
কলকাতা: বৃহস্পতিবার সন্ধ্য়ায় একটি নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্যের সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতর। প্রতিটি জেলাশাসকের কাছে সেই নির্দেশিকা পাঠিয়ে দিয়েছে নবান্ন। যাতে স্বাক্ষর করেছেন দফতরের সচিব পিবি সালিম। কিন্তু কী রয়েছে সেই নির্দেশিকায়?
নবান্ন তরফে জারি হওয়া ওই নির্দেশিকায় সাফ লেখা, ‘উমিদ পোর্টাল তৈরির ছয় মাসের মধ্যে সমস্ত ওয়াকফ সম্পত্তির তথ্য সেই পোর্টালে আপলোড করতে হত। আপাতত এই ছয় মাসের সময়সীমা ৫ ডিসেম্বর শেষ হচ্ছে। তাই এই সময়ের মধ্যে রাজ্য়ের ৮২ হাজার ওয়াকফ সম্পত্তির তথ্য আপলোড করতে হবে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় পোর্টালে।‘ অর্থাৎ বাংলাতেও হিসাব নেওয়া হবে ওয়াকফ সম্পত্তির। আরও সহজ করে বললে, কেন্দ্রের তৈরি ওয়াকফ সংশোধনী আইন মেনে নিল রাজ্য সরকার।
কিন্তু এই উলটপুরাণের কারণ কী? প্রথম থেকেই ওয়াকফ নিয়ে নিজেদের ভিন্ন অবস্থান বজায় রেখেছিল তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ভরা সভায় বলেছিলেন, ‘যতক্ষণ তিনি রয়েছেন, বাংলায় ওয়াকফ হতে দেবেন না।’ তা হলে এরপরেও কীভাবে বদলে গেল সব সমীকরণ? একাংশের মতে, কেন্দ্রের তৈরি আইন না মেনে বেশিদিন ‘চুপ করে বসে থাকতে পারে না’ কোনও রাজ্য। সুতরাং আইনে সম্মতি দিতেই হবে। বাংলাও দিয়েছে।
অবশ্য নবান্নের এই ‘ওয়াকফ-সম্মতি’ নিয়ে খানিক ভিন্ন যুক্তি তৃণমূলের। এদিন দলের মুখপাত্র তথা কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘আমাদের আপত্তির জায়গাটা নীতিগত। মোদী সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি বিক্রির পর এবার নজর পড়েছে ওয়াকফ এস্টেটগুলিতে। রাজ্যের ওয়াকফ সম্পত্তিগুলি যাতে ওয়াকফ বোর্ডের আওতায় থাকে, সেটাকে সুনিশ্চিত করতেই আমরা নতুন নির্দেশিকা জারি করেছি।’
হাজার আপত্তি পেরিয়ে ওয়াকফে রাজি হয়েছে রাজ্য। স্বাভাবিক নিয়মেই খোঁচা দিয়েছে বিরোধী শিবির। তাও আবার একযোগে। এদিন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘ঠেলায় না পড়লে বিড়াল গাছে ওঠে না। বাবা সাহেব অম্বেদকরের সংবিধান শেষ কথা বলবে। আর এই ওয়াকফ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে যে হিন্দুদের ক্ষতি হয়েছে, তাঁদের ক্ষতিপূরণ দিন। আর মুসলিমদের বলছি, আপনারা যদি সত্যি ওয়াকফ আইনের বিরোধী হন, তা হলে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কে বয়কট করে দেখান।’
একই সুর প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীর। বাংলায় ওয়াকফ আইন বয়কট করার মধ্য়ে দিয়ে তৃণমূল আসলেই জমি মাফিয়াদের সুবিধা করে দিচ্ছিল বলেই অভিযোগ তাঁর। অধীরের কথায়, ‘বাংলায় প্রচুর ওয়াকফ সম্পত্তি। এই সুবাদে রেজিস্ট্রেশন না হওয়া জমিগুলি মাফিয়ারা দখল করে নিতে পারে বলেই আশঙ্কা।’
ওয়াকফ সংখ্য়ালঘুদের। তাই সংখ্যালঘু নেতাদের বক্তব্যও গুরুত্বপূর্ণ। আর সংখ্যালঘুদের নেতার কথা উঠলেই শীর্ষে ভরতপুরের ‘প্রতিবাদী’ তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। তিনি দলে থেকেও দলে নেই। তাই সুর রয়েছে সেই রকম। ওয়াকফ-স্বীকৃতির খবর শুনে হুমায়ুন বললেন, ‘প্রথমে বললেন মানা হবে না, এখন মেনে নিলেন। এসআইআর নিয়েও বলেছিলেন। কিন্তু রাজ্যে এখন এসআইআর চলছে।’
অন্যদিকে ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীর দাবি, ‘এই মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় বলেছিলেন, ওয়াকফ লাগু হতে দেবেন না। ওনার আমলেই তো সবচেয়ে বেশি ওয়াকফ সম্পত্তি চুরি হয়েছে। এসব দ্বিচারিতা নিয়ে সংখ্যালঘু মানুষদের এবার ভাবা উচিত।’