Cyclone in Bengal: ডিসেম্বরের কলকাতায় বৃষ্টির দাপট! এমন অকাল বর্ষণ গত ৪০ বছরে দেখেনি তিলোত্তমা
Weather Update: বার বর্ষায় বারবার কাঁদিয়েছে বৃষ্টি। শীতের মুখেও তার ব্যতিক্রম হল না।
কলকাতা: ভরা শীতের মরসুমে এমন অকাল বর্ষণ গত ৪০ বছর আগে দেখেছিল কলকাতা। মাঝের এতগুলো দিন এমন কাণ্ড কখনও ঘটেনি। অর্থাৎ ৪০ বছর পর ফের ডিসেম্বরে কলকাতায় ভারী বর্ষণ। মাঝের এই দীর্ঘ সময় কোনও ডিসেম্বরেই এমন ছবি দেখা যায়নি। কোনও কোনও বার দু’ এক ফোঁটা বৃষ্টি হলেও তা ধর্তব্যের মধ্যে নয়। কিন্তু এবার যেন সমস্ত রেকর্ডই চুরমার করছে খামখেয়ালি প্রকৃতি।
ডুবেছে কলকাতা। বৃষ্টির তেজ কমলেও জল যন্ত্রণা থেকে রেহাই মেলেনি সোমবারও। ঠনঠনিয়া থেকে নিউ আলিপুর, তারাতলা, বেহালা, খিদিরপুর —যেদিকে দু’ চোখ গিয়েছে শুধুই জল আর জল। গত ১২০ বছরে গোটা ডিসেম্বর জুড়ে কলকাতায় বৃষ্টির পরিমাণ দেখলে চমকে উঠবে যে কেউ। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের তথ্য বলছে ১৯৮১ সালে এরকমই এক ডিসেম্বরে মহানগরে বৃষ্টি হয়েছিল ১৪৫ মিলিমিটার। সেই রেকর্ড এখনও কেউ ছুঁতে পারেনি।
এরপরই দ্বিতীয় স্থানে ২০২১-এর ডিসেম্বর। সবেমাত্র ৬ দিন গিয়েছে এই মাসের। এরই মধ্যে বৃষ্টি হয়েছে ৯০ মিলিমিটার। অর্থাৎ এমন নিম্নচাপ, দুর্যোগের ভ্রুকূটি যদি ফের দেখা যায়, তবে সে রেকর্ডও ভাঙতেই পারে। এরপরই রয়েছে ১৯৭৩ সালের রেকর্ড। সে বছর ৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল ডিসেম্বর মাসে। ১৯৭৯ সালে বৃষ্টি হয় ৫৯ মিলিমিটার। ১৯৭৭ সালে ৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় ডিসেম্বরজুড়ে। ২০১২ সালে ডিসেম্বরে ৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল।
কিন্তু বৃষ্টি হলেই কেন এমন জলযন্ত্রণায় ভোগে কলকাতা? এর পিছনে বেশ কয়েকটি কারণকে তুলে ধরছেন বিশেজ্ঞরা। নগরায়ন বিশেষজ্ঞ দীপঙ্কর সিনহার মতে অবস্থানগত কারণ একটা দিক। বাকি কারণগুলি অবশ্যই নিকাশি ব্যবস্থা ও পরিকল্পনার ত্রুটি।
বৃষ্টির জমা জল গঙ্গায় বেরোনোর জন্য কলকাতায় ৭টি লকগেট রয়েছে। জোয়ারের সময় লকগেটগুলি বন্ধ রাখতে হয়। জোয়ার-ভাটা মিলিয়ে ৪ ঘণ্টা লকগেটগুলি বন্ধ থাকে। সে সময় বৃষ্টি হলে শহরে জল জমে যায়। শহরের জমা জল বের হয় ১০-১২টি খাল দিয়ে। যার ৮০%-এর বেহাল দশা। পলি পড়ে খালগুলি মজে গিয়েছে। নিয়মিত ড্রেজিং না হওয়ায় খালের জলস্তর বেশি থাকে। পাম্পিং স্টেশনের জল বের হতে পারে না।
এদিকে কলকাতার প্রধান ৫টি পাম্পিং স্টেশনের পাম্পগুলি পুরনো। শক্তি কমে যাওয়ায়, অতি বৃষ্টিতে যে পরিমান জল জমে যাচ্ছে, তা পাম্প করে বের করা যাচ্ছে না। তাজ বেঙ্গলের উল্টোদিকে ও কেওড়াতলা শ্মশান লাগোয়া এলাকায় আরও ২টি লকগেট আছে। এতদিন তা জানাই ছিল না। ফলে, দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকার জল এতদিন পাম্প করে বের করা হতো। নতুন ২টি লকগেট কাজ শুরু করলে দক্ষিণের সমস্যা মিটতে পারে। তা ছাড়া শহরের বেশিরভাগ রাস্তার গালিপিটের মুখ প্লাস্টিক পড়ে বন্ধ। ফলে গালিপিট দিয়ে জল বেরোতে পারে না। এই সমস্ত কারণেই বার বার জল জমে শহরে।
এবার বর্ষায় বারবার কাঁদিয়েছে বৃষ্টি। শীতের মুখেও তার ব্যতিক্রম হল না। রেহাইয়ের বার্তা এসেছে, এটাই যা স্বস্তির। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, আপাতত বৃষ্টি বন্ধ। মঙ্গলবার থেকে দিন ফিরবে। তবে ফের যদি বর্ষা নামে শীতের মরসুমে! কে জানে, তা হলে বোধহয় ৪০ বছর আগের রেকর্ডও পার করে যাবে একুশ।