কলকাতা: মেয়ো রোডে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের সমাবেশ থেকে আবারও দিল্লির বিজেপির সরকারের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় এজেন্সির অপব্যবহারের অভিযোগে সরব তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। উঠে এল লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের অফিসে ইডির তল্লাশির কথাও। অভিষেকের বক্তব্য, তিনি বিদেশ থেকে ফেরার পরই আবার কেন্দ্রীয় এজেন্সি তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে। লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের অফিসে তল্লাশি চালানোর সময় সংস্থার একটি কম্পিউটারে যে ১৬টি ফাইল ডাউনলোড হয়েছে, সেই কথাও উঠে আসে মেয়ো রোডের সমাবেশে। সেই কথা বলার সময় অভিষেক অবশ্য সংস্থার নামের কথা উল্লেখ করেননি। পরিবর্তে ‘আমার অফিস’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করতে দেখা গেল অভিষেককে। দু’বার ‘আমার অফিস’ কথাটি বললেন তিনি।
ঠিক কী বললেন অভিষেক?
ইডি-সিবিআই-এর অপব্যবহারের অভিযোগে কেন্দ্রকে আক্রমণ করছিলেন অভিষেক। তিনি বিদেশ থেকে ফেরার পরই যে আবার কেন্দ্রীয় এজেন্সির তৎপরতা শুরু হয়ে গিয়েছে, সেই নিয়েই কথা বলছিলেন। অভিষেক বললেন, “আমাদের ধমকে-চমকে লাভ নেই। আপনারা তো দেখেছেন, আমি যেদিন এসেছি, পরের দিন ইডিকে পাঠিয়ে দিয়েছে রেড করতে। ইডি রেড করতে গিয়েছে, সেখানে আমার অফিসে গিয়ে রেড করেছে। তার সঙ্গে সঙ্গে ১৬টি ফাইল একটা কম্পিউটারে ডাউনলোড করে দিয়ে চলে এসেছে। এবার আমি যদি প্রশ্ন করি, এই ১৬টি ফাইল যদি আবার সিবিআই রেড করে সাত দিন পর আমার অফিস থেকে উদ্ধার করত… এই সংবাদমাধ্যমরাই চালাত, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সংস্থার অফিস থেকে কলেজের লিস্ট উদ্ধার হয়েছে।”
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহেই নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের সঙ্গে যোগ রয়েছে, এমন তিনটি জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছিল ইডি। সেই সময় লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের অফিসেও তল্লাশি চালানো হয়েছিল। পরবর্তী সেই সংক্রান্ত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। তাতে বলা হয়েছিল, “তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস প্রাইভেট লিমিটেডের সিইও এবং ২০১২ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি ওই সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর ছিলেন।” যদিও অন্য একটি সূত্রের দাবি, অভিষেক আগে ওই সংস্থার সিইও পদে ছিলেন।
উল্লেখ্য, লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের অফিসে ইডির তল্লাশি অভিযানের সময় ১৬টি এক্সেল ফাইল সংস্থার একটি কম্পিউটারে ডাউনলোড হয়েছিল বলে অভিযোগ। সেই নিয়ে ইতিমধ্যেই সংস্থার এক কর্মী লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের প্যাডে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন লালবাজারের সাইবার থানায়। আর এসবের মধ্যেই আজ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ইডির হানায় ১৬টি ফাইল ডাউনলোড প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে, ‘আমার অফিস’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করলেন। তাহলে কি এখনও ওই সংস্থার সঙ্গে কোনও যোগ রয়েছে অভিষেকের? এদিন মেয়ো রোডের বক্তব্যের পর এমন প্রশ্ন ইতিমধ্যেই ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে।
প্রসঙ্গত, এদিন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেয়ো রোড থেকে অভিষেকের গ্রেফতারির আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন। তখন তাঁর গলাতেও নাম না করে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার কথা বলতে শোনা গিয়েছে। বলেছেন, “কী করেছে দেখেছেন তো? ওঁর কম্পিউটারে যা ছিল, সেগুলো নিয়ে নিয়েছে। কাউকে জানায়নি। নিজের ইচ্ছেমতো ঢুকে গিয়ে করেছে। কতগুলো ফাইল নিজেরা তৈরি করে নিয়ে গিয়েছে। সেগুলি ঢুকিয়ে দিয়েছে। তোমরা কম্পিউটারে যদি ওস্তাদ হও, আমরাও কম বড় ওস্তাদ নই।”
বিজেপির রাজ্য মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ওই সংস্থার সিইও ও ডিরেক্টর ছিলেন। এসব কথা রাজনৈতিক মঞ্চে না বলে আদালতে বলুন।’