখে গোটা প্যানেল বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। তারপর থেকে বাংলা হয়ে বয়ে গিয়েছে ঘন ঘন ঝোড়ো হাওয়া। পেনের একটা খোঁচা চাকরি গিয়েছে হাজার হাজার। তৈরি হয়েছে হাহাকার।

পথে নেমেছেন চাকরিহারারা। তুলেছিলেন স্লোগান, চালিয়েছিলেন স্কুল পরিদর্শকের অফিসে অভিযান। আর এই সবকে কেন্দ্র করে চড়েছিল রাজনৈতিক পারদও। পরিস্থিতি সামাল দিতে চাকরিহারাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ও পরে শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু তারপরও তারা যে আশ্বস্ত হতে পারেনি, সেটাও ভাল করে বুঝিয়ে দেয় চাকরিহারা। অন্য দিকে আবার শিক্ষকদের চলে যাওয়ায় চাপে রাজ্যের একাধিক স্কুল। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্য়মিকের পড়ুয়াদের পঠনপাঠন, স্কুলের সামেটিভ পরীক্ষা, সামলাবেটা কে? মাথায় হাত পরে শিক্ষা দফতরের।

এই সময়কালে রাজ্যের তরফ থেকে চাকরিহারাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী থেকে শিক্ষামন্ত্রী। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী প্ল্যান এ না হলে প্ল্যান বি-এর কথা বলেছেন। এমনকি, টিভি৯ বাংলাকে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, রাজ্যে চাকরিহারাদের চাকরি ফেরাতে উদ্যত্ত তারা। রিভিউ পিটিশন থেকে যত রকম আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে সবটাই নিতে উদ্যত্ত রাজ্য।

এরপর বৃহস্পতিবারই ছিল রাজ্যের প্রথম পরীক্ষা। সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে উঠেছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বিশেষ আবেদন। রাজ্যে শিক্ষাব্যবস্থার কথা মাথায় রেখে তাদের আর্জি ছিল, যারা চিহ্নিত অযোগ্য নন, তাদের আপাতত চাকরিতে বহাল রাখা হোক। বৃহস্পতিবার সেই আর্জির ভিত্তিতেই সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, অযোগ্য চিহ্নিত নন, এমন চাকরিহারারা কাজে ফিরতে পারবেন। কিন্তু, এখন স্কুলে যেতে পারবেন না গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি ভুক্ত শিক্ষাকর্মীরা। সুপ্রিম নির্দেশে রাজ্য়কে এও বলা হয় যে আগামী ৩১ মে-এর নিয়োগপ্রক্রিয়ার হলফনামা প্রকাশ করতে হবে এবং ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই সেই নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। অর্থাৎ, কাল থেকে ৯ মাসের জন্য কাজে ফিরছেন একাংশের চাকরিহারা শিক্ষকরা।

তবে এবার কি স্বস্তি নামল তাদের মনে? চাকরিহারারা কিন্তু সেরকমটা বলছেন না। সুপ্রিম নির্দেশের পর সাময়িক ভাবে চাকরি ফিরে পাওয়া এক শিক্ষিকা জানাচ্ছেন, ‘যেমন করে এক অসুস্থ রোগীকে ভেন্টিলেশনে ঢুকিয়ে কয়েকদিনের জন্য অসুস্থ রোগীকে বাঁচিয়ে রাখা হয়, তেমনই অবস্থা আমাদের।’ আরেক জন্য ‘যোগ্য’ চাকরিহারা বলছেন, ‘আমাদের বলা হচ্ছে পরীক্ষা দিতে হবে। কেন বারবার আমাদের যোগ্যতার পরীক্ষা দিতে হবে। আজ থেকে দশ বছর আগে যেভাবে পরীক্ষা দিয়েছিলেন, আবার ভেরিফিকেশন, আবার ইন্টারভিউ…এই মানসিক অবস্থায় থেকে আমাদের পক্ষে পরীক্ষা দেওয়া কতটা কষ্টকর।’ অন্যতম আন্দোলনকারী মুখ মেহবুব মণ্ডল আবার বলছেন, ‘যোগ্য-অযোগ্য স্পষ্ট হল। অযোগ্যদের টার্মিনেশন লেটার ধরানো হোক। আমরা নতুন পরীক্ষা পদ্ধতিতে যেতে চাই না।’

কথা শুনে কিন্তু মনে হওয়ার জো নেই, যে শিক্ষকরা স্বস্তি পেয়েছেন। তাহলে স্বস্তি পেলেন কারা? রাজনৈতিক বিশ্লেষক ঝন্টু বরাই বলছেন, ‘সমাজমাধ্যমে দেখছি, তৃণমূলের লোকেরা ছড়িয়ে দিচ্ছে যে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাময়িক স্বস্তি। কিন্তু এদের সাময়িক স্বস্তিটা কিন্তু তৃণমূলের স্থায়ী স্বস্তিতে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক ভাবে তৃণমূল আজ লাভবান। আজ যেখানে যোগ্য-অযোগ্যদের হয়ে পিটিশন দাখিল করে স্থায়ী সমাধান খোঁজার দরকার ছিল। সেখানে এরা কিন্তু রিভিউ পিটিশন করেনি। আবার ২২ লক্ষ পরীক্ষা দিতে বসবে। তাতে যে বিপুল আকারে দুর্নীতিটা হয়েছে, তা থেকে এবার তৃণমূল পুরো হাত ধুয়ে বেরিয়ে যেতে পারবে।’

‘জয়ের ছাপ’ ফুটেছে তৃণমূলের আর সকল নেতাদের চোখে-মুখেও। সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘এই পদক্ষেপের ব্যাপারে তো আমরা আগেই বলেছিলাম। সিপিএম-বিজেপি শুধু খেতে জানে। এরা কাউকে চাকরি দেয়নি। যা হচ্ছে, সব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আদালতে আবেদন জানিয়ে হচ্ছে।’ সুপ্রিম রায়ে আশ্বস্ত হয়েছেন মমতাও। তিনি বলেছেন, ‘আপাতত স্বস্তি পেলাম। আমরা বেতন নিয়ে বিকল্প পথের সন্ধান করছিলাম। এবার সময় পেয়ে গিয়েছি। এবছরের মধ্য়েই সব সমাধান হয়ে যাবে।’

একই ভাবে কিছুটা স্বস্তির ছাপ দেখা গিয়েছে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর চোখে-মুখেও। বিধানসভার বাইরে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘আজ সুপ্রিম কোর্টে রায়ে আপৎকালীন একটি স্বস্তি নিশ্চয়ই পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু এটা সাময়িকই। কিন্তু বঞ্চিত ও যোগ্য শিক্ষকদের পূর্ণ মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে না পারছি, ততক্ষণ আমাদের কোনও স্বস্তি নেই।’

তবে কি প্রথম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই থেমে গেল তৃণমূল? নাকি পথ এখনও অনেকটা বাকি? নেতাজি ইন্ডোর থেকেই চাকরিহারাদের জন্য একাধিক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছিলেন, ‘চাকরি ফেরাতে প্রথমে রিভিউ পিটিশন। যদি সেই পথও কাজ না দেয়, তাহলে বিকল্প পথ তৈরি রেখেছে রাজ্য সরকার।’

রিভিউ পিটিশন এখনও দাখিল করেনি রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবারের আবেদন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের দায়ের করা। তার ভিত্তিতে ইতিমধ্য়ে সাময়িক কাজে ফেরার অনুমতি পেয়েছেন একাংশের শিক্ষকরা। এবার এই পরিপ্রেক্ষিতে রিভিউ পিটিশন দায়ের করা হবে কি না সেই নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। এদিন বিধানসভার বাইরে শিক্ষামন্ত্রীকে এই প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘আইনি পথে এখনও যা যা করা যায় আমরা সবটাই করব। কিন্তু এরপরও যা যা ধাপ আছে, তার পুরোটাই আমরা করব।’ এমনকি, সুপ্রিম নির্দেশের কারণে এখনও যে সকল শিক্ষাকর্মীরা স্কুলে যেতে পারছেন না, তাদের পাশেও তৃণমূল রয়েছে বলেই বার্তা ব্রাত্যর। পাশাপাশি, আগামী ২১ তারিখ এসএসসি তরফে একটি যোগ্য-অযোগ্যর তালিকা প্রকাশের কথা ছিল। সূত্রের খবর, সেই তালিকা প্রকাশ করতেও উদ্যত্ত তারা।