কতটা প্রস্তুতি নিয়ে হলে যাবে মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা? কী বলছেন শিক্ষাবিদরা?

অনলাইন ক্লাস কি আদৌ এই দুই পরীক্ষার মুখোমুখি হওয়ার জন্য তৈরি করে দিতে পেরেছে দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের? এই প্রশ্নগুলির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করল TV9 বাংলা।

কতটা প্রস্তুতি নিয়ে হলে যাবে মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা? কী বলছেন শিক্ষাবিদরা?
ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Updated on: May 27, 2021 | 11:06 PM

কলকাতা: মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক, হচ্ছে দুই পরীক্ষাই। এতটুকু আজ নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। কিন্তু, অতি মহামারিকালে যখন শেষ একটা বছর পড়ুয়ারা স্কুলে ফাটক মাড়ায়নি, তখন সশরীরে স্কুলে গিয়ে নতুন নিয়মে পরীক্ষা দিতে কতটা প্রস্তুত তারা? স্কুলের শিক্ষকদের তরফেও বা কতটুকু সাহায্য করা হয়েছে এই কয়েক মাসে? ভার্চুয়াল পঠন-পাঠনের মাধ্যমে সিলেবাস পুরো করা গিয়েছে? অনলাইন ক্লাস কি আদৌ এই দুই পরীক্ষার মুখোমুখি হওয়ার জন্য তৈরি করে দিতে পেরেছে দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের? এই প্রশ্নগুলির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করল TV9 বাংলা।

শিক্ষক মহলের একটা বড় অংশের মতে, মাধ্যমিকটা বড় সমস্যার কারণ নয়। বরং যে পড়ুয়ারা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে, তাদের কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হতে পারে। এর অন্যতম কারণ, উচ্চ মাধ্যমিকের সিলেবাস মাধ্যমিকের তুলনায় অনেকটাই বৃহৎ। বিজ্ঞান বিভাগের পাশাপাশি কলা বিভাগের কিছু বিষয়েও প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসের প্রয়োজন পড়ে। গত এক বছরে সে সব ক্লাসও পর্যাপ্ত পরিমাণে করা যায়নি বললেই চলে।

সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসুর কথায়, “মাধ্যমিকের পড়ুয়াদের নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। তাদের বইগুলো যেভাবে তৈরি হয় বাড়িতে একটু পড়লেই বুঝে যাওয়া যায়। অগাস্টে যদি পরীক্ষা হয় তবে মাধ্যমিকের পডুয়ারা শেষ ১৯-২০ মাস ধরে সংক্ষিপ্ত একটা সিলেবাস পড়ছে ধরে নেওয়া যায়। সুতরাং প্রস্তুতির জায়গায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের কোনও সমস্যা থাকার কথা নয়। তুলনামূলক উচ্চ মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে বিষয়টা কঠিন হবে, কারণ তাদের কোনও থিওরি ক্লাসই প্রায় হয়নি। মেরেকেটে একমাস ক্লাস করার সুযোগ তারা পেয়েছিল। সিলেবাসের কার্যত পুরোটাই নিজেদের পড়তে হয়েছে। ফলে সেই পড়ুয়াদের প্রস্তুতি নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকছে। উপরন্তু, আজকের ঘোষণার পর যদি প্রশ্ন কাঠামো পরিবর্তন হয়, তখন পড়ুয়াদেরও নতুনভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। যদি ধরে নেওয়া যায় যে ছোট প্রশ্ন করা হবে, তখন অনেক খুঁটিয়ে পড়তে হবে পড়ুয়াদের।”

