কেরল থেকে কলকাতা আসতে কতক্ষণ? ‘জ়িকা’ নিয়ে কতটা প্রস্তুত বাংলা?

Explained: পাঁচ বছরের পুরনো এসওপি। বাংলার চিকিৎসকদের এটুকুই সম্বল।

কেরল থেকে কলকাতা আসতে কতক্ষণ? 'জ়িকা' নিয়ে কতটা প্রস্তুত বাংলা?
অলংকরণ: অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 01, 2021 | 1:40 PM

করোনা আবহে জ্বর মানেই বিপদ সঙ্কেত। তড়িঘড়ি ডাক্তার দেখানোর প্রবণতা বাড়ছে, করোনা পরীক্ষাও করানো হচ্ছে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো। কিন্তু যাদের জ্বর হওয়া সত্ত্বেও কোভিড রিপোর্ট নেগেটিভ আসছে, তাদের শরীরে অন্য কোনও ভাইরাস নেই তো? ভারতে যে রাজ্য থেকে প্রথম করোনা সংক্রমণ শুরু হয়েছিল, সেই কেরলে ইতিমধ্যেই হানা দিয়েছে আরও এক ভাইরাস। বিদেশে ‘জন্মানো’ জ়িকা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে সে রাজ্যে। করোনার মতো সেই ভাইরাসও অন্যান্য রাজ্যে ছড়িয়ে পড়া অসম্ভব নয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেই ভাইরাস হাজির হলে সামাল দেওয়ার ক্ষমতা আছে কি বাংলায়? ভুললে চলবে না যে মশাবাহিত এই ভাইরাস একসময় মহামারির আকার ধারণ করেছিল আফ্রিকায়।

বাংলায় কি হানা দিতে পারে জ়িকা ?

যে এডিস মশা থেকে ডেঙ্গু হয়, সেই এডিস মশাই জ়িকা ভাইরাসের বাহক। সুতরাং কলকাতায় যখন এডিস মশার অভাব নেই, তখন জ়িকার হানা যে সম্ভব নয়, তা কী ভাবে বলা যায়! আর যে সব রাজ্যে এই ভাইরাসের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে তো অন্যান্য রাজ্যের মতোই বাংলার মানুষেরও যাতায়াত রয়েছে। তাই সেখান থেকে জ়িকা নিয়ে আসাও সম্ভব।

বাংলা কি সত্যিই জ়িকা -শূন্য?

বাংলায় কখনও কেউ জ়িকায় আক্রান্ত হননি, এমনটা বিশ্বাস করতে রাজি নন বিশেষজ্ঞরা। অনেক সময় জ্বর হলে বলা হয় ‘ভাইরাল ফিভার’। করোনার আগে যখন কথায় কথায় পরীক্ষা করানোর প্রবণতা ছিল না, তখন সে সব জ্বরের পিছনে কী ভাইরাস, তার খোঁজ রাখতেন না কেউই। ভাইরোলজিস্ট ড. সিদ্ধার্থ জোয়ারদার বলেন, ‘অনেক সময় অজানা জ্বর বলে চিহ্নিত করা হয়।’ আর সেই জ্বর যে জিকা নয়, তা হলফ করে বলা যাচ্ছে না। তিনি আরও জানান, কখনও কখনও রাজ্যের কোনও কোনও জায়গায় এই ধরনের অজানা জ্বরের ক্লাস্টার তৈরি হয়। অর্থাৎ একই জায়গায় অনেকের নাম না জানা কোনও ভাইরাসের সংক্রমণে জ্বর আসে। কিন্তু সেটা কোন জ্বর, তা পরীক্ষা করে দেখা হয় না। সুতরাং জ়িকা ভাইরাসের উপস্থিতির কথা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না বলেই মত চিকিৎসকের।

জ়িকার উপসর্গ মূলত জ্বর, সঙ্গে র‍্যাশ। আবার জ়িকা করোনার মতো উপসর্গবিহীনও হতে পারে। আর জ়িকায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণহানির সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। তাই জ়িকা নিয়ে তৎপরতাও অপেক্ষাকৃত কম।

কতটা তৈরি বাংলা?

