কলকাতা: আরজি কর আছে আরজি করেই! অধ্যক্ষ বদলের সিজন-টু’তেও উপস্থিত নাটকীয় উপাদান। প্রশ্ন হল, সরকারি নির্দেশে এক সরকারি কর্মচারীর অধ্যক্ষ পদ থেকে প্রফেসর পদে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। সেই নির্দেশনামার বিরোধিতায় কেন চিকিৎসক পড়ুয়ারা! উঠছে সেই প্রশ্ন।
রাজনীতির আঙিনায় এই ছবি সহজলভ্য। দলীয় নেতা পদ খোওয়ালে অনুরাগীরা আসরে নেমে পড়েন। নেতার ঘরে পড়ে তালা। মঙ্গলবার এমন ঘটনাই তো ঘটেছে বিষ্ণুপুরে বিজেপি’র কার্যালয়ে। তা বলে সেই সংস্কৃতি স্বাস্থ্যের আঙিনায়! তিন মাসে দু’বার আরজি করের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বদলিনামা জারি হল। একাধিক কেলেঙ্কারির অভিযোগে নাম জড়িয়েছিল অধ্যক্ষের। তার জল ভিজিল্যান্স পর্যন্ত গড়িয়েছিল। টিভি৯ বাংলা লাগাতার সেই সব খবর প্রকাশ্যে এনেছিল। প্রথম দফায় দায়িত্ব হস্তান্তর না করে কর্তৃপক্ষের হাতের নাগালের বাইরে চলে যান অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। সেই সময় নতুন অধ্যক্ষ হওয়া সনৎ ঘোষ আরজি কর থেকে স্বাস্থ্য ভবন যাতায়াতের মধ্যেই সন্দীপ ঘোষের বদলির নির্দেশিকার বদল ঘটে যায়!
এবারও তারই আশায় সোমবার রাত থেকে অধ্যক্ষের কার্যালয় প্ল্যাটিনাম জুবিলি বিল্ডিংয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন চিকিৎসক পড়ুয়ারা। দাবি, মুখ্যমন্ত্রী বিদেশ সফর থেকে না ফেরা পর্যন্ত নতুন অধ্যক্ষ মানস বন্দ্যোপাধ্যায় দায়িত্ব যেন গ্রহণ না করেন!
আন্দোলনকারী এক পড়ুয়া বলছেন, আমাদের অবস্থান আমরা চালিয়ে যাব। তবে কোনও সরকারি কাজে ব্যাঘাত ঘটুক আমরা চাই না। এটা কাম্য নয়। কিন্তু, স্ট্যান্ড উইথ প্রফেসর সন্দীপ ঘোষ। এটাই এখন আমাদের অবস্থান।
নতুন অধ্যক্ষ মানস বন্দ্যোপাধ্যায় দায়িত্ব নেওয়ার পরও জট বহাল আরজি করে। আন্দোলনকারী চিকিৎসক পড়ুয়াদের স্পষ্ট বক্তব্য, প্ল্যাটিনাম জুবিলি বিল্ডিংয়ে যে চেয়ারে বসে অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ কাজ করতেন সেই চেয়ারে নতুন অধ্যক্ষ বসে কাজ করতে পারবেন না। প্ল্যাটিনাম জুবিলিতে ঢুকলে ছাত্রছাত্রীদের উপর দিয়ে নতুন অধ্যক্ষকে ঢুকতে হবে। যে চেয়ারে সন্দীপ ঘোষ বসতেন সেই চেয়ারে অন্য কাউকে অধ্যক্ষ হিসাবে দেখতে চায় না।
কিন্তু, আন্দোলনের জেরে কী হল? নতুন অধ্যক্ষ অ্যাডিশনাল মেডিক্যাল সুপারের ঘর থেকে সুপারের ঘরের সিঁড়ি ভেঙে চললেও শিক্ষক-চিকিৎসক হিসাবে একধাপও কি এগোলেন? বিক্ষোভের আশঙ্কায় প্ল্যাটিনাম জুবিলির অডিটোরিয়ামের বদলে বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠক করলেন চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন। দিনভর অধরা রইলেন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। কেন অধ্যক্ষ সন্দীফ ঘোষের সমর্থনে বিক্ষোভ? কারণ, আন্দোলনকারীদের কাছে অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ হলেন ‘ছাত্রদরদী’, ‘সরকারপন্থী’, ‘উন্নতিকারী’ অধ্যক্ষ। একজন মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক-অধ্যক্ষের জন্য এমন বিশেষণ! সরকারি নির্দেশনামার বদল চেয়ে এমন আন্দোলন? রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভাবমূর্তি কি আদৌ উজ্জ্বল হচ্ছে? তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন বলছেন, “ছাত্র আমাদের ভবিষ্যৎ। ওদের মান-অভিমান থাকতেই পারে। তবে নতুন অধ্যক্ষের কাছে চার্জ ট্রান্সফারের বিষয়টা চলছে।” এদিকে, স্বাস্থ্য ভবনের তরফেও সন্দীপ ঘোষকে মঙ্গলবারই আর জি কর থেকে রিলিজ করে দেওয়া হয়েছে। তাঁকে দ্রুত মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে যোগ দিতে বলা হয়েছে।