কলকাতা: কত দিন বৃষ্টি পড়েনি, কত দিন এই ঊষরতা! বাংলা ব্যান্ড ক্যাকটাসের গানের লাইনগুলো যেন কলকাতার জন্য একেবারে খাপ খেয়ে গিয়েছিল। অবশেষে বৃহস্পতিবার রাতে লক্ষ্মীলাভ! ঠিক ১৪১ দিন পর বৃষ্টি মাপার সুযোগ পেল আলিপুর আবহাওয়া দফতরের রেন গেজ। বৃষ্টি মাপার চার-চারখানা যন্ত্র আছে বটে, কিন্তু এতদিন হাপিত্যেশ করে বসে থাকা ছাড়া উপায় ছিল না। কারণ, শেষ বার আলিপুরে বৃষ্টি হয়েছিল গত বছর ২৫ অক্টোবর। রাজ্যে তখন কালীর আরাধনা চলছে। ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছিল মাত্র ২.৪ মিলিমিটার। নেপথ্যে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং (Sitrang Cyclone)। বাংলাদেশের পথে পাড়ি দিয়ে দুর্যোগ থেকে রেহাই দিয়েছিল ঘূর্ণিঝড়। বৃষ্টি হিসেবে জুটেছিল ছিটেফোঁটাই। মাঝে ১৮ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় ইতিউতি বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হলেও, আলিপুরের শিকে ছেঁড়েনি। মন্দ বরাতে বৃহস্পতিবার ইতি পড়ল। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ০.৪ মিলিমিটার বৃষ্টি (Rainfall) হয়েছে আলিপুরে। পরে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়ে।
বৃষ্টিভেজা রাতে কলকাতার প্রাপ্তি মরসুমের প্রথম কালবৈশাখীও। আলিপুরে রাত ১০টা ৩৭ মিনিটে ৪৮ কিমি/ঘণ্টা গতিবেগে ঝড় ওঠে। ওই গতিতে ঝড়ের স্থায়িত্ব ছিল এক মিনিট। আবহাওয়া বিজ্ঞান বলছে, কালবৈশাখীর শর্তপূরণ হওয়ার জন্য ঝড়ের গতিবেগ ৪৫ কিমি/ঘণ্টা হওয়া জরুরি। ওই গতিতে অন্তত এক মিনিট ঝড় স্থায়ী হওয়াও দরকার। বৃহস্পতিবার জোড়া শর্ত পূরণ হতেই ‘কালবৈশাখী’র ঘোষণা আবহাওয়া দফতরের। গত মরসুমের তুলনায় বেশ কিছু আগেই। গত বছর মরসুমের প্রথম কালবৈশাখী পেতে মাঝ-বৈশাখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল কলকাতাকে। এ বার প্রাপ্তি চৈত্রের পয়লা দিনেই, গত বারের চেয়ে দেড় মাস আগে। দমদমে ঝড়ের গতিবেগ ছিল আরও বেশি, ঘণ্টায় ৬৪ কিলোমিটার। দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই বৃহস্পতিবার ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে। অন্তত ২১ মার্চ পর্যন্ত রাজ্যে ঝড়-বৃষ্টির পরিস্থিতি অনুকূল। একাধিক জেলায় জারি কমলা সতর্কতা।
আবহবিদদের বক্তব্য, এ বার শীতে শক্তিশালী পশ্চিমী ঝঞ্ঝা না আসায় এক ফোঁটা বৃষ্টিও হয়নি। সাধারণত ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে বজ্রগর্ভ মেঘ সঞ্চারিত হয়েও বৃষ্টি নামে, এ বার সেই প্রবণতাতেও ভাটা। অস্বাভাবিক লম্বা শুখা-পর্ব! তবে মার্চ হতাশ করেনি। অবশেষে শক্তিশালী পশ্চিমী ঝঞ্ঝা হাজির। এতটাই শক্তিশালী যে পাহাড়ে যেমন তুষারপাত হচ্ছে, তেমন ঝেঁপে বৃষ্টি মধ্য, এমনকী দক্ষিণ ভারতেও। বুধবার ঝেঁপে বৃষ্টি হয়েছে উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলায়। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কোচবিহার থেকে আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি। একদিন পরেই ভিজল দক্ষিণ। শুধু বৃষ্টি বা কালবৈশাখী নয়, শিলাবৃষ্টির সাক্ষীও হয়েছে বেশ কয়েকটি জেলা। মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ”পশ্চিমী অক্ষরেখা পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে সরছে। ফলে পশ্চিমী শুকনো বাতাস আর বঙ্গোপসাগরের জলীয় বাতাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়ে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হচ্ছে। যে কারণে ঝড়-বৃষ্টির সময় বজ্রপাতও হচ্ছে। আপাতত জলীয় বাষ্প ঢোকার প্রক্রিয়া চলতেই থাকবে। ফলে বৃষ্টি সম্ভাবনা আরও কয়েকদিন থাকবে।”
এ বছর শীত যেতে না যেতেই, ফেব্রুয়ারি মাসে অত্যধিক গরমের মুখোমুখি হয়েছিল দেশ। তাপপ্রবাহের কবলে পড়ে যায় গুজরাত। তবে মার্চে গরমের দাপট তুলনায় কম। পশ্চিমী ঝঞ্ঝার হাতযশে চলতি মাসের প্রথম দু’সপ্তাহে তাপপ্রবাহের হাত থেকে বেঁচেছে দেশ। আগামী দু’সপ্তাহেও তাপপ্রবাহের আশঙ্কা নেই, আশ্বাসবাণী শুনিয়েছে মৌসম ভবন। যদিও এপ্রিল-মে মাসে রেকর্ডভাঙা গরমের দুঃসংবাদও শুনিয়ে রেখেছেন আবহবিদরা। স্বস্তি সাময়িক, এটাই যেন বার্তা প্রকৃতির।