কলকাতা: গত বছরের মার্চ মাস। রাজ্যবাসীর স্মৃতিতে এখনও টাটকা বগটুইয়ের হাড়হিম করা ঘটনা। হত্যার পর প্রতিশোধের আগুন। পরের পর বাড়ি আগুনের গ্রাসে। গ্রামজুড়ে দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য চলেছিল অবাধে। সেদিন বীরভূমের বগটুইয়ে ঢুকতে পারেনি পুলিশ, দমকল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরে যেন সেই স্মৃতিই ফিরল। খুন হন তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্কর। অভিযোগ, শাসকদলের নেতা খুন হওয়ার পরই পুলিশ ও দমকলকে আটকে রেখে দলুয়াখাঁকি গ্রামজুড়ে তাণ্ডব চলে।
সোমবার সকালে দাউ দাউ করে জ্বলেছে দলুয়াখাঁকি। বাড়িঘর পুড়েছে গ্রামের। বছরভরের গোলা ভরা ধান, তাতেও ধরানো হয়েছে আগুন। গ্রামের মহিলারা কোনওক্রমে পুকুর থেকে জল তুলে আগুন নেভানোর কাজ করেছেন। পুড়ে খাক গ্রাম।
এমন দৃশ্যে কান্নায় ভেঙে পড়েছে গ্রামের পরিবারগুলো। এক মহিলা কাঁদতে কাঁদতেই বলে চলেন, “সব জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। ঘরদোর, জিনিসপত্র কিচ্ছু নেই। দোকানও জ্বলেছে। একটা বাচ্চাকে যে পরাব সেই জামাটুকু নেই। গায়ে যেগুলো আছে, ওইটুকুই সম্বল। আমাদের আর কিচ্ছু নেই।”
কমপক্ষে ২০টি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সোমবার। জোড়া খুনে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে জয়নগর। আরও প্রচুর বাড়িতে চলেছে ভাঙচুর। গ্রাম যেন ধ্বংসস্তূপ। আরেক বাসিন্দার কথায়, “পুরো গ্রামটাকে চোখের সামনে জ্বলতে দেখছি।” যদিও বগটুই-জয়নগর এক পংক্তিতে বসাতে নারাজ প্রশাসন। তারা বলছে, এখানে কোনও প্রাণহানি ঘটেনি। বগটুইয়ের সঙ্গে মিলিয়ে দিলে চলবে না।
তবে পুড়ে প্রাণ না যাক, কপাল যে ছাড়খার, তা তো অস্বীকার করা যাবে না। গ্রামবাসীরা সর্বস্ব হারিয়েছে। প্রতিশোধের আগুন থেকে মহিলা, শিশু ছাড় পায়নি কেউ। খোলা আকাশের নিচে বসে তারা। অনিশ্চয়তার আঁধার দিনেরাতে।