করোনার জন্য প্রস্তুতি ছিল না কোনও রাজ্যেই। কিন্তু ভালো ভাবে বুঝে ওঠার আগেই হাজির হয়েছিল মারণ ভাইরাস। সে ভাবেই জ়িকা ও যদি অতর্কিতে হানা দেয়, তাহলে লড়াই করার প্রস্তুতি কতটা আছে বাংলায়? বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক ড. সুরজিৎ লাহিড়ী জানাচ্ছেন, স্বাস্থ্য দফতরের তরফ থেকে কোনও নতুন নির্দেশিকা সাম্প্রতিককালে আসেনি। বছর পাঁচেক আগে একটা নির্দেশিকা দিয়েছিল স্বাস্থ্য ভবন। মাঝের কয়েক বছরে বাংলায় কোথাও জ়িকা সংক্রমণের খবর শোনা যায়নি, তাই নতুন এসওপি-ও তৈরি হয়নি।

পাঁচ বছর আগের নির্দেশিকায় কী ছিল?

সেই সময় জ়িকাকে ‘পাবলিক হেল্থ এমার্জেন্সি’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল ‘হু’। তখনই তৎপর হয়ে স্বাস্থ্য ভবন এই নির্দেশিকা দেয়। করোনার মতোই জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে দু’সপ্তাহের মধ্যে তিনি কোথায় গিয়েছিলেন, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। জ়িকা সন্দেহ হলেই আরটি-পিসিআর টেস্ট করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছিল। কোনও শিশু জন্মানোর পর যদি তার মাথা ছোট হয়, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলে মাইক্রোসেফালি, তাহলেও সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল চিকিৎসকদের। জানানো হয়েছিল যে আক্রান্তের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে প্রথমে ডেঙ্গ ও চিকুনগুনিয়া পরীক্ষা করাতে হবে। রিপোর্ট নেগেটিভ এলে জ়িকার পরীক্ষা করাতে হবে।

করোনার মতো বিদেশ সফরের ক্ষেত্রেও বিশেষ নির্দেশিকা দিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। যে দেশে জ়িকা সংক্রমণ হয়েছে, সেখানে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। আর ওই সব দেশে গেলেও মশার কামড় থেকে বাঁচতে সতর্কতা নেওয়ার কথা বলেছিল রাজ্য। ডায়াবেটিস বা অন্য কোনও রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ওই সব দেশে না যাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছিল। আর কোনও মহিলা যদি গর্ভবতী অবস্থায় ওই সব দেশ থেকে ঘুরে আসতেন, তাহলে সে কথা জানাতে বলা হয়েছিল চিকিৎসককে।

আবার শিরোনামে জ়িকা! কী ব্যবস্থা নিচ্ছে রাজ্য?

স্বাস্থ্য দফতরের তরফ থেকে এখনও পর্যন্ত নতুন কোনও নির্দেশিকা নেই রাজ্যের চিকিৎসদের কাছে। তাঁরা জানাচ্ছেন ২০১৬-র নিয়ম মেনে সদ্যজাতদের ওপর নজর রাখা হয়। এ বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার এ ব্যাপারে কিছু জানা নেই।’ কোনও নতুন এসওপি তৈরি করা হচ্ছে কি না, সে খবর নেই মন্ত্রীর কাছে।

কী করবেন আপনি?

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মশা থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা জরুরি। বর্ষাকালে যেহেত ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতাও বাড়ে, তাই মশার কামড় থেকে বাঁচতে হবে। তবে শুধু মশার কামড় নয় যৌন সংসর্গেও ছড়ায় জ়িকা। সুতরাং সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে। গর্ভবতী মহিলাদের অধিক সতর্ক হওয়ার কথা বলছেন চিকিৎসকেরা, কারণ সদ্যজাতদের ওপর প্রভাব পড়তে পারে এই সংক্রমণের।

কী অবস্থা কেরলে?

শুক্রবারও নতুন করে দু’জনের জ়িকা আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে কেরলে। এ দিন কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত মোট ৩০ জনের শরীরে জ়িকা ভাইরাসের হদিশ মিলেছে। এর মধ্যে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ১০, বাকিরা সুস্থ হয়ে গিয়েছেন।

Zika Band