কলকাতা: বিরোধীদের ইন্ডিয়া জোট নিয়ে বঙ্গ সিপিএমের মধ্যে অস্বস্তি ক্রমেই বাড়ছে। সিপিএমের অবস্থান নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন। তৃণমূলের সঙ্গে জোটে থাকা নিয়ে তীব্র আপত্তি রয়েছে দলের নীচুতলার একটা বড় অংশের কর্মীদের। এদিকে এরইমধ্যেই সিপিএমের পলিটব্যুরো বৈঠকে ঠিক হয়েছে জোটের সমন্বয় কমিটিতে থাকছেন না কোনও সিপিএম নেতা। কিন্তু, জোট নিয়ে কী ভাবছে সারা ভারত কৃষক সভা? কী বলছেন সংগঠনের সহ-সভাপতি হান্নান মোল্লা? এদিন কলকাতার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে প্রাদেশিক কৃষকসভার ডাকে একটি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সভা শেষে টিভি-৯ বাংলার এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে জোট-সহ একাধিক ইস্যুতে মুখ খুললেন হান্নান মোল্লা।
প্রশ্ন: ইন্ডিয়া জোট নিয়ে কী বলবেন?
হান্নান: যাঁরা ইন্ডিয়া জোট বানাচ্ছেন, তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব পালন করবেন। আমরা তো ইন্ডিয়া জোট বানাইনি। আমরা কৃষক। কৃষকদের আন্দোলন করি। এটা তো রাজনৈতিক দায়িত্ব।
প্রশ্ন: বক্তৃতায় আপনি তৃণমূলের বিরোধিতা করলেন আবার সেই তৃণমূলই আপনাদের সঙ্গে ইন্ডিয়া জোটে আছে?
হান্নান: এর মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। কারণ আজ পর্যন্ত কোনও দিন সমস্ত দল একসঙ্গে মোর্চা করেনি। নির্বাচন হয়। নির্বাচনের পরে পরিস্থিতির পরিবর্তন হলে সমস্ত দল একসঙ্গে সরকার গড়ে। বামপন্থীরা আজ পর্যন্ত কোনও বুর্জোয়া দলের সঙ্গে মোর্চা করেনি।
প্রশ্ন: তাহলে তৃণমূল বুর্জোয়া দল নয়?
হান্নান: বুর্জোয়া তো বটেই। তৃণমূল হল মানুষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী একটা বড় দল।
প্রশ্ন: তাহলে তৃণমূল যে ইন্ডিয়া জোটের মঞ্চে থাকল?
হান্নান: সে মিটিংয়ে আলোচনা হতেই পারে। কী ভাবে কার্যকরী হবে সেটা পরে দেখা যাবে।
প্রশ্ন: তৃণমূল না থাকলে এই জোট আরও প্রাসঙ্গিক হত তেমন কী মনে করেন?
হান্নান: বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যারা থাকবে আপনি তাঁদের না করতে পারেন না।
প্রশ্ন: ইন্ডিয়া জোট জিতল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী। আপনারা কী করবেন?
হান্নান: আমরা কী করব! আমরা বিরোধিতা করব। ভারতবর্ষের সর্বনাশ হবে। পশ্চিমবঙ্গের যেমন সর্বনাশ হচ্ছে। হাজার হাজার মহিলার ইজ্জত নষ্ট হচ্ছে। হাজার হাজার কৃষক আত্মহত্যা করছে, তেমনই হবে।
প্রশ্ন: এমন একটা দল জোটে আছে, বিরোধিতা করছেন না কেন?
হান্নান: জোটে থাকুক। দলে একটা কমন আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়। শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একসঙ্গে আছি।
প্রশ্ন: এটা নিয়ে মানুষের মধ্যে তো দোটানা আছে?
হান্নান: মানুষকে বোকা ভাববেন না। আমরা জানি মানুষের বুদ্ধি আছে
প্রশ্ন: তৃণমূল না থাকলে কী ভাল হত?
হান্নান: আমরা এমন কিছু বলছি না। এ নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।
প্রশ্ন: কংগ্রেসের সঙ্গেও তো একসঙ্গে লড়ছেন।
হান্নান: লড়ছি তার কারণ আজকের মতো পরিস্থিতি গত ৭৫ বছরে হয়নি। ফ্যাসিবাদের উদয় হয়েছে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে মিলে লড়তে হবে।
প্রশ্ন: নির্বাচনী ফল তো খারাপ হচ্ছে।
হান্নান: সব জায়গায় তা নয়। তাহলে সাগরদিঘির ফল হত না
প্রশ্ন: সাগরদিঘির প্রার্থী তো তৃণমূলে চলে গেলেন।
হান্নান: বুর্জোয়া পার্টির এমপি, এমএলএ’রা কুকুর ছাগলের মতো বিক্রি হয়। এটা নতুন কিছু নয়। তবে সবাই বিক্রি হয় না। সাগরদিঘিতে ব্যক্তি বিক্রি হয়েছে।
প্রশ্ন: জোটে তৃণমূলের উপস্থিতিতে অস্বস্তি হচ্ছে না?
হান্নান: অস্বস্তি নয়, আজকের প্রয়োজনের উপরে সবটা নিয়ন্ত্রণ করছে।
প্রশ্ন: আপনাদের হাতে নিয়ন্ত্রণ থাকলে নিশ্চয় তৃণমূলকে রাখতেন না! তাই কী?
হান্নান: আমাদের নিয়ন্ত্রণ কী করে থাকবে! ৫৪২ জনের লোকসভায় এরাজ্য থেকে একজনও সদস্য নেই। আমরা কী করে… গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল থোড়াই হতে পারে। নৈতিকতার ক্ষেত্রে আমাদের নিয়ন্ত্রণ আছে। সেখানে অনেককে আমাদের কাছে মাথা নোয়াতে হয়।