কলকাতা: বিধানসভা নির্বাচনের মতোই বাকি দলগুলির থেকে বেশ কিছুটা পরেই ভবানীপুরের (Bhawanipur Bypolls) প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিজেপি। খোদ মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ‘চ্যালেঞ্জার’ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালের (Priyanka Tibrewa) নাম। একদিকে তৃণমূল সুপ্রিমো যেমন নিজের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি বাঁচাতে লড়ছে, অপরদিকে প্রিয়াঙ্কার জন্য এ লড়াই ‘প্রেস্টিজ ফাইট’। তাঁর নতুন করে কিছু হারানোর নেই। কারণ গত বিধানসভা নির্বাচনে এন্টালির প্রার্থী হয়েও গো-হারা হেরেছিলেন তিনি। এবার সেই প্রিয়াঙ্কাকে ‘বাঘের’ মুখে ঠেলে দিয়েছে বিজেপি।
মমতাকে তৃণমূলের ‘বাঘ’ বলা হোক বা মুখ্যমন্ত্রী, তাঁকে হারানোর স্বাদ মাসকয়েক আগেই অবশ্য নন্দীগ্রামে একবার পেয়েছে বিজেপি। কিন্তু সেই টক্কর ছিল সেয়ানে-সেয়ানে। কিন্তু ভবানীপুর মমতার চেনা জমি। অপরদিকে প্রিয়াঙ্কা অনেকটাই আনকোরা। তাই তাত্ত্বিক বা রাজনৈতিক, সব ভাবেই এগিয়ে রয়েছেন মমতা। কিন্তু প্রিয়াঙ্কাকেও হালকাভাবে নিচ্ছে না রাজনৈতিক মহল।
কারণ, রাজ্য রাজনীতিতে গত কয়েক মাস ধরে, বিশেষ করে ভোটের পর থেকে চর্চায় রয়েছেন পেশায় আইনজীবী এই বিজেপি নেত্রী। ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে হাইকোর্টে দায়ের হওয়া মামলায় তিনিই বিজেপির একক এবং অন্যতম কাণ্ডারী ছিলেন বলা চলে। সেই মামলায় আপাত জয় ছিনিয়ে আনতে পেরেছে বিজেপি। ফলে রাজ্য রাজনীতিতে একধাক্কায় নিজের ওজন অনেকটাই বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন প্রিয়াঙ্কা।
কিন্তু কী ভাবে রাজনীতিতে এসে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বিপরীতে লড়াই করার মতো প্রার্থী হয়ে উঠলেন ৪১ বছরের প্রিয়াঙ্কা? রইল তাঁর সফরনামা…
১৯৮১ সালের ৭ জুলাই কলকাতাতেই জন্ম প্রিয়াঙ্কার। এরপর শহরের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা করে দিল্লি চলে যান। স্নাতক পাশ করেন সেখানেই। দিল্লি থেকে ফিরে কলকাতার হাজরা ল কলেজ থেকে আইনের ডিগ্রি নেন। মানব সম্পদের (হিউম্যান রিসোর্স) বিষয়ে থাইল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ-ও করেছেন তিনি।
প্রিয়াঙ্কার বয়স তখন মোটে ৩৪। পেশাগত কেরিয়ারও মধ্যগগনে। সামনে বিপুল সম্ভাবনা। কিন্তু দক্ষিণপন্থী রাজনীতিতে বরাবরের ঝোঁক ছিল কলকাতার এই তরুণীর। তাই ফৌজদারি (ক্রিমিনাল) মামলা সামলানোয় সিদ্ধহস্ত আইনজীবী কাজ শুরু করলেন তৎকালীন নির্বাচিত আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়র সঙ্গে। বাবুলের আইনি পরামর্শদাতা হিসেবে তাঁর রাজনীতির কেরিয়ার শুরু। ক্ষুরধার বুদ্ধিতে আইনি সমস্যার সমাধান করে খুব শীঘ্রই বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের ‘গুডবুকে’ উঠে আসেন তিনি। ২০২০ সালে রাজ্য যুব মোর্চার সহ সভাপতি করা হয় তাঁকে।
সালটা ছিল ২০১৫। কলকাতা পুর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য তাঁকে ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের টিকিট দেয় বিজেপি। কিন্তু সফল হতে পারেননি প্রিয়াঙ্কা। তবে বিজেপির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিন্ন হয়নি। যত সময় যেতে থাকে, বাবুল সুপ্রিয় থেকে ক্রমশ বঙ্গ বিজেপির অন্যতম আইনি পরামর্শদাতা হয়ে ওঠেন এই নারী।
২০২১ বিধানসভায় এন্টালি থেকে ফের সুযোগ আসে ভোটে লড়ার। কিন্তু এবারও ৫৮ হাজারের কিছু বেশি ভোটের ব্যবধানে হেরে যান প্রিয়াঙ্কা। এই নিয়ে তৃতীয়বার নির্বাচনী যুদ্ধে নামছেন তিনি। তবে গত কয়েকমাস আগে থেকে বর্তমান প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে, সেটা বলাই যায়।
নির্বাচন মিটতে না মিটতেই পশ্চিমবঙ্গ দেশের শিরোনামে উঠে এসেছিল ভোটের পর হিংসার কারণে। কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে বিজেপি নেত্রী তথা এই আইনজীবী দাবি করেন, তাদের ৫০ জনের বেশি কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। প্রচুর মহিলা কর্মী ধর্ষিতা হয়েছেন। এবং কয়েক লক্ষ্য বিজেপি কর্মী ঘরছাড়া।
এই মামলাতেই প্রথমে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে ডেকে রিপোর্ট জমা দিতে বলে আদালত। যে রিপোর্ট ফের একবার রাজ্য রাজনীতিতে ঝড় তোলে। এরপর আদালত রায় ঘোষণা করে খুন ও ধর্ষণ মামলার তদন্ত সিবিআই-কে সঁপে দেয়। বাকি হিংসার তদন্তভার রাজ্য পুলিশের সিটকে দেওয়া হয়। আদালতে রাজ্য সরকারকে প্রতি পদক্ষেপে ধাক্কা দিয়ে যাওয়ার নেপথ্যে যিনি রয়েছেন, তিনি হলেন প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল।