Sarbajanin Durga Puja for freedom fight: কলকাতায় প্রথম সর্বজনীন দুর্গাপুজোর সঙ্গে জড়িয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস
Sarbajanin Durga Puja for freedom fight: স্বাধীনতা আন্দোলন তখন ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। বাংলার যুবক-যুবতীরা শিক্ষামন্ত্রে দীক্ষা নিয়ে ব্রিটিশ শাসকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। সেখানে অসুরদলনী দুর্গা যেন স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্পর্ধার মূর্তরূপ। প্রথম বছরের পুজোতে সেই চেতনাকে বাস্তবের চেহারা দেয় ব্যায়াম সমিতি। পলাশীর যুদ্ধ থেকে সিপাহি বিদ্রোহ পর্যন্ত স্বাধীনতা আন্দোলনের অসংখ্য ঘটনাকে তুলে ধরা হয় পুতুল ও পোস্টারের মাধ্যমে।
কলকাতা: অপেক্ষার প্রহর গোনা শুরু। আর মাস দুয়েকও বাকি নেই বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসবের। দুর্গাপুজোয় মেতে ওঠেন বাঙালিরা। প্যান্ডেলে, প্যান্ডেলে পাঁচদিন জনস্রোত দেখা যায়। কিন্তু, প্রথমে দুর্গাপুজো এমন সর্বজনীন ছিল না। দুর্গাপুজোর আয়োজন করতেন জমিদার কিংবা রাজারা। তারপর এল বারোয়ারি দুর্গাপুজো। শুধু একসঙ্গে মেতে ওঠা নয়, সর্বজনীন দুর্গাপুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসও।
কলকাতায় প্রথম সর্বজনীন দুর্গাপুজো কোথায় হয়? সিমলার ব্যায়াম সমিতি নাকি বাগবাজার সর্বজনীন? দুটো পুজোরই সূত্রপাত কাছাকাছি সময়ে। আর দুটোতেই জড়িয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামীরা। তবে বাংলায় ‘বারোয়ারি’ দুর্গাপুজোর সূচনা হয় তারও অনেক আগে। হুগলির গুপ্তিপাড়ায় বারো জন বন্ধু (ইয়ার) মিলে সেই পুজো শুরু করেছিলেন। কিন্তু, কলকাতায় ‘সর্বজনীন’ দুর্গাপুজোর শুরু ১৯২৬ সালে। স্বাধীনতা সংগ্রামী অতীন্দ্রনাথ বসুর উদ্যোগে সিমলার ব্যায়াম সমিতিতে শুরু হয় ‘সর্বজনীন’ দুর্গাপুজো। সর্বজনীন দুর্গাপুজোর জনপ্রিয়তা শুরু এখান থেকেই। ওই বছরের ২ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত হয় ব্যায়াম সমিতি। আর তারপরই সর্বজনীন দুর্গোৎসব পালনের উদ্যোগ।
কিন্তু, হঠাৎ কেন এমন উদ্যোগ নিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী অতীন্দ্রনাথ বসু? তাঁর বাড়িতেই তো মহা ধুমধামে পালিত হত দুর্গোৎসব। আসলে বাড়ির পুজোয় নিমন্ত্রিত ছাড়া কারাও প্রবেশ করতে পারতেন না। সেই বিধিনিষেধের বেড়া ভাঙতেই সর্বজনীন দুর্গাপুজোর পরিকল্পনা করেন তিনি। যাতে, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মেতে উঠতে পারেন। আবার এর পিছনে তলিয়ে দেখলে আরও একটা কারণ খুঁজে পাওয়া যাবে।
স্বাধীনতা আন্দোলন তখন ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। বাংলার যুবক-যুবতীরা শিক্ষামন্ত্রে দীক্ষা নিয়ে ব্রিটিশ শাসকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। সেখানে অসুরদলনী দুর্গা যেন স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্পর্ধার মূর্তরূপ। প্রথম বছরের পুজোতে সেই চেতনাকে বাস্তবের চেহারা দেয় ব্যায়াম সমিতি। পলাশীর যুদ্ধ থেকে সিপাহি বিদ্রোহ পর্যন্ত স্বাধীনতা আন্দোলনের অসংখ্য ঘটনাকে তুলে ধরা হয় পুতুল ও পোস্টারের মাধ্যমে। সেখানে লেখা নানা উক্তি। আর সেই সর্বজনীন দুর্গাপুজোর মাধ্যমেই মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজমন্ত্র।
বিষয়টি বুঝতে দেরি হয়নি ব্রিটিশ শাসকদের। তারা বুঝতে পারল এই সর্বজনীন দুর্গোৎসবের উদ্দেশ্য। ব্রিটিশরা দেখল, এই পুজোর অন্যতম উপদেষ্টা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। এছাড়া শরৎচন্দ্র বসু, ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো ব্যক্তিত্বরা জড়িত ছিলেন ব্যায়াম সমিতির সঙ্গে। দুর্গাপুজো শুরুর বছর চারেক পর অত্যাচারী পুলিশ কমিশনার চার্লস টেগার্টের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা মারেন নারায়ণচন্দ্র দে ও ভূপাল বসু। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান টেগার্ট। ধরা পড়েন দুই বিপ্লবী। ঘটনাচক্রে নারায়ণচন্দ্র দে ছিলেন সিমলা ব্যায়াম সমিতির গুরুত্বপূর্ণ সংগঠক। ফলে কোপ এসে পড়ে ব্যায়াম সমিতির উপরেও। ১৯৩২ সালের অক্টোবরে ব্যায়াম সমিতিকে বেআইনি ঘোষণা করে আদালত। ব্যায়াম সমিতির যাবতীয় সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয় দরজায়।
তবে তাতে দুর্গাপুজো বন্ধ করা যায়নি। বরং মানুষের উৎসাহ বেড়েছে। ১৯৩৬ সালের এক তথ্য বলছে, প্রত্যেক দিন প্রায় হাজার তিনেক মানুষ সর্বজনীন এই পুজো দেখতে এসেছেন। প্রথমে একচালা প্রতিমার পুজো হত। কয়েক বছর পর পাঁচচালার পুজো শুরু হয়। প্রায় একশো বছর হতে চলল ব্যায়াম সমিতির সর্বজনীন দুর্গাপুজোর। এই পুজো আজও বয়ে নিয়ে চলেছে স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস।
আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)