গত একটা বছর সময় ক্লাসরুমের গণ্ডি এসে বাঁধা পড়েছিল মুঠোফোনে। গত কয়েকবছরে রাজ্য সরকার স্কুলছুট পড়ুয়াদের সংখ্যা কমিয়ে এনেছে বলে দাবি করে থাকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যদি মোবাইল ফোন ক্লাসরুম হয়ে থাকে, তবে ‘স্কুলছুট’ পড়ুয়াদের সংখ্যাটাই ছিল বেশি। একই সঙ্গে স্কুলের ক্লাসরুমে যেভাবে ক্লাস নেওয়া হয়, অনলাইনে তা সম্ভবও হয়নি। শহরাঞ্চলের বড় অংশের ছাত্রছাত্রীরা অবশ্য অনলাইন ক্লাসের সুযোগ পেয়েছে। তবে প্রত্যন্ত এলাকায় সেই ভার্চুয়াল শিক্ষার আলো পৌঁছয়নি। স্কুল পড়ুয়াদের হাতে স্মার্ট ফোন থাকা বা গুগুল মিটের মাধ্যমে ক্লাসে যোগ দেওয়া আজও বাংলার বহু গ্রামে অলীক স্বপ্ন বটে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উত্তর কলকাতার এক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কথায়, “সাধারণত স্কুলে সকাল ১১ টা থেকে ৪ টে পর্যন্ত ক্লাস নেওয়া হয়। কিন্তু অনলাইনে সেটা দু’টো বা খুব বেশি হলে তিনটে করে হয়েছে। যে সংখ্যক পড়ুয়ারা স্কুলে আসে, অনলাইন ক্লাসে যোগ দিয়েছে বড়জোড় তার ৫০-৬০ শতাংশ।” শহরের ছবিটাই যদি এরকম হয়, তবে গত এক বছরে গ্রাম বাংলার স্কুলশিক্ষা ব্যবস্থার হালচিত্র ঠিক কোন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে তা এককথায় কল্পনাতীত। ওই শিক্ষকই জানালেন, “উচ্চ মাধ্যমিকের কথা বলতে হলে, বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে সিলেবাস পুরো করা স্কুলের শিক্ষকদের পক্ষে অসম্ভব। প্রাইভেট টিউশনের সাহায্যেই যদি তরী পার হয়!”

আরও পড়ুন: দেড় ঘণ্টার মাধ্যমিক, কমছে প্রশ্নপত্র, আর কী পদক্ষেপ রাজ্য সরকারের?

মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানিয়েছেন, ৩ ঘণ্টার পরীক্ষা কমিয়ে দেড় ঘণ্টায় নেওয়া হবে। ১০০ নম্বরের জায়গায় পরীক্ষা হবে ৫০ নম্বরে। যদিও শিক্ষাবিদদের একাংশের মতে, সরকার যতটা সহজে বিষয়টা বলেছে বাস্তবে তা আদৌ ততটা মসৃণ হবে না। সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসুর কথায়, “ইতিমধ্যেই একবার সিলেবাস কমানো হয়েছে। এ বার আজকের ঘোষণার পর হয় সিলেবাস আরও সংক্ষিপ্ত করতে হবে নয়তো প্রশ্নপত্রের কাঠামো বদলে ফেলতে হবে।”

বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডলও রাজ্যের নতুন নিয়মে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। তিনি বলেছেন, “আমরা এই নিয়মের সঙ্গে একমত নই। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ১০০ নম্বরের প্রশ্নকে ৫০ নম্বরে কনভার্ট করে যে প্রশ্নপত্র তৈরি হয়ে আছে তার অর্ধেক উত্তর দিলেই হবে। ব্যাপারটা এত সোজা নয়। কারণ প্রতিটি বিষয়ের প্রশ্নপত্রের বিভাজন আলাদা আলাদা। তাই যদি ৫০ নম্বেরর পরীক্ষা নিতে হয় তাহলে নতুন প্রশ্ন করা ছাড়া উপায় নেই।”

যদিও মুখ্যমন্ত্রীর আজকের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসের সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার মাইতি। তাঁর কথায়, “মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানাই। পাশাপাশি সকল ছাত্রছাত্রীর জন্য অবিলম্বে বাস-ট্রেনের বিশেষ ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে। বিদ্যালয়গুলোকে স্যানিটাইজ করা এবং পরীক্ষার্থীদের মাস্ক ও স্যানিটাইজার দেওয়ার বিশেষ ব্যবস্থা রাখতে হবে।”

আরও পড়ুন: পুরুলিয়ায় একধাক্কায় অর্ধেক সংক্রমণ, নদিয়ায় আক্রান্ত কমল অনেকটাই, তবে কি সুস্থতার পথে বাংলা!